রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০০৮

কলা নিয়ে কিছু কথা


কলা নিয়ে কিছু কথা

“কলা রুয়ে না কেটে পাত তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।।”






কলা আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় ফল। এমন কেউ নেই যে কলা পছন্দ করে না। কলার রয়েছে নানা ওষুধি গুণ। পাশাপাশি আমাদের পুষ্টি চাহিদাও মেটায় এই কলা। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাতে কলা কিছু না কিছু জন্মে।

ছোটবেলায় আমরা যখন গোলাঘর বা ঘরের মাচায় উঠতাম তখন পাকা মালভোগ কলার গন্ধ আমাদের অভিভূত করতো। বড়দের অগোচরে মাচায় চড়ে মজা করে কলা খেতাম। মালভোগ কলার দুধভাতের স্বাদ ছিল অপূর্ব। আমরা এখনও কলা খাই কিন্তু আগের মত আর সেই স্বাদ পাই না। আগের সেই মালভোগ কলার সাথে দুধভাতের যে কি স্বাদ তা আর বর্তমান প্রজন্মকে বোঝানো যাবে না। আগে কলা পাকতো গাছে কিংবা পরিপক্ক হলে ঘরের মাচায়। আর এখন কলা পাকে কয়েক ঘন্টায়। কৃত্রিম উপায়ে। বিদ্যুতের সক দিয়ে। নানা রকম রাসায়নিক বিষক্রিয়ার মাধ্যমে। কলার খাদ্যমানও থাকে না। বিষ দিয়ে পাকানো কলা হয়ে যায় বিষাক্ত। তাই খেয়ে মানুষ নানা রকমের অসুখ-বিসুখের শিকার হচ্ছে। এরমধ্যে কিডনীতে সমস্যা, পাকস্থলিতে ক্যান্সারসহ নানা ধরনের বড় বড় অসুখ। অসৎ ব্যবসায়ীরা তাদের মুনাফা লাভের জন্য তাদের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখছে? এটা ভাবছে না যে এখানে দেশ ও জাতির স্বার্থ জড়িত। দিন দিন নিরাপদ খাদ্য হয়ে যাচ্ছে অনিরাপদ। কলা খেয়ে উপকারের বদলে অপকারই হচ্ছে বেশি।

বর্তমানে কলায় প্রকৃত স্বাদ নেই। যারা কলার বাগান করছে তাদের দেখা যায় হরহামেসাই ব্যবহার করছে নানা রকমের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ। কলাগুলো পরিপক্ক হওয়ার আগেই গাছ থেকে কেটে কলাগুলোকে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে পাইকারীদের কাছে। তারা নিয়ে বিষমুক্ত কলাকে বিষযুক্ত করে তুলছে। আর এগুলোই হচ্ছে মানুষের খাদ্য।

জমিতে সার প্রয়োগের ফলে দিন দিন আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা নিম্নগামী হচ্ছে। ফসলের সাথে যুক্ত হচ্ছে বিষক্রিয়া। আমরা রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে গোবর, খৈল, জৈব ও সবুজ সার প্রয়োগ করতে পারি। পাশাপাশি পোকা-মাকড়, রোগ-বালাই দমন করতে পারি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে পোকা-মাকড় ও বালাই দমনে নিম বা ওষুধি গাছ কিংবা গাছের রস দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা-মাকড় দমন করতে পারি। এসব উপায় খুঁজে বের করে, তা ব্যবহার করে, উৎপাদিত কলার মানকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারি।

মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। শুধু যে কলাতে বিষ মেশানো হচ্ছে তা নয়। বাজারে গাভীর দুধে মেশানো হচ্ছে পাউডার, দুধে পানি মেশালেও তা মেশাচ্ছে নদী-নালার দূষিত পানি। এক ড্রাম সয়াবিন তেলের মধ্যে ছোট্ট একশিশি ক্যামিকেল জাতীয় ওষুধ ঢেলে দিলেই তা হয়ে যাচ্ছে সরিষার তেল। মাছে মিশানো হচ্ছে ফরমালিন, শাক-সবজিতে নানা রকমের কীটনাশক, চাল-ডালে নানা রকমের রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে করা হচ্ছে সংরক্ষণ। দুধে পাওয়া যাচ্ছে মেলামাইন, বিভিন্ন ফলে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য। এমনি করে খাদ্য হয়ে যাচ্ছে অখাদ্য।

স্বাস্থ্যের জন্য প্রচণ্ড হুমকি হলেও কঠিন এবং কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না সরকার। কিছুদিন ভেজাল বিরোধী অভিযান চললেও আজ আর তা চলছে না। আর এই সুযোগটা গ্রহণ করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ভেজাল খাদ্য খেয়ে দেশের মানুষ নানা রকম কঠিন অসুখের শিকার হচ্ছে। চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে দেশের গরিব মানুষ। পরোক্ষভাবে এইসবের জন্য কারা দায়ী? দেশকে বাঁচাতে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে নিরাপদ খাদ্যের দরকার। আর এক্ষেত্রে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। আশা করি কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

- এম· এ· রউফ বাদশা, কৃষক

কোন মন্তব্য নেই: