বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০০৮

পরিবেশবান্ধব সবুজ সার


পরিবেশবান্ধব সবুজ সার


কোন কোন বিশেষ ফসল চাষ করে তা নির্দিষ্ট বয়সে ভূমি উন্নয়নকল্পে চাষ দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে তাকে সবুজ সার বলা হয়। যে কোন সবুজ গাছকে কোমল অবস্থায় মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া, মাটির গুণাবলী উন্নয়নের জন্য একটি উত্তম কাজ বলে প্রাচীনকাল থেকেই স্বীকৃত হয়ে আসছে। মিশিয়ে দেয়ার পর মাটিতে অবস্থানরত অনুজীবের কার্যাবলীতে বিয়োজন ঘটে এবং এগুলো জৈব সারে পরিণত হয়। গাছের সবুজ পাতা, কচি শাখা-প্রশাখা সংগ্রহ ও জমিতে প্রয়োগ করে যে সার উৎপাদন করা হয় তাকে সবুজ পাতা সার বলে। জমির আশপাশ, পতিত জমি ও জঙ্গল থেকে পাতা ও শাখা সংগ্রহ করা যায়। জমিতে চাষ দিয়ে মিশিয়ে দেয়ার পর তার পচন প্রকৃতি ও পচন হারের উপর সবুজ সারের কার্যকরিতা নির্ভর করে। জমিতে মিশিয়ে দেয়ার পর সবুজ দ্রব্য পর্যায়ে কয়েকটি জৈব রাসায়নিক সার বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। এসব বিক্রিয়ার পর সার থেকে খাদ্যোপাদান ধীরে ধীরে উদি্‌ভদের জন্য প্রাপ্য হয়ে ওঠে। এজন্য অন্যান্য আয়তনী জৈব সারের চেয়ে সবুজ সারের কার্যকারিতা কিছুটা ধীরে বা বিলম্বিত হয়। সবুজ সারের পচনহার এবং মাধ্যমিক যৌগ উৎপাদন নিম্নলিখিত উপাদানের উপর নির্ভর করেঃ

উপস্থিত অণুজীবের প্রকারঃ মাটিতে উপস্থিত অণুজীবের প্রকার ও কার্যপদ্ধতি যেমন ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংখ্যা, স্বভোজী ও অন্যভোজী অণুজীবের সংখ্যা, সবাত অণুজীবের সংখ্যা ইত্যাদি সবুজ পচন হার নির্ধারিত করে।

উত্তাপঃ সবুজ সারের পচনের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সে· তাপ সবচেয়ে ভাল। কম বা বেশি তাপে পচন হার কমে।

বায়ু চলাচলঃ মাটিতে বায়ু চলাচল পচন হার বাড়ায়।

সবুজ সারের জন্য মনোনীত গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে সবুজ সারের মোট পরিমাণ এবং জমিতে পচনশীলতা বা পচন হারও ভিন্ন হয়। সবুজ গাছের বয়সভেদে এর রাসায়নিক গঠন ও উপাদানের পরিমাণে পার্থক্য হতে থাকে। এজন্য একটি নির্দিষ্ট বয়সের গাছ দিয়ে সার উৎপাদন করলে অধিক সুফল পাওয়া যায়। গাছের চারা বয়সে সহজে বিয়োজনযোগ্য নাইট্রোজেন পরিমাণে বেশি থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেলুলোজ ও লিগিনিনেন পরিমাণ বেড়ে গেলে গাছ পচতে অসুবিধা হয় বা বিলম্ব হয়। মাটির কার্বন ও নাইট্রোজেন অনুপাত বেড়ে যায়। গাছের বয়স বাড়ার সাথে পেন্টোসান দ্রব্যের পরিমাণও বেড়ে যায়। অবশ্য গাছের বয়স খুব কম হলে সেখানে পানি ও পানিতে দ্রবণীয় দ্রব্য বেশি থাকে বলে সবুজ সার হিসেবে এর স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা কম হয়।

জমিতে সবুজ সার ব্যবহার করলে খুব উপকার পাওয়া যায়। যেমনঃ ১· মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ে ২· মাটির উৎপাদন বাড়ে ৩· মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়ে ৪· মাটির ভৌত অবস্থার উন্নয়ন হয়, বিশেষ করে, মাটির সংযুক্তি উন্নয়ন সাধন ৬· মাটির আচ্ছাদিত রেখে ক্ষয় কমে ৭· মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়ে ৯· মাটিতে জীব ও অনুজীবের কার্যাবলী বাড়ে ১০· ফসল উৎপাদনের রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বাড়ে ১১· মাটি নরম রাখে।

যেকোন ফসল বা লতাপাতা সবুজ অবস্থায় মাটিতে মিশিয়ে দিলে তা থেকে সবুজ সারের কিছু না কিছু উপকারিতা পাওয়া যায়। কিন্তু কতকগুলো বিশেষ গুণাবলীসম্পন্ন ফসল বা গাছ দিয়ে সবুজ সার করলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের জলবায়ু ও মাটির উর্বরতার বিবেচনায় নিম্নলিখিত উদি্‌ভদসমূহকে সবুজ ফসল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যথাঃ ধৈঞ্চা, গো-মটর, শন, বরবটি, সিম, আলফালফা, ক্লোভার, লুসার্ন প্রভৃতি। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল কাউপি বা গো-মোটর দিয়ে সবুজ সার করার সম্ভবনা খুবই উজ্জ্বল। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে বিপুল পরিমাণ জমিতে গো-মটরের চাষ হয়।

যে সম- জমি বেলেপ্রধান এবং জমিতে পানি জমার আশংকা নেই সেখানে সবুজ সার ফসল হিসেবে শন, পাট উপযোগী। এর শারীরিক বৃদ্ধ দ্রুত। মাটিতে এটি দ্রুত বিয়োজিত হয়। ধৈঞ্চা কিছুটা কষ্ট সহিষ্ণু উদি্‌ভদ, এঁটেলজাতীয় মাটিতে ভাল জন্মে। ধৈঞ্চা কিছুটা খরা ও অপরদিকে জলবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। বাংলাদেশে জলাবদ্ধ জমিতে সবুজ ফসল হিসেবে তুলনামূলকভাবে বেশি উপযোগী।

ধৈঞ্চা সবুজ সারকরণ ও বীজ উৎপাদনঃ বাংলাদেশে সবুজ সার উৎপাদনের জন্য ধৈঞ্চা উপযুক্ত। তবে বেলেজাতীয় মাটির জন্য শন ভাল। বছরের যে কোন সময়ে মাটির জোঁ অবস্থায় ঘন করে বীজ বুনে দিলে ৪০ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে সবুজ সার উৎপাদন করা যায়। আমাদের দেশে বর্তমানে দুই ধরনের ধৈঞ্চা গাছ দেখা যায়। যথা- ১· সাধারণ ধৈঞ্চা, ২· আফ্রিকান ধৈঞ্চা।

মাটির প্রতিকূল অবস্থার কারণে মূল জমিতে বীজ বুনা সম্ভব না হলে অন্যত্র চারা তুলেও তা পরবর্তী সময়ে রোপণ করা যায়। বীজতলায় চারা উৎপাদনের জন্য প্রতিশতক জমিতে ৩০০ গ্রাম বীজ বুনতে হবে। বীজ থেকে চারা হলে তা সরাসরি লাগানো যায় আবার চারা একটু বড় হলে কাটিং করেও লাগানো যায়।

সবুজ সার উৎপাদনী ফসলের মধ্যে মাসকলাই ও মুগ কলাইয়ে নাইট্রোজেনের পরিমাণ ধৈঞ্চর চেয়ে কিছুটা বেশি, তবে ধৈঞ্চায় মোট সবুজ দ্রব্যের পরিমাণ বেশি। এসব গাছে ফসফেটের পরিমাণ প্রায় নাইট্রোজেনের সমান। পটাসের পরিমাণ ধৈঞ্চা গাছে একটু বেশি। আমাদের দেশে সবুজ সার হিসেবে ধৈঞ্চা গো-মটর ও শন-পাটের ব্যবহার অধিক লাভজনক। মাস কলাই ও মুগ কলাই সাধারণত সবুজ সার ফসল হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। তবে ফসল হিসেবে চাষ করলে আংশিক উপকার হয়।

সবুজ ফসল হিসেবে ধৈঞ্চা গাছের একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে এটি জলাবদ্ধ এবং অনুর্বর জামিতেও জন্মে। ধৈঞ্চার বীজ উৎপাদন হারও বেশি। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গো-মটর, মুগ, মাসকলাই, সয়াবিন বরবটি ইত্যাদি। সবুজ সার ফলস হিসেবে ব্যবহার না করলেও তা পরিপক্ক হওয়ার পর মাটির উপরের অংশ কাচি দিয়ে কেটে নিলে নডিউল ও শিকড় মাটিতে থেকে গিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
- প্রফেসর ড· মোঃ সদরুল আমিন

মধুমতির চরাঞ্চলে চীনাবাদাম চাষ

মধুমতির চরাঞ্চলে চীনাবাদাম চাষ



আমাদের দেশের অধিকাংশ চরাঞ্চলেই কৃষকরা কোন ফসল চাষ করবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না। আবার ঠিকমত ফসল নির্বাচন না করতে পারায় আর্থিক ক্ষতিরও শিকার হন তারা। বন্যার পানি নেমে যাবার পর এসব চরাঞ্চলের জমি অত্য- উর্বর হয়ে যাওয়ায় এখানে উপযুক্ত ফসল চাষ করে কৃষকদের লাভবান হবার সম্ভাবনা অনেক। জলবায়ুজনিত পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য এসব অঞ্চলে ফসল বৈচিত্র আনা দরকার। পাশাপাশি একটি ফসলের সাথে অন্যান্য সাথী ফসলের আবাদও অনেক বেশি লাভজনক হতে পারে। বন্যার পানি নেমে যাবার পর পরই সেখানে মাটিতে যথেষ্ট রস থাকে এমন বেলে দো-আঁশ মাটিকে চীনাবাদাম চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।

চীনাবাদাম তেল জাতীয় ফসল হলেও বাংলাদেশে আজও তার ব্যবহার সেভাবে চালু হয়নি। তারপরও চীনাবাদামের চাহিদা দিন দিন আমাদের দেশে বেড়েই চলছে। শহরের অলিতে গলিতে এমন কি বিভিন্ন গ্রামেও ছোট ছোট ছেলেরা ঝাঁকাতে করে গলায় ঝুলিয়ে চীনাবাদাম ভাজা বিক্রি করে। মুখোরোচক খাবার হিসেবে চীনাবাদামের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তাছাড়া চীনাবাদাম থেকে নানা ধরনের উৎপাদিত পণ্যের বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় দিন দিন এর চাষ বেড়েই চলেছে।

চীনাবাদাম উৎপাদনের জন্য সুনামগঞ্জ ও নোয়াখালী বিখ্যাত হলেও নড়াইল জেলা একটা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এ জেলার লোহাগড়া থানার কালনা, চর কালনা, ইতনা, দৌলতপুর, করফা, তেঁতুলিয়ার বি-ীর্ণ মধুমতির চরাঞ্চল বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কিন্তু এই চরাঞ্চলে চীনাবাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা থাকা সত্ত্বেও প্রযুক্তিগত সহায়তা, কৃষিঋণ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে সেখানে এই ফসলের জমির পরিমাণ আশানুরূপ বাড়ছে না। বীজ সংকট, বাজারজাতকরণ করা এবং মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্মে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে চীনাবাদাম চাষিরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে।

মধুমতির চরাঞ্চলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাদাম চাষ শুরু হয়েছে এবং ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্য- বাদাম চাষের কাজ চলতে থাকবে। কৃষকরা এখন বীজের সমস্যায় পড়ছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বীজ দিয়ে চাহিদা মেটে না। কৃষি উন্নয়ন সংস্থা বাদামের বীজ সরবরাহ করে না। খোলাবাজারে যে বীজ পাওয়া যায় তার মান খুব খারাপ। আগে ভারত থেকে উন্নতমানের বীজ আনা হত, এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্‌ভাবিত ডিজি-১ ও ডিজি-২ উন্নতজাতের বাদাম বীজের সরবরাহ বাজারে নেই। ঝিঙ্গা জাতের (ত্রিদানা) বাদাম বীজ বাজারে প্রায় দুষ্প্রাপ্য। তাই নিম্নমানের বীজ দিয়ে চাষিদের চীনাবাদাম চাষ করতে হয়।

এর ওপর চীনাবাদাম ক্ষেতে দেখা দেয় টিক্কা রোগ (পাতার দাগি রোগ)। ফলে ফলনের ক্ষেত্রে বিপর্যয় ঘটে। রোগ প্রতিরোধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ফলনের ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ে। এলাকায় কর্মরত উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তার এলাকা বড় হওয়ায় সব জায়গা সামাল দিয়ে পারেন না। ফলে অধিকাংশ সময় চরাঞ্চলে কৃষকদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে চাষাবাদ করতে হয়। আর এ কারণে কোন মৌসুমে এখানে চীনাবাদামের ফলন ভাল হয়, আবার কোন মৌসুমে ফলন বিপর্যয় হয়। এসব কারণে চীনাবাদাম লাগানোর মৌসুমে এখানে বাদামের ফলন বিপর্যয় হয়। গত কয়েক বছরের কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যে তার প্রমাণ মেলে। অভিজ্ঞ একজন কৃষক বলেন, উন্নতজাতের বীজ ব্যবহার এবং আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হলে চরাঞ্চলে বাদামের উৎপাদন অনেক বাড়বে। তখন কৃষকের কাছে চীনাবাদাম অধিক লাভজনক ফসল হিসেবে বিবেচিত হবে।

নদী পাশে থাকার কারণে এইসব চরাঞ্চলে পানি সেচের কোন অভাব হয় না। উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা এই এলাকাগুলোর কৃষকদের পরামর্শ দিলে তারা বহু উপকৃত হবে।

চীনাবাদাম পরিপক্ক হতে ১৪০ থেকে ১৫০ দিন সময় লাগে। চীনাবাদামের শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগই পরিপক্ক হলেই ফসল তুলতে হয়। ফসল তোলার পর চীনাবাদামের বীজ ভালভাবে রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা ৮ থেকে ১০% এর নীচে নামিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়। এই সংরক্ষণ পদ্ধতি আমাদের অধিকাংশ বাদাম চাষিরাই জানে না। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তেমন সাহায্যও পায় না এ ব্যাপারে অবগত হতে। এমন অনেক স্থান আছে সেখানে কৃষি কর্মকর্তাদের কৃষক চেনেই না। সবকিছু বিবেচনায় আনতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
- মোঃ সাহিদুর রহমান, কৃষক, নড়াইল

নির্বাচন ২০০৮: কি আছে কৃষি ও কৃষকের ভাগ্যে


নির্বাচন ২০০৮: কি আছে কৃষি ও কৃষকের ভাগ্যে



১৫ কোটি মানুষের বাংলাদেশে কৃষিই এখনও পর্য- উন্নয়ন ও অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়কালে আশির দশকের মাঝামাঝি পর্য- কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় একধরণের গতি লক্ষ্যণীয় ছিল। অবশ্য সেই গতির পেছনে ষাটের দশকের শেষভাগের সবুজ বিপ্ল্লবের যেমন একটি ধারাবাহিকতা ছিল তেমনি সদ্য স্বাধীন একটি দেশের স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য রাষ্ট্রের ভূমিকাও কম ছিল না। কিন্তু আে- আে- সেই গতিতে বড় ধরণের এক ভাটা চলে আসে। বৈশ্বিক পট পরিবর্তনের পথ ধরে মুক্তবাজার অর্থনীতির বিকাশে বিরামহীন শিল্পায়ন আর নগরায়নের ফলে গ্রামীণ কৃষিজীবি মানুষ তথা কৃষির ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় রাষ্ট্র। ফলে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য হারিয়ে কৃষি উন্নয়নে স্থবিরতা চলে আসে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে খাদ্যশস্যের সামগ্রিক উৎপাদন হয়তো এসময় বৃদ্ধি পায় কিন্তু জন্ম নেয় রাসায়নিক উপকরণনির্ভর কৃষি ব্যবস্থা। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও কৃষি উপকরণের জ্যামিতিক মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কৃষক ধীরে ধীরে দরিদ্র থেকে অতিদরিদ্রে পরিণত হয়। পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থায় দ্রব্যমূল্য বাড়লেও তাতে শুধু ফরিয়াদের পকেট ভারী হতে থাকে, উৎপাদিত পণ্যের মূল্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কৃষকের ভাগ্যে জোটে বঞ্চনা, বাড়তে থাকে কৃষি উপকরণের মূল্য; একই সাথে তা হয়ে ওঠে দুষ্প্রাপ্য। এরকম নানাবিধ সংকটে কৃষিতে সৃষ্টি হয় একধরণের সংকট, খাদ্য নিরাপত্তার ইস্যুটিতে আমাদের অবস্থান হয়ে ওঠে ভঙ্গুর, যা প্রকট হয়ে দেখা দেয় ২০০৭ ও ২০০৮-এ পরপর দু’টি বন্যা এবং প্রলয়ংকারী সিডরের পর। টনক নড়ে সবার, সরকারি উদ্যোগ আর কৃষকদের দৃঢ় মানসিকতায় তখন সে সংকট কাটিয়ে ওঠা গেলেও নীতি নির্ধারকদের কপালে চি-ার রেখা দেখা দেয় আগামীর খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে রাষ্ট্রের উদ্যোগ আর কৃষকের আপ্রাণ চেষ্টায় গেল রোরো আর আমন মৌসুমে বাম্পার ফলনে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। কিন্তু এই সফলতার পরও কৃষির ওপর নেমে আসে আরেক বড় আঘাত। আ-র্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও সারের মূল্য ব্যাপক আকারে বেড়ে গেলে আমাদের দেশেও তার প্রভাব পড়ে। ইউরিয়া ও অন্যান্য সারের মূল্য দ্বিগুণ থেকে শুরু করে কয়েকগুণ পর্য- বেড়ে যায়। সাথে অন্যান্য উপকরণ মূল্যও চলে যায় কৃষকের নাগালের বাইরে। যা আবারও কৃষকদের মাঝে সৃষ্টি করে হতাশা। এ অবস্থায় সময় এসেছে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের। সামনেই জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনী আমেজে সারাদেশেই চলছে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা। বিভিন্ন দল থেকেই দেয়া হচ্ছে উন্নয়নের নানা অঙ্গীকার। সেখানে আমরা দেখেছি কৃষি নিয়ে নানা কথা। কৃষির প্রত্যেকটি বিষয়ই তাত্ত্বিকভাবে উঠে এসেছে তাদের সেই ইশতেহারগুলোতে।

কিন্তু এ তো শুধুই অঙ্গীকার যা অতীতেও দেখে এসেছে এদেশের জনসাধারণ। সেগুলোতে এতদিনের বঞ্চিত কৃষিজীবি মানুষগুলোর ভরসা কতটুকু? নানা সময়ে তৃণমূল কৃষকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখা গেছে রাজনীতিবিদদের এই অঙ্গীকারে তাদের আর কোন ভরসা নেই। কৃষকদের জন্য কিছু করার আশ্বাস দিয়ে পরে তাদের বঞ্চনার মধ্যে ফেলে দেয়ার ইতিহাস এদেশে এতই বেশি যে কৃষকরা স্বপ্ন দেখতেও এখন ভয় পায়। বঞ্চনার এই উত্তাপ লেগেছে কৃষকের অ-ঃপুরেও। সরকার কিংবা সরকারি তৎপরতায় ক্ষোভ ঝরে পড়ে কৃষাণীদের কণ্ঠেও।

স্বাভাবিকভাবেই ইশতেহারনামার তাত্ত্বিক কথাবার্তায় কৃষকদের এখন আর মন ভরে না। এখন তারা মাঠে এর প্রতিফলন দেখতে চায়। কোন সরকার ক্ষমতায় গেল তা নিয়ে তাদের কোন ভাবনা নেই। তারা স্বল্পমূল্যে এবং সময়মত সার, বীজ কীটনাশকসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ পেলেই খুশি। সারের জন্য দীর্ঘ লাইন দিয়েও প্রয়োজনের তুলনায় নামমাত্র সার পেয়ে ফসলের ঝলসে যাওয়া আর দেখতে চায় না তারা। গরীব কৃষকরা চায় সহজে এবং সহজ শর্তে ঋণ। ভূমিহীন বর্গাচাষিরা কোন সহায়সম্বল না থাকার কারণে ঋণ থেকে বঞ্চিত হতে চায় না। ঋণ আনতে গিয়ে হয়রানি আর উৎকোচ থেকেও মুক্তি চায় তারা।

কৃষির সেই চিরাচরিত চিত্র আর নেই। কৃষিতে শুধু অশিক্ষিত দুর্বল মানুষ শ্রম দেবে, পাল্টে গেছে এমন ধারণা। এখন অনেক শিক্ষিত মানুষও তাদের মেধা আর অর্থ বিনিয়োগ করছে কৃষিতে। তাদের কথায় উঠে আসছে আগামীর সরকারের কাছে কৃষির চাওয়া। তারা একই সাথে সার-বীজ-কীটনাশকের স্বল্পমূল্য এবং সুলভ প্রাপ্তি যেমন দাবি করছেন তেমনি বলছেন জলবায়ুগত পরিবর্তনে নতুন কৃষি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাও উপলব্ধি করছেন। তারা বলছেন কৃষি বিভাগকে ঢেলে সাজানোর কথা। আসছে কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণকর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের কথা। সামগ্রিক বিবেচনায় দেখা যায় কৃষি কিংবা কৃষির উন্নয়ন নিয়ে শুধুমাত্র কৃষিবিদ বা নীতিনির্ধারকরাই ভাবছেন না, কৃষকদের নিজেদের উপলব্ধিও গুরুত্বের দাবী রাখে সমানভাবে। বিষয়গুলো এখন অনেকটাই স্পষ্ট।

কৃষিপ্রধান এই দেশে কৃষিকে বাদ দিয়ে উন্নয়নের যে কোন চি-াই অলীক স্বপ্ন মাত্র। অতীতে একথা প্রমাণিত হয়েছে বারংবার। এতদিনের উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষি ও কৃষককে যে উপেক্ষা করা হয়েছে তা যেমন সত্য, সেসব পরিকল্পনার বা-বায়নে কতটুকু উন্নয়ন এদেশে হয়েছে তাও রয়ে গেছে প্রশ্নসাপেক্ষ। তাই একথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে কৃষিই এদেশের উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক এবং কৃষিকে বাদ দিয়ে উন্নয়নের যে কোন পরিকল্পনাই অসম্পূর্ণ এবং নিষ্ফল থেকে যাবে। তাই সামগ্রিকভাবে দেশের যথার্থ উন্নয়নে কৃষিকে মূল শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা এখন সময়ের দাবি মাত্র। সার্বিক ক্ষেত্রে স্ব-নির্ভর একটি জাতি গঠনে কৃষিকে দিতে হবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আর কৃষককে দিতে তার প্রাপ্য অধিকার ও সম্মান। ইংরেজির নতুন বছরে আগামীর নির্বাচিত সরকার এ প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করে সেদিকেই চোখ থাকবে পুরো জাতির। সবাইকে নতুন বছরের আগাম শুভেচ্ছা।
- শাইখ সিরাজ

মানবকল্যাণে কীটপতঙ্গ


মানবকল্যাণে কীটপতঙ্গ


বিশ্বে বর্তমানে সনাক্তকৃত কীটপতঙ্গের জাতি (জীবিত ও অধুনালুপ্ত) প্রায় ১০ লক্ষ যা সম- প্রাণী জগতের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং এদের শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের উপকারে আসে। বাকি কীটপতঙ্গের উপকারিত এখনও মানুষের অজানা।

সারা বিশ্বে মানুষের সংখ্যা ও কীটপতঙ্গের সংখ্যা হিসেব করলে মাথাপিছু কীটপতঙ্গের সংখ্যা হবে প্রায় ৩০ কোটি। কীটপতঙ্গ হতে আমরা সরাসরি যা পাই তা হল- রেশম, মধু, মোম, গালা ইত্যাদি। এছাড়া কীটপতঙ্গ হতে পাওয়া যায় আরাম-আয়েসের জিনিস, বিলাসদ্রব্য, খাবার রঙ, ওষুধ ইত্যাদি। এছাড়াও ফলের পরাগায়ণ, মাটির উর্বরতা সংরক্ষণ, আগাছ দমন, ময়লা পরিষ্কারণ (মৃত প্রাণী বা উদি্‌ভদকে পচিয়ে মাটিতে রূপা-র) প্রাণী ও মাছের খাদ্য, অনিষ্টকারী কীট দমন বা তাদের বংশ নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্রপচার, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ইত্যাদি বহুবিধ কাজে কীটপতঙ্গের বিশেষ অবদান আছে । কীট বিজ্ঞানী গোসার্ড এইচ· এ “মানবকল্যাণে কীটপতঙ্গের ভূমিকা” শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছে যে, “যদি উপকারি পোকা ফসল তথা উদি্‌ভদের অনিষ্টকারী পোকার বংশ বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি না করতো তাহলে পৃথিবীতে মানুষ ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে বিলীন হয়ে যেত।”

সুতরাং বোঝা যায় যে, মানুষের অি-ত্ব রক্ষার্থে কীটপতঙ্গের বিরাট ভূমিকা আছে।

ধানের ক্ষেতের পোকা জরিপ করে দেখা গেছে যে, শতকরা ১৫ ভাগ কীটপতঙ্গ ফসলের ক্ষতি করে এবং শতকরা ৮৫ ভাগ কীটপতঙ্গ ওই ক্ষতিকারককে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে পরভোজী ও পরবাসী হিসেবে।

একটি দেশের সার্বভেীমত্ব রক্ষার জন্য তিনটি প্রতিরক্ষা বাহিনী থাকে- স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী। ধানক্ষেতেও তেমনি তিনটি বাহিনী আছে। স্থল বাহিনীর মধ্যে আছে- মাকড়সা, ক্যারাবিট বিটল, পিঁপড়া ইত্যাদি। নৌ-বাহিনীর মধ্যে আছে- বিভিন্ন প্রজাতির ওয়াটার বাগ, মাইক্রোভেলিয়া, ব্যাঙ, মাছ ইত্যাদি। বিমান বাহিনীর মধ্যে আছে- বোলতা, মাছি, লেডিবার্ড বিটল, ফড়িং, পাখি ইত্যাদি।

উদাহরণের সুবিধার জন্য ধানক্ষেতকে বেছে নেয়া হল। অন্যান্য ফসল ক্ষেতে নৌ-বাহিনী না থাকলেও স্থল ও বিমান বাহিনীর কীট আছে ফসলের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের বংশ নিয়ন্ত্রণের জন্য। অনেক সময় পোকা দেখা মাত্রই কীটনাশক দিয়ে ক্ষতিকারক পোকা মারতে অনেক অনেক বেশি উপকারী পোকা মেরে ফেলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছি। মনে রাখতে হবে কীটনাশক মৃদু রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের আগে ভাবতে হবে।

প্রধান প্রধান কয়েকটি ফসলের উপকারি বা বন্ধু পোকাঃ

টেট্‌রাগনাথা (লম্বামুখী) প্রজাতির মাকড়সাঃ

বৈশিষ্ট্যঃ ১০ থেকে ২৫ মি·মি· লম্বা, লম্বা মুখ, লম্বা পা। বিশ্রামের সময় পাগুলো লম্বাভাবে একই রেখায় থাকে।

অবস্থানঃ গাছের পাতা ও ডাল।

আচরণঃ দিনের বেশির ভাগ সময় বিশ্রাম করে এবং রাতেরবেলায় আংটির মত জাল বুনে শিকার ধরে।

খাদ্যঃ বাদামি গাছ ফড়িং, সাদা পিঠ শোষক পোকা, আঁকাবাঁকা পাতা ফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা এবং এদের ডিম। দিনে গড়ে ২ থেকে ৩টি পোকা এবং ১২ থেকে ১৫টি ডিম খায়।

জীবনকালঃ ১ থেকে ৩ মাস। স্ত্রী মাকড়সা ১০০ থেকে ২০০টি ডিম পাড়ে।

অক্সিওপেস (লিংকস) প্রজাতির মাকড়সাঃ

বৈশিষ্ট্যঃ ৭ থেকে ১০ মি·মি· লম্বা, পায়ে কাঁটা আছে। স্ত্রী মাকড়সার পেটের দু’পাশে আড়াআড়ি দু’জোড়া সাদা দাগ এবং পুরুষ মাকড়সার মাথার দু’পাশে শুড়ের মত দু’টি স্পর্শ যন্ত্র আছে।

অবস্থানঃ শুকনা ও ছায়াযুক্ত স্থান বেশি পছন্দ।

অচরণঃ এরা জাল বুনে না। দ্রুতগামী, ভাল শিকারি।

খাদ্যঃ বাদামি গাছ ফড়িং, সবুজ পাতা ফড়িং, সাদা পিঠ শোষক পোকা, আঁকাবাঁকা পাতা ফড়িং পাতা মোড়ানো, চুঙ্গি ইত্যাদি। মথ জাতীয় পোকা এরা বেশি শিকার করে। দিনে ২ থেকে ৩ মথ খায়।

জীবনকালঃ ৩ থেকে ৫ মাস। স্ত্রী মাকড়সা ২০০ থেকে ৩৫০টি ডিম দেয়।

ফড়িং (ডেমসেল ফ্লাই/ ড্রাগন ফ্লাই)ঃ

বৈশিষ্ট্যঃ প্রায় ৩০ মি·মি· লম্বা, সরু লাল, কমলা, ধূসর নীলাভ কিংবা হালকা হলদে রঙের ফড়িং।

অবস্থানঃ ধানক্ষেত বা ঝোপের নিচের দিকে। শা- ও ধীরগতিতে চলাফেরা করে।

আচরণঃ গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। দেহের পেছন দিকে কিছুটা উঁচু এবং মুখ নিচু করে পাতায় বা কাণ্ডে বসে বিশ্রাম নেয়।

খাদ্যঃ বাদামি গাছ ফড়িং। সবুজ পাতা ফড়িং, সাদা পিঠ শোষক পোকা, পাতা মোড়ানোর পোকা ডিম ও বাচ্চা ধরে খায়।

জীবনকালঃ ১০ থেকে ৩০ দিন। স্ত্রী ফড়িং পানিতে ৩০ পি ডিম দেয়।

ড্রাগন ফ্লাইঃ

বৈশিষ্ট্যঃ এরা আকারে ডেমসেল ফ্লাই এর চেয়ে বড়। মাথার দু’পাশে বড় আকারের দু’টি চোখ। বসে থাকলে পাখনা বিমানের মত ছড়িয়ে থাকে।

অবস্থানঃ গাছের উপরের দিকে উড়ে বেড়ায়।

আচরণঃ এরা খুব চঞ্চল এবং দ্রুত উড়ে চলাফেরা করে।

খাদ্যঃ ডেমসেল ফ্লাইয়ের মত।

জীবনকালঃ ডেমসেল ফ্লাইয়ের মতই প্রায়।

পানিতে বসবাসকারী পরভোজী পোকাঃ

ওয়াটার বাগ (মাইক্রোভেলিয়া প্রজাতির)ঃ

বৈশিষ্ট্যঃ ১·৫ মি· মি· লম্বা, কালো চকচকে এই পোকা পা শরীরের সাথে সমভাবে রাখে।

অবস্থানঃ পানির উপরিভাগে, মাঝে মাঝে কাণ্ডের নিচের দিকে পানির কাছাকাছি অবস্থান করে।

আচরণঃ পানির উপরে খুব দ্রুত চলাচল করে। এরা দল বেঁধে শিকার ধরে খায়। এদের পাখনা আছে, এরা আলোতে আকৃষ্ট হয়।

খাদ্যঃ বাদামি গাছ ফড়িং, সবুজ পাতা ফড়িং সদ্য ফোটা মাজরার বাচ্চা দিনে ৭ থেকে ৮টা খেতে পারে।

জীবনকালঃ ১ থেকে ২ মাস, ৪ সপ্তাহ না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। স্ত্রী পোকা ২০ থেকে ৩০টি ডিম পাড়ে।

মেসোভেলিয়া প্রজাতির ওয়াটার বাগঃ

বৈশিষ্ট্যঃ ৩ থেকে ৪ মি· মি· লম্বা হালকা সবুজ রঙের পাখনা ও পাখনাবিহীন, ছোটছোট কাঁটাযুক্ত পা, চুষে খাওয়া উপযোগী মুখ।

অবস্থানঃ পানির উপবিভাগ এবং গাছের নিচের অংশে পানির কাছাকাছি। ধানক্ষেতে বেশি দেখা যায় পাখনাবিহীনদের।

আচরণঃ সাধারণত এরা দলবদ্ধভাবে শিকার করে না। একাকী শিকার করে খায়।

খাদ্যঃ সবুজ পাতা ফড়িং। বাদামি মাছ ফড়িং, আঁকাবাঁকা পাতা ফড়িং সাদা পিঠ শোষক পোকা, মাজরা ইত্যাদির কীড়া। অন্যান্য পোকার চেয়ে এদের খোরাক কম।

জীবনকালঃ ৪৫ দিন। স্ত্রীপোকা ২৮টি ডিম পাড়ে।

পানিতে বসবসকারী আরও অনেক পোকা আছে যেমন-ওয়াটার মেগবার, ওয়াটার স্করপিওন, ব্যাক সুইমার, ওয়াটার বোটম্যন, ওয়াটার ক্যাভেঞ্জার, ডাইভিং বিটল ইত্যাদি।

- কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান

ছাদে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ


ছাদে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ



ছাদে লাউসহ শীত মৌসুমের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে আশেপাশের সবাইকে চমকে দিয়েছেন ঢাকার মগবাজারের এম· এ· সালাম ও মোঃ সেলিম নামের দুই ভাই। শুধু পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে তারা করছেন এসব। এম· এ· সালাম ও আর মোঃ সেলিম দু’ভাই-ই ছিলেন দীর্ঘদিন দেশের বাইরে। দেশে ফিরে আসার পর দুই ভাই মিলে মগবাজারের চারতলার নিজস্ব বাড়ির ছাদে সময় কাটানোর জন্য গড়ে তোলেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান। প্রথমে শখের বশে বাগান করলেও পরে এ বাগান থেকে তিনি অর্থনৈতিক সহযোগিতা পান। অর্থনৈতিক সহযোগিতা তাদের জন্য বড় না হলেও তারা তাদের পরিবারের জন্য পাচ্ছেন নির্ভেজাল শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফলমূল। তবে এখানে বর্তমানে প্রাধান্য পাচ্ছে লাউগাছ আর্থাৎ প্রতি বছরই আলাদাভাবে শীতের সবজির আবাদ করেন তারা। গতবার করেছিলেন টমেটো আর সিম, ফলনও পেয়েছিলেন প্রচুর। এ বছর করেছেন লাউ। এ পর্য- প্রায় দুই শতাধিক লাউ ফললেও একটাও বাজারে বিক্রি করেননি। কেন বিক্রি করেননি সে সম্পর্কে এম· এ· সালামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের কোনকিছুরই অভাব নেই। কিন্তু যেটার সবার সবচেয়ে বড় অভাব রয়েছে সেটা হল বিষমুক্ত শাকসবজি। আমি না হয় সারা শীতকাল ধরে নিজের বাগানের বিষমুক্ত শাকসবজি খেলাম। অন্যরা কিন্তু সেটা পারে না। তাই আমি যথাসম্ভব আমার আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিষমুক্ত শাকসবজি দিয়ে থাকি। আমাদের মত অন্যেরাও যদি এমন উদ্যোগ নিত তাহলে আমাদের পরিবারগুলো অ-ত বাজারের বিষাক্ত সবজি কেনা ও খাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারতো।”

স্বাস্থ্য সচেতন মোঃ সেলিমের সাথে কথা বলতে গেলে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমরা বাজার থেকে যেসব শাকসবজি কিংবা ফলমূল কিনে খাই তা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। কীটনাশকের প্রভাবে যকৃতি, পাকস্থলীতে ক্যান্সারসহ মারাত্মক অসুখ-বিসুখ হয়। তাই সব সময় চেষ্টা করি নির্ভেজাল খাদ্য খেতে। সরকারের এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে যাতে কেউ ফলমূল ও শাকসবজি বিষযুক্ত না করে।”

২০০৩ সাল থেকে ছাদে বাগান শুরু করেন এম· এ· সালাম ও মোঃ সেলিম। প্রথমে সৌন্দর্য বর্ধন হিসেবে গাছ লাগালেও বর্তমানে অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাচ্ছেন খুব। বর্তমানে বাগানে লেবু, কলা, কুল, পেঁপেসহ লাউ, সিম, টমেটো, পেয়ারা, সৌন্দর্যবর্ধনকারী বিভিন্ন ফুলের গাছ আছে। সকালে-বিকালে ও সন্ধ্যায় এখানে আসে নানা ধরণের পাখি। কিচির-মিচির শব্দে মুখোরিত হয়ে ওঠে ছাদ। শহরে থেকেও পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙ্গে বাসার সবার। তাছাড়া বিকেলবেলায় ছাদে ঘুরতে গেলে সবুজের সমারোহ দেখে মন ভরে যায়। সবগুলো গাছই লাগানো হয়েছে টবে।

১৩০০ স্কয়ার ফিটের বাগানে কখনও তারা রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। কচুরীপানা, গোবর, ছাই, তরিতরকারীর খোসসহ ইত্যাদি দিয়ে জৈব সার তৈরি করেন। ফলমূল ও শাকসবজির গাছের গোড়ায় এই জৈবসারই তারা ব্যবহার করে থাকেন। পোকামাকড় দমন করতেও তারা রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। নিমপাতার রস, ছাই, হাতজাল ইত্যাদি দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে বালাইদমন করে থাকেন। পাশাপাশি আশপাশের যারা বাগান করতে ইচ্ছুক তাদের সবাইকে বলেন- জৈব সার দিয়েই চাষাবাদ করতে। জৈব সার যেমন গাছপালাকে বিষমুক্ত রাখে; তেমনি শাকসবজি ও ফলমূল থাকে বিষক্রিয়াহীন। যার কারণে মানুষের শরীরের কোন ক্ষতি করেন না।

- সাহারা তুষার

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৮

বোরো উৎপাদন


জীবন কৃষষ্ণ বিশ্বাস


বোরো ধান সেচনির্ভর। তবে সারাদেশের চাষীরা বীজতলাটা করে ফেলে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে। হাওর এলাকায়ও এর ব্যতিত্রক্রম নয়। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে আগাছা বাছাই আর জমি প্রস্টçতির কাজ চলতে থাকে। এদিকে চারা দেওয়া আছে। তাই লাগানোর মতো হলে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এক সময় পানি শুকিয়ে গেলে দরকারমতো সেচ দিতে হয়। হাওরের জমিতে ধানের আবাদ বানের পানির খেয়ালি আসা-যাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। তাই বীজতলায় বীজ ফেলার সময়-অসময় নেই। অনেক ক্ষেত্রেই চাষীরা অক্টোবরে বীজতলা করে ফেলে। অথচ করার মোক্ষম সময় হলো নভেল্ফ্বর। জমি তৈরি হতে হতে চারার বয়স বেড়ে যেতে পারে দুই-তিন মাস। তখন জীবনকাল বেড়ে যাবে। ফলে এপ্রিলের শেষে বা মে মাসের প্রথম দিকে পাহাড়ি ঢলের ভয়, শিলাবৃষ্দ্বির ভয়। আগাম লাগালে কাইচথোড় আসে ফেব্রুয়ারি মাসে। ধান চিটা হয়ে যাওয়ার ভয়। এমন ঘটনা মাঝে মধ্যে দেখা যায় হাওর এলাকায়। কিশোরগঞ্জের কথা বলি। ২০০৭-এ পানি টান দেওয়া শুরু করে অক্টোবরে। চাষীদের জানা ছিল যে বীজতলা করার সময় হয়নি। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। বীজতলা করা হলো, ওদিকে জমির পানিও নেমে যাচ্ছে। সর-কাদায় লাগাতে হলো এক মাসের চারাই। জানা ছিল এক মাসের চারার ভালো ফলন দেয়। জাত ছিল ব্রি ধান২৮। তবে জানা ছিল না যে এই জাতের কাইচথোড়-অবস্টÿাটা ঠাwৈর মধ্যে পড়ে যেতে পারে। যা হওয়ার তাই হলো। হাওর এলাকার আগাম ধানের জাতগুলো সব চিটা হয়ে গেল। সারাদেশের তুলনায় এই পরিমাণ মাত্র ২·৫%। কিন্তু যে চাষীর পুরোটাই গেল তার জন্য তো ১০০ ভাগই শেষ। এই ঘটনা সে বছর শুধু হাওরেই নয়, অন্যান্য জায়গায়ও দেখা গেছে। নিল্ফম্নতাপমাত্রার জন্য ধানের সবচেয়ে সংবেদনশীল পর্যায় হলো কাইচথোড় (প্রস্টম্ফুটনের ২৪ দিন আগে), থোড় (প্রস্টম্ফুটনের ১২-১৪ দিন আগে) এবং ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে পরাগ-বিদারণ অবস্টÿা। এদের নিল্ফম্নসংকট তাপমাত্রা হলো যথাত্রক্রমে ১৮, ১৯ এবং ২২ সে·। কোনো সংকট নিল্ফম্নতাপমাত্রা (যে তাপমাত্রার নিচে নেমে গেলে বৃদিব্দ ও বিকাশ ব্যাহত হয়) যদি দু’একদিন ধরে পড়ে তবে ক্ষতির সল্ফ্‌ভাবনা কম। কিন্তু যদি ৪-৬ দিন ধরে পড়তে থাকে তাহলে ক্ষতিকর পরিমাণ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে মেঘলা আকাশ থাকলে পরিস্টিÿতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে। ধানের ক্ষতি হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে শুধু রাতের তাপমাত্রা নয়দিনের তাপমাত্রারও বিরাট ভহৃমিকা আছে। রাতের তাপমাত্রা সংকটমাত্রায় থাকলেও যদি দিনের তাপমাত্রা স্ট্বাভাবিক বছরের তুলনায় ৩-৪ সে· কমে না যায় তাহলে ধানের ক্ষতি তেমন হয় না। দিনের ও রাতের তাপমাত্রার প্রকৃতি, জায়গা ও বছরভেদে পরিবর্তনশীল। গেল্‌গাবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে তাতে নতুনমাত্রা যোগ হওয়া অস্ট্বাভাবিক নয়। তবে এ ব্যাপারে এখন সতর্ক হওয়ার সময়, সিদব্দান্স্ন দেওয়ার সময় আসেনি। গাছের বৃদিব্দ পর্যায়ভেদে ক্ষতির লক্ষণ ভিল্পম্ন হয়। রোপণের সঙ্গে সঙ্গে রাতের তাপমাত্রা সংকটমাত্রার নিচে নেমে গেলে চারা মারা যাওয়ার সল্ফ্‌ভাবনা থাকে। কুশি গঠনকালে সংকটমাত্রার ঠাwৈয় গাছ খর্বাকৃতি হয়ে থাকে। বিবর্ণ দেখায়। মাঠ পর্যায়ে এই অবস্টÿাকে নাইট্রোজেন বা সালফারের অভাব হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। এই পরিস্টিÿতিতে কোনোপ্রকার সার বা বালাইনাশক প্রয়োগ করে লাভ নেই। কারণ তাপমাত্রা বেড়ে গেলে গাছের বৃদিব্দ এমনি স্ট্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে হাওর এলাকার জন্য কিছুটা উদ্বেগের কারণ আছে। কারণ ঠাwৈর ফলে ফসলের জীবনকাল কিছুটা বেড়ে গিয়ে ধানপাকা অবস্টÿায় পাহাড়ি ঢলের মুখোমুখি হতে পারে। থোড় শুরুর দিকে ঠাwৈয় আত্রক্রান্স্ন হলে শীষ ঠিকভাবে বের হতে পারে না। প্রস্টম্ফুটন অসল্ফঙ্হৃর্ণ দেখায়। কাইচথোড় অবস্টÿায় অতিরিক্ত ঠাwৈ পড়লে বিকলাঙ্গ শীষ তৈরি হয়। কাইচথোড়-পরবর্তী পর্যায়ের অতিরিক্ত ঠাwৈয় পরাগরেণু নষ্দ্ব হয়ে যায় বা সুগঠিত হতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, গাছের বাড়বাড়তি স্ট্বাভাবিক, এমনকি শীষও কিছুটা বের হয়। কিন্তু ধানের মধ্যে দানা তৈরি হয় না। এই ধরনের সংকট থেকে পরিত্রাণের জন্য যথাযথ কোনো ধানের জাত এখনো ব্রির হাতে নেই। তবে ব্রি ধান৩৬ চারা অবস্টÿায় ঠাwৈ সহ্য করতে পারে। যা হোক রোপণ ও বপন সময় ঠিক করে নিয়ে এ ধরনের নিল্ফম্নতাপমাত্রার শিকার থেকে রেহাই পাওয়া সল্ফ্‌ভব। ব্রির পরীক্ষিত ফলাফল হলো- স্ট্বল্কপ্পকালীন ধান (জীবনকাল ১৫০ দিনের কম) যেমন ব্রি ধান২৮ অক্টোবরে বপন করলে ৩০ দিনের চারা রোপণ করা যাবে না। ৬০ দিনের চারা রোপণ করতে হবে। তবে দীর্ঘজীবনকালীন ধান (জীবনকাল ১৫০ দিনের বেশি) যেমন ব্রি ধান২৯-এর বেলায় অক্টোবরের করা ৩০ দিনের চারা রোপণ করা যাবে। উভয় জাতের ধানের ক্ষেত্রে অক্টোবরে বপন করে ৬০ দিনের চারা এবং নভেল্ফ্বরে বপন করে ৩০-৬০ দিনের চারা ভালো ফলন দেয়। যদি কোনো কারণবশত ৯০ দিনের চারাই রোপণ করতে হয় তবে অবশ্যই তা অক্টোবর মাসে বপন করা চারা হতে হবে। তবে চারার অতিরিক্ত বয়সের কারণে সামগ্রিক ফলন ভালো হবে না। সংশিল্‌গষ্দ্ব চাষীরা এই আবাদ পদব্দতিটা অনুসরণ করে দেখতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে চারার বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। চারার বয়স একদিন বাড়লে জীবনকাল বাড়ে আধাদিন। ৩০ দিনের চারার তুলনায় ৬০ দিনের চারার গাছের আয়ুষ্ফড়্গাল ১৫ দিন বেড়ে যায়। ঠাwৈর বছর হলে গাছের জীবনকাল আরো সপ্টস্নাহখানেক বেড়ে যাওয়ার সল্ফ্‌ভাবনা। যা হোক প্রয়োজনে জমিতে ধানের প্রজনন পর্যায়ে পর্যাপ্টস্ন সেচের ব্যবস্টÿা করে (১০-১৫ সেমি) অতিরিক্ত ঠাwৈর প্রভাব বেশ কিছুটা প্রশমিত করা যায়। এছাড়া জমির জৈব পদার্থ একটা জরুরি বিষয়। নরংধিংথলরনধহ@ুধযড়ড়·পড়সলেখকঃ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাউদি্‌ভদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্দ্বিটিউট

রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০০৮

রাণীক্ষেত নিয়ন্ত্রণে আশার আলো

রাণীক্ষেত নিয়ন্ত্রণে আশার আলো


রাণীক্ষেত মুরগি বা পাখি জাতীয় প্রাণীর ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের পোল্ট্রি শিল্পের জন্য এ রোগ হুমকি স্বরূপ। স্বাস্থ্যগত ব্যবস্থাপনা ও সঠিক সময়ে গুণগত মানসম্পন্ন টিকা প্রদানের মাধ্যমে এ রোগ দমন করা যায়। তবে টিকা প্রদানের পর মুরগির শরীরে পর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা এন্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা তা হিমাগ্লুনেশন ইনহিবিশন অর্থাৎ এইচআই পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে হবে। এজন্য প্রয়োজন এইচআই এন্টিজেন। এইচআই পরীক্ষার জন্য এ এন্টিজেন পূর্বে বিদেশ থেকে আমদানি করা হত বলে অনেক অর্থ ব্যয় হত। বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট অর্থাৎ বিএলআরআই ইতোমধ্যে স্বল্প খরচে এইচআই এন্টিজেন উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্‌ভাবন করেছে। পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আমদানিকৃত এন্টিজেন ও বিএলআরআই উদ্‌ভাবিত এন্টিজেন সমমানের।

প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যঃ

০ বিদেশ থেকে এইচআই এন্টিজেন আমদানি করে পরীক্ষা করলে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু স্বল্প খরচে এইচআই এন্টিজেন দেশে উৎপাদন করা হয়েছে বলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়;
০ আমদানিকৃত ও দেশে প্রস্তুতকৃত এন্টিজেন সমভাবে কার্যকরী;
০ প্রযুক্তিটি ব্যবহারে পরিবেশের ওপর কোন বিরূপ প্রভাব নেই।
এন্টিজেন উৎপাদনের জন্য যা প্রয়োজনঃ
০ ৯ থেকে ১০ দিন বয়সের মুরগির ভ্রূণঃ বিশেষভাবে পালনকৃত প্যারেন্ট স্টক হতে সংগ্রহকৃত ফুটানোর উপযোগী সাদাডিম ৯ থেকে ১০ দিন ইনকিউবেট করে এ ভ্রূণ তৈরি করতে হয়;
০ সনাক্তকৃত স্থানীয় ভাইরাস/ টিকা ভাইরাস এর ১০-৩ ডাইলেশনের নমুনা;
০ ডিম ছিদ্র করার যন্ত্র;
০ সিরিঞ্জ ০·১ মিলি দাগ কাটা;
০ স্কচটেপ বা মোম;
০ জীবাণুনাশক দ্রবণ মিশ্রিত তুলা (জীবাণুনাশক হিসেবে আয়োডিন যৌগ ব্যবহার করা উত্তম);
০ ভ্রূণ পরীক্ষা করার যন্ত্র;
০ পিবিএস;
০ ফরমালিন;
০ সেন্ট্রিফিউজ মেশিন;
০ মাল্টিচ্যানেল পিপেট, টিপস ও টেস্টটিউব;
০ লাইয়োফিলাইজার/ ফ্রিজ ড্রায়ার ।

এন্টিজেন উৎপাদন পদ্ধতিঃ
০ জীবাণুনাশক যৌগ মিশ্রিত তুলা দিয়ে ৯ থেকে ১০ দিন বয়সের ভ্রূণায়িত ডিম ভালভাবে মুছে জীবাণুমুক্ত করতে হবে;
০ ভ্রূণ পরীক্ষা করার যন্ত্রের সাহায্যে প্রথমে ভ্রূণায়িত ডিমের পূর্ণ বায়ুথলি অঞ্চল চিêিহ্নত করে ভ্রূণের যে এলাকায় রক্তনালী কম সে এলাকা বরাবর একটি উলম্ব দাগ দিতে হয়;
০ উলম্ব দাগটি বায়ুথলির দাগের সাথে যে জায়গায় মিলিত হয়েছে সে জায়গার ০·২৫- ০·৫ ইঞ্চি উপরে ডিম ছিদ্র করার যন্ত্র দিয়ে একটি ছিদ্র করতে হবে। যন্ত্রটি অবশ্যই জীবাণুনাশক যৌগ মিশ্রিত তুলা দিয়ে ভালভাবে মুছে নিতে হবে;
০ পূর্বে টাইট্রেশন করা ১০-৩ ডাইলেশনের ভাইরাস বা ইনোকুলাম থেকে সিরিঞ্জের সাহায্যে ০·১ মিলি ইনোকুলাম ভ্রূণের এলানটোয়িক পথে ইনজেকশন করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সূচের মাথা ভ্রূণের গায়ে আঘাত না করে। একই ধরনের ও বয়সের কিছু ভ্রূণায়িত ডিম কন্টোল হিসেবে রাখতে হবে যার মধ্যে শুধু ০·১ মিলি পিবিএস প্রয়োগ করতে হবে;
০ ইনজেকশনের ছিদ্রটি মোম বা স্কচটেপ দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে;
০ ডিমগুলোকে পুণরায় ইনকিউবেটরে স্থাপন করে ৪ থেকে ৫ দিন রাখতে হবে এবং প্রত্যেকদিন পরীক্ষা করতে হয়। প্রথম ২৪ ঘন্টায় যে ভ্রূণগুলো মারা যাবে সেগুলো দুর্ঘটনাজনিত মৃত বলে গণ্য হবে। পরবর্তীতে যে ভ্রূণগুলো জীবিত থাকবে সেগুলো ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। পঞ্চম দিনে যে ভ্রূণগুলো জীবিত থাকবে সেগুলোকেও ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে;
০ পরবর্তী দিনে ডিমগুলো থেকে এলানটোনিক ফ্লুইড বা তরল সংগ্রহ করতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিটি ডিম থেকে প্রায় ১০ মিলি ফ্লুইড সংগ্রহ করতে হবে;
০ ডিম পরীক্ষা করার জন্য একটি গ্লাস ্লাইডে ৫০ মাইক্রোলিটার বা এক ড্রপ এলানটোয়িক ফ্লুইড এবং সমপরিমাণ ৩% চিকেন জইঈ মিশাতে হবে। ভাইরাস প্রয়োগকৃত ডিমের ফ্লুইড চিকেন জইঈ এগ্লুটিনেশন ঘটাবে। অপরপক্ষে কন্ট্রোল ডিমের ফ্লুইড এগ্লুটিনেশন ঘটবে না;
০ রাণীক্ষেত রোগের ভাইরাস হিমাগ্লুটেশন ঘটাচ্ছে কি না তা সঠিকভাবে জানার জন্য এইচআই পরীক্ষা করতে হবে। এজন্য ভাইরাস প্রয়োগকৃত প্রতিটি ডিমের এলানটোয়িক ফ্লুইড থেকে দু’সট দু’ফোল্ড ডাইলুশন করতে হবে। এক সেটে রাণীক্ষেত রোগের জন্য পজিটিভ সিরাম এবং অন্য সেটে জানা নেগেটিভ সিরাম মিশাতে হবে। আধ ঘন্টা কক্ষ তাপমাত্রায় রেখে সমপরিমাণ ০·৫% চিকেন জইঈ উভয় সেটে মিশাতে হবে। এ অবস্থায় ৩০ থেকে ৬০ মিনিট রেখে ফলাফল পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পজিটিভ সিরাম হিমাগ্লুটিনেশন এ বাধা দিবে এবং নেগেটিভ সিরাম তা পারবে না;
০ উক্ত ফ্লুইড বা তরল ভালভাবে ছেঁকে নিয়ে ১ঃ ১৬০০ ডাইলেশন হিসেবে ফরমালিন যোগ করে ভালভাবে মিশাতে হবে। অতপর ১৫০০ ৎঢ়স এ ১০ মিনিট সেন্ট্রিফিউজ করতে হবে। পরিশেষে উপরের ফ্লুইড সংগ্রহ করে এইচ এ টাইট্রেশন করে এন্টিজেনিক ক্ষমতা নির্ণয় করতে হবে;
০ তরল হিসেবে উক্ত এন্টিজেন -২০০ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় বা লায়োফিলাইজ করে ৪০ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ট্যাবলেট আকারে সংরক্ষণ করা যায়। এন্টিজেন ট্যাবলেট ১ মিলি পিবিএস- এ গুলানোর পর টাইট্রেশন করে ব্যবহার করতে হবে। এ এন্টিজেন প্রতিবার ব্যবহারের আগে এন্টিজেনিক ক্ষমতা নির্ণয় করে নিতে হবে। একবার ক্ষমতা নির্ণয় করে পরীক্ষা করার পর পরবর্তী পরীক্ষার সময় পূর্বের এন্টিজেনিক ক্ষমতা বিবেচনা না করে পুনরায় পরীক্ষা করে ক্ষমতা নির্ণয় করতে হবে।

প্রযুক্তি ব্যবহারে লাভক্ষতিঃ স্বল্প খরচে এ এন্টিজেন উৎপাদন করে এইচআই পরীক্ষার জন্য এন্টিজেনের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব যা রাণীক্ষেত রোগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিদেশ থেকে আমদানি করা এন্টিজেনের ডোজ প্রতি খরচ পড়ে ৫ টাকা অথচ একই গুণসম্পন্ন বিএলআরআই কর্তêৃক উদ্‌ভাবিত ডোজ প্রতি খরচ পড়ে মাত্র ০·১০ টাকা। সে হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ের বিষয়টি সহজেই অনুমেয়।

প্রযুক্তি ব্যবহারে সর্তকতাঃ শুধু লেন্টোজেনিক বা মেসোজেনিক ভাইরাস মুরগির ভ্রূণে চাষ করে এবং ফরমালিন দিয়ে উক্ত ভাইরাসকে নিস্ত্র্নিয় করে এন্টিজেন উৎপাদন করতে হবে। কখনই এন্টিজেন উৎপাদনে ভেলোজেনিক ভাইরাস ব্যবহার করা যাবে না।

রাণীক্ষেত রোগ যে কোন বয়সের মুরগিতে হতে পারে। বাচ্চা মুরগিতে এ রোগে মারা যাওয়ার হার শতকরা ৯০ ভাগের উপরে। বয়স্ক মুরগিতে মৃত্যুর হার কিছুটা কম।

- মোঃ তৌফিক আরেফীন, ঢাকা

লাউ চাষে লাখপতি


লাউ চাষে লাখপতি
নিজের চেষ্টা ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে লাউ চাষে সাফল্য পেয়েছেন নোয়াখালীর সেনবাগের কৃষক সফি উদ্দিন। তার গ্রামের বাড়ি সেনবাগ পৌর শহরের অর্জুনতলা এলাকায়। তিনি ক’বছর আগেও ছিলেন সরকারি চাকুরীজীবি। স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারি। ২০০১ সালে তিনি সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্ল্লেক্স থেকে অবসর গ্রহণ করেন। চাকরিতে থাকাকালীন সময়ে সততা ও সুনামের সাথে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। অবসরের পর থেকে ওতোপ্রাতভাবে জড়িয়ে পড়েন কৃষি কাজে। বছরের কোন সময় কোন সবজি চাষ করতে হবে তা ভালভাবে জেনে নেন তিনি। এভাবে বছরের সব সময়ে মওসুমী সবজির কারিগর বনে যান সফি উদ্দিন ভঁূইয়া। তার উৎপাদিত সবজি সারা বছর ধরে এ এলাকার উল্লেখ্যযোগ্য চাহিদা পূরণ করে থাকে।

সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনের সময় কথা হয় সফল কৃষক সফি উদ্দিন ভঁূইয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, বিগত কয়েকটি বছরের মত এ বছরও বাড়ির পাশে উঁচু ৬০ শতাংশ জমিতে তিনি লাউ চাষ করেছেন। মোট জমিকে চার ভাগে ভাগ করে গত জুলাই মাসের শেষের দিকে বিভিন্ন জাতের যেমন- মেটাল হাইব্রিড, লাল তীর মাটিয়া, ডায়না বীজ লাগান। এই জমির মধ্যে তার নিজস্ব জায়গা মাত্র ১২ শতাংশ। বাকি জমি অন্যজনের কাছ থেকে লিজ নেয়া। তিনি আরও জানান, বীজ লাগানোর দেড় মাসের মাথায় সেপ্টেম্বর মাসে গাছে লাউ ধরতে শুরু করে। এর পরবর্তীতে বাজারজাতও শুরু করা হয়। প্রতি দু’দিন পর পর ৮০ থেকে ১০০টি লাউ বিক্রি করে থাকেন। কোন কোন দিন এর সংখ্যা আরও বেড়ে যায়, আবার সংখ্যা কমেও যায়। প্রতিটি লাউ বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা ধরে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। তবে বাজারের চাহিদা রয়েছে পর্যাপ্ত। এ বছর লাউর ভাল দাম পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি।

সফি উদ্দিন আরও জানান, লাউ আবাদে বীজ, চাষাবাদ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ নানা কাজে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ ক্ষেত থেকে শেষ পর্য- দেড় লাখ টাকার মত লাউ বিক্রি হবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষি বিভাগের লোকজনের উল্ল্লেখযোগ্য কোন সাহায্য সহযোগিতা না থাকলেও তার নিজ অভিজ্ঞতার কারণে আজ সফলতার এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছেন।

তিনি তার অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেন- সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মুজুরি বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট উল্লেখযোগ্য সমস্যা। তার এ সাফল্য দেখে এলাকার আরও অনেক কৃষক তার সঙ্গে যোগাযোগ করে কৃষি কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। তিনি তাদেরকে বেশ উৎসাহের সাথে বলেন- বেকার না থেকে অযথা সময় নষ্ট না করে এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হলে একদিকে যেমন অবসর সময়টা কাজে লাগবে অন্যদিকে এ এলাকায় সবজির চাহিদা পূরণ হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক থেকেও স্বাবলম্বী হওয়া যাবে।
-খোরশেদ আলম, নোয়াখালী

কলা নিয়ে কিছু কথা


কলা নিয়ে কিছু কথা

“কলা রুয়ে না কেটে পাত তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।।”






কলা আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় ফল। এমন কেউ নেই যে কলা পছন্দ করে না। কলার রয়েছে নানা ওষুধি গুণ। পাশাপাশি আমাদের পুষ্টি চাহিদাও মেটায় এই কলা। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাতে কলা কিছু না কিছু জন্মে।

ছোটবেলায় আমরা যখন গোলাঘর বা ঘরের মাচায় উঠতাম তখন পাকা মালভোগ কলার গন্ধ আমাদের অভিভূত করতো। বড়দের অগোচরে মাচায় চড়ে মজা করে কলা খেতাম। মালভোগ কলার দুধভাতের স্বাদ ছিল অপূর্ব। আমরা এখনও কলা খাই কিন্তু আগের মত আর সেই স্বাদ পাই না। আগের সেই মালভোগ কলার সাথে দুধভাতের যে কি স্বাদ তা আর বর্তমান প্রজন্মকে বোঝানো যাবে না। আগে কলা পাকতো গাছে কিংবা পরিপক্ক হলে ঘরের মাচায়। আর এখন কলা পাকে কয়েক ঘন্টায়। কৃত্রিম উপায়ে। বিদ্যুতের সক দিয়ে। নানা রকম রাসায়নিক বিষক্রিয়ার মাধ্যমে। কলার খাদ্যমানও থাকে না। বিষ দিয়ে পাকানো কলা হয়ে যায় বিষাক্ত। তাই খেয়ে মানুষ নানা রকমের অসুখ-বিসুখের শিকার হচ্ছে। এরমধ্যে কিডনীতে সমস্যা, পাকস্থলিতে ক্যান্সারসহ নানা ধরনের বড় বড় অসুখ। অসৎ ব্যবসায়ীরা তাদের মুনাফা লাভের জন্য তাদের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখছে? এটা ভাবছে না যে এখানে দেশ ও জাতির স্বার্থ জড়িত। দিন দিন নিরাপদ খাদ্য হয়ে যাচ্ছে অনিরাপদ। কলা খেয়ে উপকারের বদলে অপকারই হচ্ছে বেশি।

বর্তমানে কলায় প্রকৃত স্বাদ নেই। যারা কলার বাগান করছে তাদের দেখা যায় হরহামেসাই ব্যবহার করছে নানা রকমের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ। কলাগুলো পরিপক্ক হওয়ার আগেই গাছ থেকে কেটে কলাগুলোকে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে পাইকারীদের কাছে। তারা নিয়ে বিষমুক্ত কলাকে বিষযুক্ত করে তুলছে। আর এগুলোই হচ্ছে মানুষের খাদ্য।

জমিতে সার প্রয়োগের ফলে দিন দিন আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা নিম্নগামী হচ্ছে। ফসলের সাথে যুক্ত হচ্ছে বিষক্রিয়া। আমরা রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে গোবর, খৈল, জৈব ও সবুজ সার প্রয়োগ করতে পারি। পাশাপাশি পোকা-মাকড়, রোগ-বালাই দমন করতে পারি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে পোকা-মাকড় ও বালাই দমনে নিম বা ওষুধি গাছ কিংবা গাছের রস দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা-মাকড় দমন করতে পারি। এসব উপায় খুঁজে বের করে, তা ব্যবহার করে, উৎপাদিত কলার মানকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারি।

মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। শুধু যে কলাতে বিষ মেশানো হচ্ছে তা নয়। বাজারে গাভীর দুধে মেশানো হচ্ছে পাউডার, দুধে পানি মেশালেও তা মেশাচ্ছে নদী-নালার দূষিত পানি। এক ড্রাম সয়াবিন তেলের মধ্যে ছোট্ট একশিশি ক্যামিকেল জাতীয় ওষুধ ঢেলে দিলেই তা হয়ে যাচ্ছে সরিষার তেল। মাছে মিশানো হচ্ছে ফরমালিন, শাক-সবজিতে নানা রকমের কীটনাশক, চাল-ডালে নানা রকমের রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে করা হচ্ছে সংরক্ষণ। দুধে পাওয়া যাচ্ছে মেলামাইন, বিভিন্ন ফলে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য। এমনি করে খাদ্য হয়ে যাচ্ছে অখাদ্য।

স্বাস্থ্যের জন্য প্রচণ্ড হুমকি হলেও কঠিন এবং কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না সরকার। কিছুদিন ভেজাল বিরোধী অভিযান চললেও আজ আর তা চলছে না। আর এই সুযোগটা গ্রহণ করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ভেজাল খাদ্য খেয়ে দেশের মানুষ নানা রকম কঠিন অসুখের শিকার হচ্ছে। চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে দেশের গরিব মানুষ। পরোক্ষভাবে এইসবের জন্য কারা দায়ী? দেশকে বাঁচাতে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে নিরাপদ খাদ্যের দরকার। আর এক্ষেত্রে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। আশা করি কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

- এম· এ· রউফ বাদশা, কৃষক

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০০৮

কাঁঠাল গাছঃ যার কিছুই ফেলনা নয়

কাঁঠাল গাছঃ যার কিছুই ফেলনা নয়




কাঁঠালের জন্মস্থান বাংলাদেশ ও এর আশেপাশে হওয়ায় জাতীয় ফল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কাঁঠাল গাছকে কৃষির ভাষায় বহুব্যবহারযোগ্য বৃড়্গ (MPT) বলে। অর্থাৎ কাঁঠাল গাছের পাতা, ফল, ডালপালা, কাণ্ড, শিকড়, বাকল, বীজসহ সবকিছু উপকারী। গাছের পাতা ও ফলের ত্বক গরম্ন-ছাগলের প্রিয় খাদ্য। ডালপালা খুব ভালো জ্বালানি। কাণ্ডের কাঠ খুব দামি আসবাবপত্র তৈরি হয়। কচিপাতা ও বাকল থেকে টাইডাই বাটিকের প্রাকৃতিক রঙ তৈরি হয়। শিকড় জ্বালানি ও ভেষজ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কষ গাম, গস্নু ও রাসায়নিক পদার্থ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। জাতীয় ফল কাঁঠাল কাঁচা ও পাকা খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয়। কাঁচা কাঁঠালের তরকারি বেশ সুস্বাদু। পাকা কাঁঠাল খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ। উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে বিশেষ কোন পুষ্টি উপাদান না থাকলেও প্রায় সবপুষ্টি উপাদানই আছে। তবে পাকা কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ আছে।

১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী পাকা কাঁঠালে ক্যারোটিন (ভিটামিনএ) ৪৭০০ মাইক্রোগ্রাম, খাদ্য শক্তি ৮৮ কিলোক্যালরি ও পটাশিয়াম ১৯১ মিলিগ্রাম আছে। কাঁচা কাঁঠালে উলেস্নখযোগ্য পুষ্টির মধ্যে পটাশিয়াম ২৪৬ মিলিগ্রাম ও ফসফরাস ৯৭ মিলিগ্রাম। বীজের মধ্যে উলেস্নখ্যযোগ্য হলো-সালফার ৩৫৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৪৬ মিলিগ্রাম ও খাদ্য শক্তি ১৩৩ কিলোক্যালরি। কাঁঠালের বিভিন্ন রকম ভেষজ গুণ রয়েছে। আর্য়ুবেদীয় মতে, মানুষের দেহে কোথাও ফুলে গেলে কাঁঠালের আঠা লাগালে উপকার হয়। ফোঁড়ায় আঠা লাগালে ফোঁড়া পাকে। কাঁঠালের পাতার রস খেলে বমি দূর হয়। কাঁচা কাঁঠালের এচোঁড় বেটে এর রস দুধ সমেত খেলে বুক ধড়ফড়ানি কমে। কচিপাতা পানিতে সিদ্ধ করে খেলে এবং আক্রান্তôস্থানে লাগালে দাদ, একজিমা ও চুলকানি রোগের উপশম হয়।
কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ

রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০০৮

খাদ্যের মাধ্যমে ভ্যাক্সিনেশন


খাদ্যের মাধ্যমে ভ্যাক্সিনেশন


বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলোর দিকে তাকালে আমাদের সত্যি বিস্ময় জাগে। এক সময় একটা গোল চাকা অবিষ্কার করতে মানুষের সময় লেগেছিল দশ হাজার বছর। আর দেখতে দেখতে আবিষ্কার হয়ে যাচ্ছে নানা ধরনের কঠিন অসুখের প্রতিষেধক। এইডস এর টিকা নেই, নেই ক্যান্সারেরও টিকা। অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে এই দূরারোগ্য ক্যান্সার, এইডস, হেপাটাইটিস-সির টিকা আবিষ্কার হয়ে গেছে। কলেরা, টাইফয়েড বা হেপাটাইটিস বি-এর মত ভয়াবহ রোগের হাত থেকে বাঁচতে আমরা কত কিছুই না করি। আশার কথা হল, খুব শিগগির কলেরা, হেপাটাইটিস-বি ও আরও কঠিন কঠিন অসুখের হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষের আর টিকা বা ভ্যাক্সিনেশন নিতে হবে না। শুধু একটা টমেটো বা দু’টো কলা খেলেই শরীরিরের ভেতরে এই সব কঠিন অসুখের বিরুদ্ধে গড়ে উঠবে প্রতিরোধ ক্ষমতা। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে জীবপ্রযুক্তি।
বিজ্ঞানীরা আমাদের অতি পরিচিত ফলমূল ও সবজি, যেমন কলা, টমেটো ও আলুর মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন এমন সব জিন, যা বিভিন্ন রোগের ভ্যাক্সিন হিসেবে কাজ করবে। এ ধরনের ভ্যাক্সিনের নাম ‘এডিবল ভ্যাক্সিন’। এক্ষেত্রে সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে বিজ্ঞানীরা ধানের মধ্যে ঢুকিয়েছেন এমন জিন যা কলেরার ভ্যাক্সিন হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশের মত উন্নয়শীল দেশের জন্য এ প্রযুক্তি অত্য- গুরুত্বপূর্ণ, কারণ টিকা ও ভ্যাক্সিন হিমাঙ্কের নীচেয় তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ও যথাযথভাবে প্রত্য- অঞ্চলে সরবরাহ করা যথেষ্ট ব্যয়বহুল ও কঠিন কাজ। আর গত দশ বছরে জীবপ্রযুক্তির উন্নতি মানুষের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। স্টেম সেল ক্লোনিং প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরানো, বার্ধক্যে ক্ষয় ধরা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন হৃৎপিণ্ড বা কিডনীও বদলে ফেলার স্বপ্ন দেখছে মানুষ।
- তৌফিক আহমেদ

একই সাথে বাদাম ও রসুনের চাষ


একই সাথে বাদাম ও রসুনের চাষ





আমাদের দেশের অধিকাংশ চরাঞ্চলেই কৃষকরা কোন ফসল চাষ করবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না। আবার ঠিকমত ফসল নির্বাচন না করতে পারায় আর্থিক ক্ষতিরও শিকার হন তারা। বন্যার পানি নেমে যাবার পর এসব চরাঞ্চলের জমি অত্য- উর্বর হয়ে যাওয়ায় এখানে উপযুক্ত ফসল চাষ করে কৃষকদের লাভবান হবার সম্ভাবনা অনেক। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিশাল হাওর এলাকাতেও এই সম্ভবনা প্রবল। জলবায়ুজনিত পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য এসব অঞ্চলে ফসল বৈচিত্র আনা দরকার। যেসব ফসল চাষ করে বেশি লাভ হতে পারে অথচ ঝুঁকি কম সেসব ফসল যেমন- ডাল (মুগ, মসুর, খেসারি, মটর ইত্যাদি), তৈলবীজ (সরিষা, বাদাম, সূর্যমূখী, সয়াবিন ইত্যাদি), মসলা জাতীয় ফসল (আদা, রসুন, মরিচ) এবং সবজি জাতীয় ফসল চাষাবাদের দিকে কৃষকরা এগিয়ে যেতে পারে। আবার একটি ফসলের সাথে অন্যান্য সাথী ফসলের আবাদও অনেক বেশি লাভজনক হতে পারে। এমনই দু’টি আ-ঃফসল হল চীনাবাদাম ও রসুন। মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) পর্য- এই ফসল দু’টি বপনের উপযুক্ত সময়। সে হিসেবে এখন বাদাম-রসুন বপনের আদর্শ সময় চলছে।
জমি তৈরিঃ বন্যার পানি নেমে যাবার পর পরই সেখানে মাটিতে যথেষ্ট রস থাকে এমন বেলে দো-আঁশ মাটিকে চীনাবাদাম ও রসুন চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। জমি ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে একেবারে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। বীজ বপনের আগে জমিতে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। জমিতে শেষ চাষের আগে পরিমিত পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ এই আবাদে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা আবশ্যক। সারের মাত্রা মাটির উর্বরতা ভেদে সামান্য কমবেশি হতে পারে। তবে আদর্শ মাত্রা হতে পারে- ইউরিয়া ১৩-১৫ কেজি, এমওপি ২১-২২ কেজি, টিএসপি ১১-১২ কেজি, জিপসাম ২২-২৩ কেজি, জিংক অক্সাইড ১/২-১ কেজি এবং বরিক এসিড সর্বোচ্চ দেড় কেজি দেয়া যেতে পারে। বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ৯ কেজি ইউরিয়া এবং অন্যান্য সারের সবটুকু জমি তৈরির শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ইউরিয়া দুই কিি-তে চারা গজানোর ২৫ ও ৫০ দিন পর শুধু সারি রসুনের মাঝামাঝি জায়গায় ছিটিয়ে উপরি প্রয়োগ করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এ সময়ে জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে। তবে মিশ্র হিপ কম্পোস্ট কিংবা কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের মাত্রা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
বীজ ব্যবস্থাপনাঃ ঢাকা-১, ঝিংগাবাদাম, ডিজি-২, বারি চীনাবাদাম-৫ এবং বারি চীনাবাদাম -৬ জাতের সাথে রসুনের প্রচলিত জাত নির্বাচন করা যেতে পারে। প্রতিবিঘা জমির জন্য ১৫ কেজি চীনাবাদম এবং ৬৭ কেজি রসুনের দরকার হবে। বপনের ক্ষেত্রে দুই সারি বাদামের মাঝে দুই সারি রসুনের চারা লাগাতে হবে। চীনাবাদামের সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০ সেঃ মিঃ এবং সারিতে ১৫ সেঃ মিঃ পরপর বীজ বপন করতে হবে। রসুনের এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ১৫ সেঃ মিঃ এবং সারিতে এক গাছ থেকে অন্য গাছের দূরত্ব ১০ সেঃ মিঃ রাখতে হবে। চারা লাগানোর সময় প্রতি গোছায় ১টি রসুনের কোয়া লাগাতে হবে। চীনাবাদাম রসুনের বীজ বপনের পর সারি মাটি দিয়ে ভালভাবে ঢেকে দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকলে সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে বৃষ্টিপাত খুব কম হলে ১ থেকে ২ বার সেচের দরকার হতে পারে। সেচ দেয়ার পর জোঁ আসার সাথে সাথে সারির মাটি কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে গাছের শেকড় নষ্ট না হয়।
ফসল সংগ্রহঃ রসুন ৮৫ থেকে ৯০ দিন বয়স হলে কর্তন করা যায়। রসুনের আকার বড় হলে সংগ্রহ করা উচিত। চীনাবাদাম পরিপক্ক হতে ১৪০ থেকে ১৫০ দিন সময় লাগে। চীনাবাদামের শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগই পরিপক্ক হলেই ফসল তুলতে হয়। ফসল তোলার পর চীনাবাদামের বীজ ভালভাবে রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা ৮ থেকে ১০% এর নীচে নামিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়।
উপরোক্ত নিয়মকানুন সঠিকভাবে পালন করলে হেক্টরপ্রতি একই সাথে দুই থেকে আড়াই টন রসুন এবং দেড় থেকে দুই টন চীনাবাদাম উৎপাদন করা সম্ভব।
রসুন ক্ষেতে সাধারণত রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয়। সে হিসেবে চীনাবাদামেও রোগের আক্রমণ কম হওয়ার কথা। তারপরও কোন রোগ বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হলে সাথে সাথে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিতে হবে।

- মাজহার মিলন

পুকুরে গলদা চিংড়ি ও মাছের মিশ্রচাষ


পুকুরে গলদা চিংড়ি ও মাছের মিশ্রচাষ

বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং সর্বোপরি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান সম্প্রসারিত করার সুযোগ আরও ব্যাপক। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তথা রফতানি বাণিজ্যে মৎস্য খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে চিংড়ি। কেননা গলদা চিংড়ি বর্তমানে দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। বিশ্বব্যাপী গলদা চিংড়ির ক্রমবর্ধমান চাহিদা, স্বাদ এবং মূল্যের কারণে বাংলাদেশে এর চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এদেশে ৩৬ প্রজাতির সামুদ্রিক ও ২৪ প্রজাতির মিঠা পানির চিংড়ি রয়েছে। লবণাক্ততার কারণে সামুদ্রিক চিংড়ি দেশের উপকূলীয় এলাকা ছাড়া অন্যত্র চাষ করা যায় না।
কিন্তু মিঠা পানির চিংড়ি দেশের সব জায়গায় চাষ করা সম্ভব, এমনকি অল্প লবণাক্ত পানিতেও মিঠা পানির চিংড়ি চাষ করা যায়। মিঠা পানির সর্ববৃহৎ চিংড়ি প্রজাতি হচ্ছে গলদা চিংড়ি। আমাদের দেশে আবহাওয়া ও পানির গুণগতমান গলদা চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। গলদা চিংড়ির চাষ বৃদ্ধি পেলে যেমন কর্মসংস্থান ও আমিষের যোগান বাড়বে তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার আয় ও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। কি-ু কার্প জাতীয় এবং অন্যান্য মাছ থেকে চিংড়ির জীবনযাপন ও চাষ পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় চিংড়ি চাষের জন্য কৃষকদের কারিগরি জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এজন্য অনেক মৎস্য চwিষ চিংড়ি চাষে সফলতা অর্জন করতে পারে না।

গলদা চিংড়ি ও মাছের মিশ্র চাষের সুবিধাঃ

১· গলদা চিংড়ি মিশ্রচাষে খাদ্য এবং বাসস্থানের জন্য মাছ ও চিংড়ি কেউ কারও প্রতিযোগিতা করে না।
২· পুকুরে প্রতিটি -রের খাদ্যের যথাযথ ব্যবহার হয়।
৩· চিংড়ির বাজার দর বেশি হওয়ায় তুলনামুলকভাবে কার্প জাতীয় মাছের সাথে মিশ্রচাষ অধিক লাভজনক।
৪· গলদা চিংড়ির মিশ্রচাষে প্লাংকটনের আধিক্যের জন্য পানির গুণগতমান নষ্ট হয় না।

মিশ্র চাষের জন্য পুকুর তৈরিঃ গলদা চিংড়ি চাষের জন্য পুকুর তৈরির সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে-
১· খামারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিষ্কাশন ও সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
২· পুকুর পাড়ের আবেষ্টনী বন্যার পানির সর্µোচ্চ উচ্চতা হতে প্রায় দেড় ফুট উঁচু হতে হবে, মাথা চওড়া এবং ঢাল এঁটেল অথবা দো-আঁশ হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কাঁকড়া, ইঁদুর বা অন্যান্য প্রাণী দ্বারা গর্ত করতে না পারে। ৩· সূর্যের আলো কমপক্ষে ৮ ঘন্টা থাকতে হবে। কেননা আলো ছাড়া পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় না। খোলামেলাভাবে বাতাস চলাচল না করলে অক্সিজেনের অভাব হবে এবং গলদা ও মাছের রোগ আক্রমণের আশংকা বেড়ে যাবে।
৪· পাড়ের নিচে বকচর থাকলে পাড় কম ভাঙ্গবে, বকচরের উপর খাদ্য দেয়া যাবে, বকচরের উপর দাঁড়িয়ে হররা ও জাল টানা সহজ হবে।
৫· পানির সুব্যবস্থার জন্য মটর কিংবা শেলো মেশিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬· পুকুরের তলদেশ সমান হলে জাল টানা ও মাছ ধরা সহজ হবে।
৭· জলাশয়ে পানির গভীরতা ৩ থেকে ৪ ফুট হবে এবং বেশি গভীর হলে উৎপাদন কমে যাবে। ৮·পানির আগমন ও নির্গমন মুখে অবশ্যই প্রতিবন্ধক স্থাপন করতে হবে।
৯· ভাল উৎপাদন পাওয়ার জন্য আগাছা পরিষ্কার করা আবশ্যক।
১০· অবাঞ্চিত কিছু যাতে না থাকে তার জন্য পুকুর শুকিয়ে এবং বিষ প্রয়োগ যেমন, রোটেনন পাউডার, চা বীজের খৈল, ক্যালসিয়াম কারবাইড ইত্যাদি ব্যবহার করে দূর করতে হবে।
১১· চুন প্রয়োগ করে মাটি ও পানির অম্লত্ব নিরপেক্ষ রাখতে হবে।
১২· পরিমিত মাত্রায় সার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
১৩· প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
১৪· পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করতে হবে।
১৫· খোলস বদলের সময় আশ্রয়স্থল স্থাপন করতে হবে।

গলদা চিংড়ি উৎপাদনে পানির সবচেয়ে উপযুক্ত গুণাগুণগুলো হলঃ তাপমাত্রা ২৫-৩১ ডিগ্রী সে· দ্রবীভূত অক্সিজেন ৫ পিপিএম তদুর্ধ্বê, লবণাক্ততা ০-৮ পিপিটি, সামগ্রিক ক্ষারত্ব ১০০-১৬০ পিপিএম, সমাগ্রিক খরতা ১০০ পিপিএম এর নিচে, আন-আয়োনাইজড এ্যামোনিয়া ০·০১ পিপিএম এর কম, হাইড্রোজেন সালফাইডের অনুপস্থিতি এবং লৌহ ১ পিপিএম এর কম।
গলদার খাদ্য উপাদানঃ গলদা চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির জন্য খাদ্যোপাদান এমনভাবে বাছাই করতে হবে যাতে সেগুলোতে আমিষ, স্নেহ, শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ প্রয়োজনীয় পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। গলদা চিংড়ির খাদ্য তৈরিতে সচরাচর ব্যবহারযোগ্য উপাদানগুলো হলঃ ফিশ মিল, রেশমকীট মিল, চিংড়ির গুঁড়া, শামুকের মাংস, কাঁকড়ার গুঁড়া, সয়াবিন খৈল, সরিষার খৈল, ভুট্রা, চালের কুঁড়া, গমের ভুষি, আটা, চিটাগুড়, ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ ইত্যাদি।
পুকুরে গলদা চিংড়ি ও মাছের মিশ্রচাষ সম্পর্কিত পুি-কায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক বলেন, রুই জাতীয় ও অন্যান্য মাছ থেকে চিংড়ির জীবনযাপন ও চাষ পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় চিংড়ি চাষে চাষিদের পর্যাপ্ত কারিগরি জ্ঞানের অভাবে অনেকে চিংড়ি চাষে লাভবান হতে পারে না। ফলে তারা চিংড়ি চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তাই পুকুরে গলদা ও মাছের মিশ্রচাষ সম্পর্কিত লেখাটি মৎস্য চাষিভাইদের সহযোগী হবে বলে আশা করি এবং এভাবে পুকুরে গলদা চিংড়ি ও মাছের মিশ্রচাষ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।

- মোঃ শাহীন আলম, বাকৃবি, ময়মনসিংহ

কোরবাণীর ঈদ, শাইখ সিরাজ


কোরবাণীর ঈদ


আর একদিন পরেই কোরবাণীর ঈদ। ত্যাগের মহিমায় উজ্জিবিত হয়ে গোটা মুসলিম বিশ্ব এই ঈদের প্রধান কর্মসূচি হিসেবে পশু কোরবাণী করবে। প্রতিবছরের মত এবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমে উঠেছে পশুর হাট। কোরবাণী ঈদকে সামনে রেখে কৃষি ও শিল্প অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে পশু কেনাবেচার। একদিকে কৃষকের ঘরে লালন-পালন করা গরু, ছাগল ইত্যাদি প্রাণী, অন্যদিকে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র খামারে লালন-পালন করা গরু ছাগল। সব মিলিয়ে প্রাি-ক পর্যায়ে এক লাভজনক বিকিকিনির সুবিধা নিয়ে আসে এই ঈদ।

পশু হাটের মৌসুম। দেশের পশুসম্পদ খাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একদিকে পশু, অন্যদিকে পশুর চামড়া। একটির সহউৎপাদন অন্যটি। প্রাি-ক কৃষক ও খামারিদের ঘরে নগদ কিছু টাকা আসে, অন্যদিকে বড় ধরণের লাভালাভের হিসাব কষেন চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এর সঙ্গে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের সম্পর্ক রয়েছে।

যা হোক, কোরবাণীর পশু হাট কিংবা পশুর সমারোহে যে বিষয়টি অনাকাঙ্খিত এক খবর হয়ে দেশব্যাপী চাউর হয়েছে তা হচ্ছে নিষিদ্ধ কিছু ওষুধ প্রয়োগ করে বিভিন্ন স্থানে গরু মোটাতাজাকরণেরর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিষয়টি শুধু অনভিপ্রেতই নয়, আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক এক হুমকি। বিভিন্ন মাধ্যমের রিপোর্টে জানা গেছে, ভেরিএকটিন নামের ভারতীয় একটি নিষিদ্ধ ওষুধ খাওয়ানোর ফলে এক মাসের মধ্যেই গরুর ওজন ৩০ থেকে ৪০ কেজি পর্য- বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিষিদ্ধ ওষুধ খাওয়ানোর প্রতিক্রিয়া হিসেবে গরু-মহিষের যকৃৎ ও বৃক্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্র- হয়; এগুলোতে জমে যায় পানি। ওই গরুর মাংস মানবদেহের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ। গরু-মহিষকে পর্যাপ্ত ও নিয়মমাফিক খাবার দিয়ে অল্পদিনেই মোটাতাজাকরণ করা সম্ভব। কিন্তু কম খরচে বেশি মুনাফা লাভের আশায় যারা এই কাজ করছে তারা বড় ধরণের অন্যায় করছে, তাদের বিরুদ্ধে শাি-মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের যৌক্তিকতা রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন এলাকার গরু খামারির সঙ্গে কথা বলেছি, যারা নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করছে এবং যারা করছে না, এই দু’পক্ষের সঙ্গেই কথা বলে জেনেছি, নিষিদ্ধ ওষুধগুলোর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে কোনরকম অবগত করা হয়নি, সচেতন করা হয়নি। যে কারণে না বুঝেই খামারিরা ক্ষতিকর কাজটি করে চলেছে। এবারই প্রথম খবরটি বড় আকারে এসেছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কিংবা উদ্বুদ্ধ করার মত সময় এবার আর নেই। ধরে নেয়া যাক, ক্ষতি যা হবার হয়েই গেছে। কিন্তু পরবর্তীতে এ ধরণের প্রবণতা যাতে রোধ করা যায়, সে ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে পশুখাদ্যে বিভিন্ন ভেজাল ও নিম্নমানের ক্ষতিকারক দ্রব্য মেশানোর খবরও আমরা পেয়েছি। বাজারে যেসব পশুখাদ্য পাওয়া যায় এর মধ্যে এন্টিবায়োটিক গ্রোথ হরমোন, হাড়ের গুঁড়া, শক্তিবর্ধক নিষিদ্ধ নানা কীটনাশক মেশানো হচ্ছে। এসব খাদ্য আপাতদৃষ্টিকে পশুর শরীরকে ভারী করে ঠিকই, কিন্তু পশুর শরীরের জন্য তা যেমন ক্ষতি ডেকে আনছে, একইভাবে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে জনস্বাস্থ্যে। ভেজাল মাংসের বিষক্রিয়ায় নানান রোগে আক্রা- হচ্ছে মানুষ। এমনকি শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছে বলেও বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে দেখেছি আমরা।

কৃষির অন্যতম উপখাত হিসেবে পশুসম্পদ পালনের বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু দেশব্যাপী পশুখাদ্যের সংকট দিনের পর বাড়ছে একথা বলাই বাহুল্য। একদিকে পশুখাদ্যের ভেজালকারী অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, অন্যদিকে দেশে নিরাপদ পশুখাদ্যের নিশ্চয়তাও সৃষ্টি করতে হবে। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, আমিষের অন্যতম প্রধানতম উৎস্য হচ্ছে পশু পাখির মাংস, ও মাছ। এগুলোতে ভেজালের মিশ্রণ কোনভাবেই মানার মতো নয়।


- শাইখ সিরাজ
সবার কোরবাণীর মাংস হোক নিরাপদ। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।

সংসদ নির্বাচনে কৃষকদের কী লাভ হবে?


সংসদ নির্বাচনে কৃষকদের কী লাভ হবে?


১৯৭০ সাল। কাগজ, চিনির দাম কমবে এমনি এক আশায় কৃষককে বলা হল নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য। কৃষক নৌকায় ভোট দিল। নৌকা জিতল। এরপর স্বাধীনতা যুদ্ধের সূত্রপাত হল। কৃষক স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করল। দেশ স্বাধীন হল। অনেক অনেক দিন আগের কথা। তবু মনে হয় এইতো সেদিন।
আজ ২০০৮ সাল। স্বাধীনতার ঠিক ৩৮ বছর পর আমাদের সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশে টানটান উত্তেজনা নির্বাচনকে নিয়ে। আর এমনটা হওয়ারই কথা। সংসদহীন দেশে সংসদ আসবে। আনন্দে ভরবে সবার মন। কিন্তু আমি একজন কৃষক হিসেবে কী পাব তা কিন্তু আমার জানা নেই। কারণ আমার বাবা, দাদা ১৯৭০ সালে ভোট দিয়েছিলেন স-ায় চিনি পাওয়ার আশায়। স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর অন্যান্য জিনিসের তুলনায় চিনি স-া তা আমি হলফ করে বলতে পারি। কিন্তু চিনি খেতে যে চাল, ময়দা লাগে তার দাম আজ আকাশ ছোঁয়া। চাল, ময়দা উৎপাদন করতে যে সার লাগে তা কৃষকের নাগালের বাইরে। বলতে গেলে দুষ্প্রাপ্য। আর কাগজ? কাগজ দিয়ে কি করব? চাষার ছেলেমেয়েরাতো দেশের ভাল স্কুল, কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত। আজ নয়, অনেকদিন আগের থেকেই। দিনদিন শহর ও গ্রামের শিক্ষার মধ্যে তৈরি হচ্ছে উঁচু প্রাচীর। এখন বড় ধরনের চাকরিতে অনেক গ্রামের ছেলেমেয়ে পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে গ্রামের একটি ছেলেমেয়েও উচ্চ পর্যায়ের চাকরিতে পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না। কৃষকের ঘাম আর রক্তের উপর গড়ে উঠেছে যে নগর সভ্যতা, সেই নগর সভ্যতায় কৃষক আজ উপেক্ষিত। কৃষকের ভাগ্য আজ নগর সভ্যতার বেড়াজালে বন্দি। নগর সভ্যতার পদতলে বারবার আছড়ে পড়ছে কৃষকদের বেঁচে থাকার করুণ আকুতি। স্বাধীনতার পর বহু জাতীয় সংসদ নির্বাচন এসেছে। কৃষকদের বারবার স্বপ্ন দেখানো হয়েছে, কৃষকেরা আশায় বুক বেঁধেছে। কিন্তু কৃষকেরা কী পেয়েছে? আজকে কৃষকদের অবস্থা কেমন, কোন রাজনৈতিক দল খবর রাখে? রাখে না।

সারের দাম আকাশ ছোঁয়ার কারণে এবার আমন মৌসুমে কৃষকেরা সার ছাড়া আবাদ করেছে। যার ফলে ফসল কম হচ্ছে। খবরটা রাখেন কোন রাজনৈতিক নেতা, কোন রাজনৈতিক দল? এগুলোর খবর তাদের দরকার নেই। দরকার আছে নির্বাচনের। যে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল হয়। ফলে একটা বিশেষ শ্রেণী লাভবান হয়। স্বাধীনতার পরে আমরা অনেক শুনেছি- কৃষকই জাতির মেরুদণ্ড। কই, কৃষকের ছেলেমেয়েরা যখন উচ্চ শিক্ষার জন্য ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না, তখন তো আপনারা একবারও বলেন না যারা আমাদের মেরুদণ্ড (কৃষক/চাষি) তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা কোটা থাকতে হবে। শিক্ষাই আলো, শিক্ষার প্রতিযোগিতায় আমরা যারা চাষা, তাদের ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে পড়ছে। গ্রাম অঞ্চলে শিক্ষায় সুযোগ-সুবিধার অভাবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, প্রতিটি চাকরিরক্ষেত্রে চাষার ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা কোটা হওয়া দরকার। এটা কৃষকদের প্রাণের দাবি। মানবতার দাবি।

যারা খাদ্য উৎপাদন করে দেশ বাঁচাবে তাদের স-ানেরা থাকবে অবহেলিত তা কখনও হতে পারে না। আমরা যারা চাষা তাদের প্রাণের দাবি- আমরা যেমন দেশ উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখছি, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাও আমাদের দিতে হবে। অত্য- আক্ষেপের সাথে বলছি, আমরা যখন সারের জন্য আবাদ করতে পারছি না, সেই সংকটময় অবস্থাতে কোন কোন রাজনৈতিক দল মুখ খুলে উচ্চকণ্ঠে বলেনি, সবার আগে কৃষকদের সারের সমস্যার সামাধান করতে হবে। হে শিক্ষিত সুধী, সমাজ বসবাসরত চাষারাতো তাদের নিজেদের জন্যই ফসল ফলাই না। আমাদের ফলানো ফসল খেয়ে আপনারাও বাঁচেন। আমাদের সারের সংকট নিজেদের সংকট হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ করছি। স্বাধীনতার পরে যারা চাকরিজীবি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সবারই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু চাষাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি, বরং কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে। উবশী, হাইব্রিড ফসল বীজের সংকট হয়েছে, সার দুষ্প্রাপ্য, চলছে প্রযুক্তি সংকট। কৃষকেরা প্রয়োজনীয় তথ্য ও জ্ঞানের অভাবে যথেচ্ছা কীটনাশক ব্যবহার করে নিজের আর্থিক, শারীরিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, তেমনি বিষক্রিয়াযুক্ত সবজি খেয়ে সমাজের সর্ব-রের মানুষও নানা রোগে আক্রা- হচ্ছে। যারা ধনী, চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ তাদের রোগ হলে তারা চিকিৎসা করাতে পারে। তাদের সে আর্থিক সঙ্গতি আছে। কিন্তু কৃষকের রোগ হলে কোথায় যাবে? কে আছে দরদী পাশে দাঁড়ানোর মত? চিকিৎসাইবা করবে কি দিয়ে কৃষক? টাকা কই তাদের? যাদের নুন আনতে পা-া ফুরায় তাদের আবার চিকিৎসা! তাই আমরা যারা চাষা, তাদের প্রাণের দাবি, নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার করতে হবে, নির্বাচনে জিতলে সারসহ সব কৃষি উপকরণের সংকট দূর করতে হবে।

প্রযুক্তি সম্প্রসারণে, গ্রাম ও শহরের শিক্ষার বৈষম্য নিরসনে, উৎপাদিত পণ্যের ন্যাযমূল্য পাওয়ার জন্য কাজ করবেন। এগুলো বা-বায়িত হলে সংসদ নির্বাচন কৃষকদের জন্য সুফল বয়ে আনবে। না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃষকদের কোন লাভ হবে না। আমি আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো উপরে উল্লেখিত দাবিগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কৃষকদের ভাগ্য ফিরানোর জন্য কাজ করবেন। আমি স্বপ্ন দেখি এমন একটি সোনালি দিনের।


- মোঃ রফিকুল ইসলাম
কোরবাণী ও নিরাপদ পশুর মাংস

আঞ্চলিক কৃষির বিকল্প নেই



আঞ্চলিক কৃষির বিকল্প নেই


২০০৮ সালের শুরুতেই জানা গেল, পৃথিবীর ৩৩টি দেশে খাদ্যের তীব্র সংকট চলছে। তারমধ্যে বাংলাদেশের নামও ছিল। দেশ স্বাধীনের পরে গবেষণাধর্মী উন্নত জাতের ধান আবিষ্কার ও তাতে উন্নত সার-কীটনাশকের ব্যবহার করে মাঠে মাঠে সোনালি ধানের উৎপাদন শুরু করা হয়। বর্তমান ১৫ কোটি মানুষের জন্য যে ৩ কোটি মেঃ টন ফসলের উৎপাদন করা হচ্ছে তাতেও আমরা আমাদের অভাব দূর করতে পারছি না। কেননা প্রতি বছর প্রায় ২৫ লক্ষ বাড়তি মানুষ আর উৎপাদিত জমি হারাচ্ছি। যে জন্য যতই উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল আসুক না কেন অভাব আমাদের সাথের সাথী। যখন আমাদের দেশে ২০ কোটি মানুষের বাস হবে তখন খাদ্যের প্রয়োজন হবে ৩·৬৪ কোটি মেঃ টন। এখন প্রতি হেক্টরে ধানের উৎপাদন ফলন ৩·৩ থেকে ৪·০ মেঃ টন, বাড়তি এ মানুষের কারণে ওই পরিমাণ জমিতে খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজন হবে ৪·৪ থেকে ৫·৩ মেঃ টন। অথচ প্রতি বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য কারণে আবাদি জমি কমে আসছে। সে জন্য দেশের নিশ্চিত খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি অঞ্চল ভিত্তিক অনুকূল আবহাওয়ায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে।

দিনাজপুর ধান উৎপাদনের স্বর্গভূমি। সেখানে প্রতি ইঞ্চি জমির ব্যবহার করে ধান উৎপাদন করা যায়। যশোর ও নরসিংদিতে সবজি-কলা ভাল হয়। এখানে সম্পূর্ণ জমির ব্যবহার করে এই ফসল বাড়াতে হবে। কুমিল্ল্লায় এক জমিতে বছরে অনেকবার ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি জমিতে বছরে ২টি ফসল ফলানো সম্ভব। অথচ এখানে যে বিশাল কৃষিক্ষেত্র অনুউৎপাদন অবস্থায় থাকে, তা গরিব এ জাতির জন্য অভিশাপ। এ অঞ্চলে সাথী ফসল ও আইল ফসল চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে মঙ্গাপ্রবণ এলাকাতে কৃষি জমির পরিপূর্ণ ব্যবহার করলে অর্থনীতিতে তা আর্শীবাদ হয়ে কাজ করবে। মুন্সিগঞ্জ জেলাতে উর্বর যে জমি রয়েছে তাতে আলু উৎপাদনের পরেই বিনা চাষে ভুট্টোর আবাদ করলে ভাল হয়। দক্ষিণাঞ্চলে রয়েছে আমাদের দেশের তরল সম্পদের সমারহ। জল ও মাটির লবণাক্ততাকে সাথে নিয়ে এখানকার কৃষকেরা যে চাষাবাদ পদ্ধতির নিমন্ত্রণ জানিয়েছে, তাকে আরও বি-ৃতি ঘটানোর জন্য পদক্ষেপ নেয়া না গেলে দেশের সম্পদ ব্যবহারে পরিপূর্ণতা আসবে না। পার্বত্য অঞ্চল আমাদের দেশের মোট জমির শতকরা ১২ ভাগ নিয়ে গঠিত। গত বোরো মৌসুমে এখানকার সমতল ভূমিতে বাঙালিরা অনেক ধান উৎপাদন করে। মালয়েশিয়াতে পাহাড়ে পাম চাষ করে বিশ্ব অর্থনীতিতে দেশটি অবদান রাখছে। আমরাও সেটা অনুসরণ করতে পারি।

আবহাওয়া, মাটির গুণাগুণ, তাপমাত্রাসহ ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণের কথা বিবেচনা করে অঞ্চল ভিত্তিক কোন ফসল চাষ করতে হবে তা যেমন নির্ণয় করা দরকার, আবার ভাল ফসল উৎপাদন করতে দরকার উন্নত জাতের বীজ। টিস্যু কালচার পদ্ধতির মাধ্যমে হাইব্রিড বীজের উৎপাদন ও সরবরাহ করা দরকার। শহর ও গ্রামের সম- ফাঁকা জমি এমনকি অফিস-আদালতসহ প্রতিটি বাড়ির আঙিনাতে চাষাবাদ কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

আমাদের কৃষি ও কৃষিজ উপখাতগুলো ক্রমসংকুচিত হয়ে পড়েছে। অধিক জনসংখ্যার জন্য আজ কৃষি জমি বেহাত হচ্ছে, বন ও চাষের জমি উজাড় হচ্ছে, কীট-পতঙ্গ ও জলজ প্রাণীর বসতি ধ্বংস হচ্ছে। আর অবক্ষয়ের কারণে দেশের মাটি ও পানির শক্তি হারিয়ে গিয়ে জীববৈচিত্র নিঃশেষিত হচ্ছে। অর্থাৎ আমরা এখন স্বীকার করতে পারি পরিবর্তিত যে পরিবেশ এই দেশকে ঘিরে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমাদের কৃষিক্ষেত্র প্রভাবিত হচ্ছে। জমি যেমন সংকুচিত হয়ে পড়ার কারণে কৃষিজ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এজন্য পরিবেশকে স্বাভাবিক রাখতে অঞ্চল ভিত্তিক এখনই কি করণীয় তা উপস্থাপন করে, সে আলোকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই জরুরি। পরিবেশ ছাড়াও কৃষির উৎপাদনের সাথে জড়িত প্রত্যেকটি পর্যায়কে নিয়ে সমম্বিত নীতি বা কৌশল অবলম্বন করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। ২০০৭ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন শৈত-প্রবাহে ও মঙ্গাপ্রবণ এলাকায় ধানসহ কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খরায় দেশের ৫ হাজার মেঃ টন ধান উৎপাদন কম হয়েছে। কালবৈশাখী ঝড়ে ৫ হাজার হেঃ জমির ফসল, ঘরবাড়ি, বৃক্ষ ধ্বংস হয়েছে। বন্যায় ১·৬৪ লাখ একর জমির ফসল শেষ হয়ে গেছে। মৎস্য সম্পদ ও ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি, ক্ষেতের ফসল, মৎস্য ও পশু সম্পদের হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। ভৌত অবকাঠামো বিলিন হয়ে গেছে। যে ক্ষতি আগামী ৪০ বছরেও পুষিয়ে নেওয়া যাবে না।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের এতসব কারণের পরেও আমাদের দেশে কৃষিতে যে ফসল উৎপাদন হয়, তা শুধু মাটি, আবহাওয়া, বীজ এবং কৃষকের নিজস্ব ধ্যান-ধরণার গুণে। প্রযুক্তিগত জ্ঞান অ্বেষণ করে এবং তথ্যগত আদান-প্রদানের মাধ্যমে কৃষিকে আরও সম্প্রসারণ করা সহজ হয়।

১৯৯৭ সালে আমাদের দেশে “কৃষি সম্প্রসারণ নীতি” চালু করা হয়েছে। যার লক্ষ হচ্ছে দেশের সকল সেবাদানকারী সংস্থা সকল কৃষককে তার চাহিদা অনুযায়ী সমন্বিত কৃষি সম্প্রসারণে সেবা দিতে হবে। ইতোপূর্বে এ দেশে “একটি বাড়ি একটি খামার” শ্লোগানকে দিয়ে কৃষি আন্দোলন শুরু করা হলেও তার বা-বায়ন তেমন এগোয়নি। দীর্ঘ মেয়াদে দেশে কৃষি উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ না করার ফলে আমাদের এ খাতে কাংখিত অবদান রাখতে পারছে না। আমরা যখন আঞ্চলিক কৃষি উন্নয়নের কথা বলছি, তখন থাইল্যান্ডে “একটি গ্রামে একটি পণ্য” নামে সরকারের সফল কর্মসূচি বা-বায়ন করছে, অর্থাৎ দেশের জনগণ ভিন্ন ভিন্ন স্থান হতে প্রয়োজনীয় সকল ফসল উৎপাদন করে তা ভোগ করতে পারে। তদ্রূপ বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, আবহাওয়াসহ অঞ্চল ভিত্তিক সহনশীল পরিবেশ বিবেচনা করে ফসল নির্বাচন করতে হবে। এভাবে প্রয়োজনীয় সকল পণ্য উৎপাদন করতে এলাকা বিভাজন ও চিহ্নিত করা এখন খুবই জরুরি, যাতে করে কোন উৎপাদনের অভাবে আমাদের অন্যের প্রতি নির্ভর করতে না হয়।

- গৌতম কুমার রায়, কুষ্টিয়া

বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০০৮

নদী ও উন্নয়ন


নদী ও উন্নয়ন

নদী আমাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত। আমাদের সমগ্র জীবন ব্যবস্থায়, অর্থনীতি, বাণিজ্য, যোগাযোগে অপ্রতিরোধ্য প্রভাব থাকা সত্ত্বেও উন্নয়ন নদীকেন্দ্রিক হয়নি। অনেক ড়্গেত্রেই নদীবিমুখ হয়েছে। উন্নয়ন চিন্তôায় আমরা ক্রমে ক্রমে নদী ও প্রকৃতি, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, মানুষের চাহিদা থেকে সরে ভিন্নমুখী একটি শিকড়হীন উন্নয়ন পরিকল্পনায় সময়ড়্গেপণ করছি।পঞ্চাশের দশকে কলম্বো পস্ন্যানের মাধ্যমে উন্নয়নের মডেল উপস্থাপন করা হয়। উন্নয়ন হয়ে ওঠে শিল্পায়ন, শহরায়নের সমার্থক। উন্নয়নের হাওয়া এসে লাগলো অনুন্নত এই জাতিকে উন্নত করতে এবং পশ্চিমাকরণই ছিল প্রকৃত উদ্দেশ্য। সেই সূত্রকেই ধবন্তôরী বলে অন্ধভাবে মেনে নেয়া হয়। শিল্পায়ন ও শহরায়নের প্রবল ধাক্কায় উন্নয়ন শহরমুখী এবং রাতারাতি শিল্প স্থাপন কেন্দ্রিক হয়ে পড়লো। উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু গ্রাম, চালিকাশক্তির মূলভিত্তি কৃষি সেইসঙ্গে নদী ও নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু এসব উন্নয়ন তালিকা থেকে ছিটকে পড়লো। শিল্প স্থাপন, শহরায়ন এবং প্রযুক্তিগত অপরিকল্পিত উন্নয়ন বোঝায় পরিণত হয়। কথিত উন্নয়ন পরিকল্পনা ধ্বংস করে দিলো নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, স্থানীয় শিল্প। আমাদের ধ্যান-ধারণায় যে বিষয়গুলো প্রবলভাবে উপস্থিত সেগুলো একেবারেই বিস্মৃত হয়ে গেল।উপেড়্গা করা হল হাজার বছরের নৌ-যোগাযোগকে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রধান হয়ে উঠলো সড়ক যোগাযোগ। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে তৈরি করা হলো ব্রিজ-কালভার্ট। নদীর স্বাভাবিক গতি, সহজভাবে নৌ-চলাচল, নদীকে বাঁচিয়ে রেখে সড়ক যোগাযোগের পরিকল্পনা না করায় নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্তô হয়। ফলে নদীগুলো ভরাট হয়ে যায়। নদী শাসন, নদী সংরড়্গণ, নদী উন্নয়নের কোনোকিছুতেই না গিয়ে নদী হত্যা করা হলো।ষাটের দশকে অধিক ‘খাদ্য উৎপাদন’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে অনেক স্থানে তৈরি করা হয় বাঁধ, পোল্ডার ও এমব্যাংকমেন্ট। অবকাঠামো নির্মাণের প্রথম এক দশকে অধিক ফসল উৎপাদন হলেও দশক যেতে না যেতে প্রকল্পভুক্ত এলাকায় তৈরি হতে থাকে জলবদ্ধতা।ষাটের দশকে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাÐের নমুনা উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্প (কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট প্রজেক্ট সংড়্গেপে সিইপি)। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয় ২ হাজার মাইল বেড়িবাঁধ, ৯২টি পোল্ডার ও ৭৮০টি সস্নুইস গেট। দড়্গিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় এসব স্থাপনা মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এসব প্রকল্পে দড়্গিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এলাকার পরিবেশ ও নদীগুলোর অবস্থানকে গুরম্নত্ব দেয়া হয়নি। পোল্ডার নির্মাণের আগে জনগণের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল নৌপথ আর বাহন ছিল নৌকা। কিন্তু পোল্ডার নির্মাণের ফলে কাঁচা বেড়িবাঁধগুলোই হাঁটা রাস্তôা হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। পরে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ হতে থাকে রাস্তôা-কালভার্ট। ফলে নদী যেমন শুকিয়ে গেছে তেমনি শুরম্ন হয়েছে জলাবদ্ধতা। এই অঞ্চলের ১২টি নদীর মধ্যে ২টি কোনোমতে টিকে আছে। বাকি নদীগুলো শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। শীতকালে নদীগুলোকে চেনাই মুশকিল। শ্রীহরি, মুক্তেশ্বরী, ভদ্রা, আপার ভদ্রা, কপোতাড়্গ, চিত্রা, ভৈরব, টেকা, ভবদহ, বেত্রাবতী, হামকুড়াসহ বেশিরভাগ নদী এখন ধুঁ ধুঁ মাঠ বা শীর্ণ খালের দশা পেয়েছে। আংশিক টিকে থাকা ভৈরব ও কপোতাড়্গ নদীর তলদেশ যেভাবে ভরাট হচ্ছে তাতে আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে এ দুটি নদীও পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাÐে দেশের বেশিরভাগ নদীই হারিয়ে যাচ্ছে। পলি জমে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ১৭টি নদী। আরো ৮টি নদী অল্প সময়ের মধ্যে মরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাম্প্রতিক জরিপে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে দেশের ১৭টি নদী পুরোপুরি মরে গেছে। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ দেশের উত্তর ও দড়্গিণাঞ্চলের। খরস্রোতা নদীগুলো এখন তাদের কঙ্কাল বয়ে চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে, মৃত নদীগুলো হচ্ছে- কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা, রাজবাড়ী-ফরিদপুরের ভুবনেশ্বর, হবিগঞ্জের বিবিয়ানা ও শাখা বরাক, শরীয়তপুরের পালঅং, কুমিলস্না ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বুড়ি নদী, যশোরের হরিহর ও মুক্তেশ্বরী, খুলনার হামকুড়া, সাতড়্গীরার মরিচাপ, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর বামনী, বগুড়ার মানস, নাটোর-পাবনার বড়াল ও চিকনি, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা, বাগেরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব।পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় দেশের আরো ৮টি নদী মরে যাওয়ার পথে। এগুলো হচ্ছে- পঞ্চগড়, নীলফামারী, রংপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া, পাবনা, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জের ইছামতি, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, পিরোজপুরের কালিগঙ্গা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, মাদারীপুরের কুমার, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহের চিত্রা, যশোর ও খুলনার ভদ্রা, নেত্রকোনার সোমেশ্বরী এবং নড়াইলের নবগঙ্গা।সভ্যতার বিকাশ ও উন্নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যোগাযোগহীন উন্নয়ন দুরূহ বিষয়। যোগাযোগের উন্নয়ন মানে অন্য একটি মাধ্যমের সম্ভাবনাকে নষ্ট করা নয়। নৌ, রেল ও সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে কীভাবে একটি সমন্বিত যোগাযোগ গড়ে তোলা যায়, কীভাবে মাধ্যমগুলো ব্যবহারে সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া যায় তা আমাদের উন্নয়ন কৌশল স্থান লাভ করেনি। উন্নয়ন তাই পরবর্তী সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং সুফলতার পরিবর্তে নতুন সমস্যার জন্ম দিয়েছে। উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে গিয়েও দেখা গেছে শুধু ভাটার টান।

সরিষার চাষ পদ্ধতি

সরিষার চাষ পদ্ধতি

জমি ও মাটিঃ এঁটেল দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ এবং দো-আঁশ মাটিতে সফল ও অগ্রাণী জাতের সরিষা চাষ করা যায়। জমিতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।বীজ বপনের সময়ঃ অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের মধ্যে বীজ বপন শেষ করতে হবে। জমি তৈরিঃ জমিতে জো আসার পর মাটির প্রকারভেদে ৪-৬টি চাষ ও মই দিয়ে বীজ বপন করতে হবে। মাটিতে রসের অভাব হলে বীজ বপনের আগে হালকা সেচ দিতে হবে। সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ ছকে দেয়া হলো।
এতে ফলন ২৫০০ কেজি পর্যন্তô পাওয়া যেতে পারে। সার প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে পরিচর্যাও অনুসরণ করতে হবে। সারের নাম সারের পরিমাণ (কেজি/হেক্টর)ইউরিয়া ২৬৫-২৮০ কেজিটিএসপি ১৭৫-১৮০ কেজিমিউরেট অব পটাশ ৫০-৬৫ কেজিজিপসাম ২৫০-২৯০ কেজিসরিষার জমিতে সালফার (জিপসাম) প্রয়োগ উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্তô বাড়াতে পারে। সার প্রয়োগ ও সেচ অনুক্রম , কেজি/হেক্টরসারের নাম সার প্রয়োগের সময় জমি তৈরি ৩৫-৪০ দিন বয়স ৪০-৬০ দিন বয়সজৈব সার ৭-৮ইউরিয়া ১৩৫ ১৩৫টিএসপি ১৭৫এমপি ৬০-৭০জিপসাম ১২৫-১৫০ঘাটতি দেখা দিলে বোরাক্স ৫ (স্প্রে) ৫ (স্প্রে)ডলোচুন ৩০০ মলিবডেনাম ১ (স্প্রে) (স্প্রে)পানি সেচ প্রথমবার দ্বিতীয়বারএকবার
১· অর্ধেক পরিমাণ ইউরিয়া এবং সব টিএসপি, এমপি ও জিপসাম সার জমি তৈরির সময় মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
২· বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিন পর যখন গাছে দুই-চারটি করে ফুল আসা শুরম্ন হয় তখন ছিটিয়ে দিতে হবে।
৩· ভোরে গাছের পাতায় কুয়াশা থাকে এবং সার গাছের পাতায় লেগে পাতা পুড়ে যেতে পারে, সে জন্য বিকালে সার ছিটাতে হবে।বপন বীজ পদ্ধতিবীজ ছিটিয়ে বা সারিতে বপন করা যায়। সারিতে বপন করলে লাঙলের নালা কেটে গর্ত করে গর্তে বীজ ফেলে তা ভালোভাবে মাটিতে ঢেকে দিতে হবে।সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেন্টিমিনার। সারিতে চারার দূরত্ব ৪-৫ সেন্টিমিটার রাখতে হবে। ছিটিয়ে বপন করলে ভালোভাবে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে। গাছ বেশি ঘন হলে গজানোর ৭-১০ দিন পর চারা পাতলা করে দিতে হবে। চারা ভালোভাবে গজানোর জন্য ৩-৪ সেন্টিমিটার মাটির নিচে বীজ বোনা দরকার। বীজের পরিমাণছিটিয়ে বপন ৭·০-৮·০ কেজি/হেক্টরসারিতে বপন ৪-৬ কেজি/হেক্টরজমিতে আগাছা দেখা দিলে বীজ গজানোর ২০-২৫ দিনের মধ্যে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। পানি সেচচারা গজানোর ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে একটি সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তর অঞ্চলে বীজ বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে একটি এবং তারও ২০-২৫ দিন পর আর একটি সেচের প্রয়োজন হয়।রোগ দমনবিনা সরিষার বীজ ব্যাভিস্টিন (২·৫ গ্রাম/কেজি) বা বেনলেট (১·৫ গ্রাম/কেজি) দিয়ে শোধন করতে হবে। অল্টারনারিয়া রোগের আক্রমণ বেশি দেখা দিলে ডায়াথেন এম ৪৫ বা রোভরাল স্প্রে করতে হবে। ফুল ধরা শেষ হলে ১৫ দিন পর পর দুবার স্প্রে করলেই হবে। পোকা দমনজাব পোকার আক্রমণ হলে সরিষার ফলন কমে যায়।ফুলের কুঁড়ি আসা শুরম্ন হলে এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এ ড়্গেত্রে ডাইমেক্রন ১০০ ইসি বা ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রভৃতি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।মৌমাছি সরিষা গাছের পরাগায়নে সাহায্য করে এবং এতে ফলন বৃদ্ধি পায়।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তô সরিষা ফুলে অধিক সংখ্যক মৌমাছি মধু সংগ্রহের জন্য বিচরণ করে। তাই বিকালে যখন ড়্গেতে মৌমাছি থাকে না তখন কীটনাশক ছিটাতে হবে।তেলবীজ তথা সরিষার কীটনাশক ও রোগনাশক প্রয়োগের বিস্তôারিত বিবরণ ভিন্ন অধ্যায়ে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে সুনির্দিষ্ট কীটনাশক নির্বাচন করে এর প্রয়োগ পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণ চাষ পদ্ধতিতেও রোগ-পোকা দমনের বিবরণ দেয়া হয়েছে। ফসল সংগ্রহ, মাড়াই ও সংরড়্গণসরিষা গাছের ফল তথা সিলিকুয়া হলুদ রঙের হলে ফসল তুলতে হবে। মাটি নরম থাকলে সরাসরি গাছের গোড়া ধরে টেনে শিকড়সহ তোলা যায়। এ জাতটির বৈশিষ্ট্য হলো টেনে তুললেও বীজ ঝরে পড়ে না।
অন্যথায় কাঁচি দিয়ে মাটির ঠিক উপরিভাগে গাছের গোড়া কেটে দিতে হবে। তারপর ভালোভাবে শুকিয়ে বীজ সংগ্রহ করে ৪-৫ দিন রোদে শুকিয়ে সংরড়্গণ করতে হবে। ১০· ফলনএ জাতটির গড় ফলন ২·৫ টনের মতো। বীজ তেলের পরিমাণও বেশি।

রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০০৮

উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু কচু বিলাসী



উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু কচু বিলাসী



বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত ১৮/২০টি জার্মাপ্লাজম হতে গবেষণার মাধ্যমে বিলাসী নামে একটি উফশী জাত উদ্‌ভাবন করা হয় এবং ১৯৮৮ অনুমোদন করা হয় জাতটি। বিলাসী গুণে উৎকৃষ্ট ও উচ্চ ফলনশীল। বিলাসী মুখী কচুর জাত।

মুখী কচু একটি সুস্বাদু সবজি। এ সবজি খরিফ মৌসুমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই এর চাষ হয়। মুখী কচু বাংলাদেশে গুড়া কচু, কচু, ছড়া কচু, দুলি কচু, বিন্নি কচু ইত্যাদি নামেও পরিচিত। মুখীর ছড়া বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মুখী কচুর গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে গেলে এ কচু তুলতে হয়। এতে ৬ থেকে ৭ মাস সময় লাগে।

বিলাসী জাতের গাছ সবুজ, খাড়া, মাঝারি লম্বা, এর মুখী খুব মসৃণ, ডিম্বাকৃতির হয়। সিদ্ধ মুখী নরম ও সুস্বাদু। সিদ্ধ করলে মুখী সমানভাবে সিদ্ধ হয় ও গলে যায়।

বিলাসীর জীবনকাল ২১০ থেকে ২৮০ দিনের। সাধারণ অবস্থায় এর ফলন হেক্টরপ্রতি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ৪০ টন পর্য- ফলন হয়ে থাকে।

দো-আঁশ মাটি এই জাতের জন্য উত্তম।

রোপণের সময়ঃ মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফালগুন। মধ্য চৈত্র থেকে মধ্য বৈশাখ।

রোপণ পদ্ধতিঃ উর্বরা মাটির জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ৭৫ সেঃ মিঃ গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪৫ সেঃ মিঃ। অনুর্বর মাটির বেলায় সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেঃ মিঃ এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪০ সেঃ মিঃ রাখতে হয়।
বীজরে পরিমাণঃ ২ থেকে ২·৫ গ্রাম (প্রতি শতাংশে এবং ছড়ার ওজন ১৫ থেকে ২০ গ্রাম)
বীজ বপনের গভীরতাঃ ৮ থেকে ১০ সেঃ মিঃ
উৎপাদনঃ ১০০ থেকে ১২০ কেজি (প্রতি শতাংশে)
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
গোবর/কম্পেস্ট সার ১০ কেজি, ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ৪০০ গ্রাম, জিপসাম ২০ গ্রাম, জিং ৫ গ্রাম।
গোবর, টি এসপি এবং এমওপি রোপণের সময় এবং ইউরিয়া ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর প্রয়োগ করা ভাল।
অ-র্বর্তীকালীন পরিচর্যাঃ
১· সার উপরি প্রয়োগের পর গাছের গোড়ার মাটি টেনে দিতে হবে। জমি আগাছা মুক্ত করা, খরার সময় প্রয়োজনে সেচ দেওয়া এবং অতি বৃষ্টিতে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
২· মুখী কচু মাটির নিচে হয় বলে মাটি ঝুরঝুরা রাখা বাঞ্চনীয়।
৩· গাছের গোড়া মালচিং এর মাধ্যমে ঢেলে দিলে গুড়ি চারার সংখ্যা কমে আসে তাতে ছড়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
৪· গাছের পাতা ছোট হয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করলে ফসল সংগ্রহ করা উচিত ।
মুখী কচু চাষাবাদ করতে গিয়ে কোন সমস্যায় পড়লে আপনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত নিকটস্থ উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
- কৃষিবিদ মোঃ আজিজুল হক চৌধুরী

ভেষজ উদি্‌ভদের সম্ভাবনা


ভেষজ উদি্‌ভদের সম্ভাবনা



লোকসংখ্যার একটা বড় অংশ তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো যেমন- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা থেকে কোন না কোনভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্ষুধায় যেখানে দু’বেলা দু’মুটো ভাত জোটে না সেখানে রোগ-ব্যাধিতে উচ্চমূল্যে ওষুধ কিনে খাওয়া অসহায় দরিদ্রপীড়িত মানুষের কাছে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যে কারণে অনেককেই অসুখ-বিসুখ নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। এটা আমাদের জন্য যেমন দুর্ভাগ্যের তেমনি বিশ্বের সভ্য মানবতার কাছে অপমানজনক।

আসলে আমরা মুখে অনেক কথা বলি ঠিকই, কিন্তু প্রতিকারের কোন গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করার চেষ্টা করি না, তাই আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার কোন উন্নতি হচ্ছে না। আমাদের দেশে যে ভেষজ সম্ভার রয়েছে তা অবহেলাতে নষ্ট হচ্ছে। আমরা একটু খেয়াল করলেই আমাদের চারপাশে অনেক গাছপালা লতাগুল্ম দেখতে পাই সেগুলোর কোন না কোন ওষুধি গুণ রয়েছে। বর্হিবিশ্ব যখন বিজ্ঞানের অগ্রগতি আর জয়যাত্রা নিয়ে মাতামাতি ঠিক তখনি আমাদের দেশের মানুষেরা আধুনিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গাছগাছরা আর লতাগুল্ম ব্যবহার করে রোগব্যাধির হাত থেকে কোন রকমে বাঁচার জন্য সংগ্রাম করছে। আমাদের দেশে আধুনিক চিকিৎসা কত ব্যয়বহুল তা আমরা সবাই জানি। প্রতি বছর বিনা চিকিৎসায় আমাদের দেশের বহুলোক অসময়ে ঝরে যাচ্ছে। কারণ তারা নামি কোম্পানির দামি ওষুধ কিনে খেতে পারে না। তবে আমরা একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, বর্তমান সময়েও আমাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ রোগব্যাধিতে গাছগাছরা লতাগুল্ম ব্যবহার করে বেঁচে থাকে। এটা আসলে আধুনিকমনাদের কাছে অনেকটা অবা-ব। কারণ তারা আধুনিক যুগের অবদানে সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে গ্রামের লোকদের দুঃখ বুঝার সুযোগ পায় না।

আমাদের দেশের পরিত্যক্ত লতাপাতা, গাছের শিকড়, ছাল বেটে খেয়ে লাখ লাখ লোক বেঁচে থাকে এটা বুঝতে অনেকের কষ্ট হলেও এটাই বা-ব। আমরা যারা দরিদ্রপীড়িত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার কথা নিয়ে সামান্য চি-া করি তাদের কাছে এ বিষয়টি অতি পরিষ্কার। গাছপালার মধ্যে যে ওষুধি গুণ রয়েছে এবং গাছগাছরা থেকে যে ওষুধ তৈরি হয় তা আদিকাল থেকে মানুষ জেনে আসছে। এ বিষয়ে হাজারও পু-ক রচিত হয়েছে। তাই আজকের সমাজের অনেকের কাছেই প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে এটা একটা অতি গ্রহণযোগ্য সমাধান। আমরা যারা গ্রামের মানুষ তাদের কাছে গাছগাছরা লতাগুল্মের ওষুধিগুণ অতি পরিচিত। কারণ ছোটবেলা থেকে আমরা বিভিন্ন রোগে গাছগাছরা লতাগুল্মের ব্যবহার দেখে আসছি।

এমনকি আমরা নিজেরাও অনেক সময় বিভিন্ন রোগে গাছগাছরা লতাগুল্মের শিকড় লতাপাতা এবং ছাল-বাকল বেটে খেয়েছি আর এতে যে উপকার পেয়েছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রোগব্যাধি থেকে উপশম পাওয়া যায় বলেই আজ পর্য- গ্রামাঞ্চলে গাছগাছরা লতাগুল্ম ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে এবং পৃথিবীর মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে গাছপালা-লতাগুল্মের ব্যবহার ততদিন চলবে। সরকার বৃক্ষরোপণ অভিযান জোরদার করে ফলজ, বনজ গাছের সাথে ভেষজ ওষুধি গাছের চারাও লাগানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করার ফলে গ্রামের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে শহরের আধুনিক বাসিন্দারাও ভেষজ উদি্‌ভদের গুণাগুণ সম্পর্কে আগ্রহী হচ্ছে। আসল কথা হল গাছপালা ব্যবহার কিন্তু গ্রামাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নেই, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ওষুধি উপাদান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এমন অনেক কিছুই আমরা ভেষজ উদি্‌ভদ থেকে পেয়েছি। যেমন ম্যালেরিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, এমনকি সর্বগ্রাসী এইডস রোগের চিকিৎসার প্রতিষেধক পাওয়ার আশার বাণী আমরা শুনতে পাচ্ছি।

আয়ুর্বেদ, ইউনানি, কবিরাজি ও হেকিমী শাস্ত্রে ব্যবহৃত প্রায় সব ওষুধ গাছপালা এবং লতাগুল্ম থেকে তৈরি হয়। এ গুলোর সুফল আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষের কাছে অতি পরিচিত। একজন সাধারণ মানুষ যখন কঠিন রোগে আক্রা- হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলে তখন আধুনিক ওষুধ নামের দামী বস্তুটির কাছে তারা যেতে পারে না। তাই ছুটে যায় পাশের গ্রামের কবিরাজ বা হেকিম সাহেবের কাছে যেখানে তারা অল্পমুল্যে কিছু ওষুধ পেতে পারে।

এ ওষুধের গুণগতমান কেমন তা তারা না জানলেও এটুকু বুঝতে পারে যে, এ অল্পমুল্যের ওষুধ তাদের রোগব্যাধির হাত থেকে রক্ষা করে। তবে এখানে একটা কথা উল্লেখ করা একা- প্রয়োজন মনে করছি যে, গ্রাম্য কবিরাজের কাছে অল্পমূল্যে ওষুধ পাওয়া গেলেও বর্তমানে আয়ুর্বেদ, ইউনানি কোম্পানিগুলোর ওষুধ কিন্তু স-া নয় বরং অনেকক্ষেত্রে আধুনিক ওষুধের চেয়ে দাম বেশি। এর মূল কারণ হল আয়ুর্বেদ ওষুধ তৈরির অধিকাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমাদের দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ভেষজ উদি্‌ভদের চাষ প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণ করে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারলে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে তেমনি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, কমবে বেকারত্ব, সাধারণ মানুষ পাবে অল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা।

- মোঃ আহছান উল্লাহ

আইলে মিশ্রফসল চাষাবাদ

আইলে মিশ্রফসল চাষাবাদ




বাংলাদেশে বর্তমানে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৭১ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর। বিশেষজ্ঞদের মতে এই আবাদি জমির প্রায় ২ শতাংশ আইলের ভেতরে পড়েছে। সে হিসেবে প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জমি আইল হিসেবে প্রতিবছর আবাদের বাইরে থেকে যাচ্ছে। অধিক জনসংখ্যার এই দেশে খাদ্য ঘাটতি পূরণ, পুষ্টি সমস্যা দূরীকরণ এবং বাড়তি আয়ের জন্য আইলে ফসলে চাষ নিঃসন্দেহে একটি লাভজনক প্রযুক্তি। মিশ্রফসল চাষে ফসলের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে ফসল নির্বাচন করতে হবে-

সরু ও নীচু আইলে পাতা ও ফলজাতীয় সবজি চাষ করার জন্য আইল কমপক্ষে ৪৫ সেঃ মিঃ প্রশ- করতে হবে এবং প্রয়োজন মত মাটি দিয়ে আইল উঁচু করতে হবে। জমির কোণায় যদি মাছ চাষের জন্য গর্ত থাকে তবে সেক্ষেত্রে লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য গর্তের কোণায় কিছু মাটি দিয়ে হীপ তৈরি করতে হবে। সরু ও নীচু আইলে লতানো সবজি চাষ করার জন্য অল্প পরিমাণ মাটি দিয়ে জমির চার কোণায় চারটি হীপ তৈরি করতে হবে। নিচু আইলে লতানো সবজি চাষ করার জন্য ধানক্ষেত থেকে মাটি এনে নির্দিষ্ট দূরত্বে হীপ তৈরি করতে হবে। যে আইলের উপর দিয়ে মানুষ চলাচল করে তাতেই ফসল চাষ করতে চাইলে জমি থেকে মাটি এনে আইলে সাথে জমির দিকে হীপ তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া ধানক্ষেতের ভেতরেও হীপ তৈরি করে লতাজাতীয় সবজি চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে ধানগাছ থেকে ১·৫ ফুট উচ্চতায় মাচা তৈরি করতে হবে।

আইলের ফসলের জমি তৈরি, জাত নির্বাচন, বপন বা রোপণ পদ্ধতি ও সময়, সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা, অ-বর্তীকালীন পরিচর্যা, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন পদ্ধতি এবং ফসল সংগ্রহ সবই মূলজমিতে ওই ফসল চাষাবাদের অনুরূপ। পানিতে ডোবা না এমন উঁচু ও চওড়া ধরনের আইলে পাতাজাতীয় সবজি যেমন লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, পালংশাক ও কলমিশাক চাষ করা যায়। সুনিষ্কাশিত উঁচু আইলে ঢেঁড়শ, টমেটো, বেগুন, মরিচ, শিম ও বরবটি চাষ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে আইলের প্র- কমপক্ষে ৪৫ সেঃ মিঃ হতে হবে। বীজ বা চারা রোপণের ৭ থেকে ১০ দিন পূর্বে গোবর, টিএসপি ও এমপি সার আইলের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন পর প্রথমবার এবং ৩০ থেকে ৪০ দিন পর দ্বিতীয়বার ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। আইলে হীপ তৈরি করে সেখানে লতাজাতীয় সবজি যেমন মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, লাউ, ঝিঙ্গা, করলা, শসা, চিচিঙ্গা প্রভৃতি চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে চারা ১০ থেকে ২০ সেঃ মিঃ লম্বা হলে বাঁশের কঞ্চি, ধৈঞ্চার গাছ বা অন্য কোন ডাল দিয়ে বাউনি দিতে হবে এবং গাছ ৫০ সেঃ মিঃ এর বেশি লম্বা হলে ১·৫ মিটার উঁচু করে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। মাচার প্র- ১·৫ মিটারের বেশি না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। নীচু সরু আইল অথবা মাঝারি নিচু আইলে পানিকচু চাষ বেশ লাভজনক। শুকনো জমির আইলে বহুমুখি ফসল ভুট্টা, তৈলজাতীয় ফসল সূর্যমুখী এবং ডালজাতীয় ফসল অড়হর চাষ করা যায়। এসব ফসল জমির প্রাকৃতিক বেড়া হিসেবেও কাজ করে। পর্যাপ্ত সূর্যালোক সমৃদ্ধ উঁচু, চওড়া ও সুনিষ্কাশিত আইলে পেঁপে, সজনা প্রভৃতি চাষ করে প্রচুর লাভ করা যায়।


শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০০৮

সবজিতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার


সবজিতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার


এ দেশে ধান ফসলে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করে সুফল পাওয়া গেছে। গুটি ইউরিয়া ধীরে ধীরে নাইট্রোজেন মুক্ত করে বিধায় একবার জমিতে দিলে ফসলের জীবনকালে আর ইউরিয়া সারের দরকার হয় না। অন্য দিকে গুঁড়ো ইউরিয়া দ্রুত গলে যায় এবং নাইট্রোজেন মুক্ত করে বিধায় তার অপচয়ও বেশি হয়। দীর্ঘ দিন ধরে গাছকে নাইট্রোজেন সমানভাবে সরবরাহ করতে পারে না। গুঁড়ো ইউরিয়া জমিতে দেয়ার পর প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ নাইট্রোজেন বিভিন্ন কারণে জমি থেকে নষ্ট হয়, গাছ পায় মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ নাইট্রোজেন। ফলে চাষিদের আর্থিক ক্ষতি হয় এবং গাছও সব সময় নাইট্রোজেনের জোগান না পেয়ে তার বৃদ্ধি মাঝে মাঝে থমকে যায়। ফলে গাছে অভাবজনিত লক্ষণ দেখামাত্রই বারবার ইউরিয়া সার ছিটাতে হয়। তাই এসব ঝামেলা এড়িয়ে সব সময় গাছকে সবুজ সতেজ রাখতে গুটি ইউরিয়া ধীরে ধীরে চাষিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে ধান ফসলে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার হলেও সবজি ফসলে ঠিক সেভাবে শুরু হয়নি। অথচ সবজি ফসলেও বিশেষত আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন ইত্যাদি ফসলে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করে যথেষ্ট সুফল পাওয়া গেছে। তাই সবজি চাষিরাও গুঁড়ো ইউরিয়ার বদলে সবজিতে গুটি ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে পারেন। আলুতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার সাধারণত নভেম্বরের মধ্যেই আলু লাগানো হয়। তাই আলু লাগানোর আগে জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে প্রতি শতাংশে ১২ কেজি গোবর, ১২০ গ্রাম টিএসপি এবং মাত্রার অর্ধেক পরিমাণ এমওপি অর্থাৎ ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম এমওপি সার জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ৪৫ সেন্টিমিটার পর পর লাইন করে প্রতি লাইনে ১৫ সেন্টিমিটার বা ৬ ইঞ্চি দূরত্বে আলু বপন করতে হবে। লাইনে আলু বপনের সময় দুই বীজ আলুর মাঝখানে একটি করে গুটি ইউরিয়া দিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আলু লাগানোর ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সে সময় বাকি অর্ধেক কিস্তির এমওপি সার দিয়ে সেচ দিতে হবে। আর কোনো ইউরিয়া সার দেয়ার দরকার হবে না। এর ফলে আলুর জন্য সুপারিশকৃত ইউরিয়া সারের চেয়ে ২০ শতাংশ ইউরিয়া কম লাগে এবং ফলনও বেশি পাওয়া যায়। এতে প্রতি শতাংশে ১.১৯ কেজি গুটি ইউরিয়া লাগে। বাঁধাকপি ও ফুলকপিতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার বাঁধাকপি ও ফুলকপির জন্য ১ মিটার চওড়া করে দুই বেডের মাঝখানে ৩০ সেন্টিমিটার নালা রেখে বেড তৈরি করতে হবে। বেডে ৬০ সেন্টিমিটার দূরত্বে দুই সারিতে ৪৫ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার দূরত্বে চারা রোপণ করতে হয়। চারা লাগানোর ১০ থেকে ১৫ দিন পর মাটির উর্বরাশক্তি অনুযায়ী প্রতিটি গাছের গোড়ায় মাটিতে ১ গ্রাম ওজনের ৭ থেকে ৯টি গুটি ইউরিয়া রিং পদ্ধতিতে চার দিকে ৭ থেকে ৮ সেন্টিমিটার গভীরে পুঁতে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অন্যান্য পরিচর্যা ও সেচ যথারীতি চালিয়ে যেতে হবে। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে বাঁধাকপি ও ফুলকপির জন্য সুপারিশকৃত ইউরিয়ার ২০ শতাংশ সার কম লাগে। প্রতি হেক্টরে বাঁধাকপির জন্য ৪২৩ কেজি ও ফুলকপির জন্য ২১০ কেজি গুটি ইউরিয়া লাগে।


রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০০৮

টবে ঢেঁড়শ চাষ


টবে ঢেঁড়শ চাষ

শাকসবজি উৎপাদনের জন্য জমি বা বাগানই শ্রেষ্ঠ জায়গা। তবে যারা শহরে বাস করে তাদেরও শাকসবজি উৎপাদনের রয়েছে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা। শহরের বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, মাটির চাঁড়িতে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সারমাটি ভরে অনায়াসেই ঢেঁড়শ চাষ করা যায়।
ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, তাছাড়া ভিটামিন -এ সহ অন্যান্য উপাদানও কিছু কিছু রয়েছে। বাংলাদেশে যে কোন সময় ঢেঁড়শ লাগানো যায়।
টবের মাটিঃ গাছের বৃদ্ধি এবং ঢেঁড়শের ভাল ফলনের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে টবের মাটিতে যেন ফেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার একসাথে ভালভাবে মেশাতে হবে। এঁটেল মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণভাবে প্রতি টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫ থেকে ৬ দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশানো যেতে পারে।
জাতঃ ঢেঁড়শের নানা জাত রয়েছে। এর মধ্যে পুশা শাওনী, কাবুলী ডোয়ার্ফ, লক্ষ্নৌ ডোয়ার্ফ, লং গ্রীন, লং হোয়াইট, পেন্টাগ্রীণ-এসব বিদেশী জাত জনপ্রিয়।

সময়ঃ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত অর্থাৎ বছরের সব সময়ই ঢেঁড়শ গাছ লাগানো যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শীতের শেষভাগ থেকে বৈশাখ পর্য- ঢেঁড়শ লাগানো যায়। এরপরও লাগানো যায় তবে নাবী ফসলে মোজাইক রোগ হয় বলে ফলন ভাল হয় না।
বীজ বপনঃ ঢেঁড়শের চারা রোপণকালীণ সময় আঘাত সহ্য করতে পারে না বলে সরাসরি মূল টবে বুনতে হবে। ঢেঁড়শের জন্য মাঝারী ধরণের টব হলেই চলবে। প্রতি টবে ২ থেকে ৩টি বীজ বুনে দিতে হয়। চারা গজানোর পর একটি সবল চারা রেখে বাকিগুলো ফেলে দিতে হয়। খোসা শক্ত বলে ঢেঁড়শের বীজ দেরীতে গজায়। তাই বুনার আগে ২৮ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
পরিচর্যাঃ ঢেঁড়শ গাছ পানি সহ্য করতে পারে না। গাছের গোড়ায় দাঁড়ানো পানি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেকটা টবে পানি যাতে না বেধে থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
গাছ ১০ থেকে ১২ সেঃ মিঃ বড় হলে টবের কিনার ঘেঁসে ১ চা চামচ ইউরিয়া ও ১ চা-চামচ মিউরেট অব পটাশ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
রোগবালাইঃ শুঁয়া পোকা কচি কাণ্ড ছিদ্র করে গাছের ক্ষতি করে। ভাইরাস (মোজাইক) রোগ ঢেঁড়শে প্রায়ই দেখা যায়। এ রোগে পাতা হলদে হয়ে কুঁচকে যায়। রোগাক্রা- গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে দিতে হয়। শুঁয়া পোকার আক্রমণ থেকে ঢেঁড়শ গাছকে বাঁচাতে হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিঃ লিঃ ডায়াজিনন-৮০, নুভাক্রণ-৪০, একালাক্স-২৫ এর যে কোনটি অথবা ১ লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার সিমবুশ-১০ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ বীজ বপনের দু’মাস পরেই ফল পাওয়া যায়। কচি অবস্থায় ঢেঁড়শ তুলতে হয়। দেরি হলে ফল শক্ত হয়ে যায় ও সেটা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। ঘন ঘন ঢেঁড়শ তুললে গাছে বেশি পরিমাণে ঢেঁড়শ আসে। - সাহারা তুষার

বিনা চাষে আলু আবাদ


বিনা চাষে আলু আবাদ


গত বছর মুন্সিগঞ্জসহ অন্যান্য জেলায় আলুর ফলন ভাল হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় কোল্ড-স্টোরেজ সংকটে পড়ে অনেক আলু নষ্ট হয়ে যায়। তারপর আবার এবার সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় চাষ খরচও বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। তাই এবার সেসব এলাকার অনেক কৃষকই তাদের আলু চাষের জমি কমিয়ে আনতে পারেন। তাই এবার আলু চাষ বেশ লাভজনক হবে বলে ধারণা করা যায়। তবে খরচ কমিয়ে এই ফসল চাষ করার পদ্ধতিও আছে। এটি কৃষকের জন্য অনেক সাশ্রয়ী হবে, তেমনি অনেক পতিত জমিও চাষের আওতায় আসবে।
জোয়ার প্লাবিত দক্ষিণাঞ্চলে আমন ধান কাটার পর মাটি শুকাতে অনেক বেশি সময় নেয়ায় সঠিক সময়ে আলু চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। দেরীতে আবাদের জন্য ফলনও অনেক কমে যায়। তাই যেসব এলাকা নীচু এবং বর্ষার পানি নামতে দেরী হয় সেখানে কৃষকরা বিনা চাষে আলু আবাদ করতে পারেন। এভাবে আবাদের ফলে চাষ খরচ অনেক কম যায় কারণ কচুরিপানার লাভজনক ব্যবহার হয়, একে মালচিং দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করে মাটির রস সবসময় সংরক্ষণ করা য়ায়, সেচ খরচ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়, অনেক কম রাসায়নিক সার দরকার হয়, জমিতে আগাছা কমে যায়, আলু বেশি সুস্বাদু হয় এবং এর আকারও অনেক বড় হয়।
এভাবে আলু চাষের জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যেখানে বৃষ্টিপাত হলে পানি জমে না। সাধারণত উচ্চ ফলনশীল এবং স্থানীয় জাতের ধান কাটার পর জমি ফাঁকা হবার সঙ্গে সঙ্গেই আলু আবাদের সুযোগ ঘটে। কাছাকাছি নদী বা পুুকুরে কচুরীপানার উৎস থাকতে হবে। নভেম্বর মাসের শেষ পর্য- এ আলু চাষের উপযুক্ত সময়। তবে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ পর্য- বিরনা চাষ পদ্ধতিতে আলু আবাদ সম্ভব।
বীজ ব্যবস্থাপনাঃ হিমাগারে সংরক্ষিত অনুমোদিত জাত যেমন- কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি শতকে ৬-৮ কেজি বীজের দরকার হবে। ২৫-৩০ গ্রাম ওজনের ছোট আলু বা বড় আলুর কমপক্ষে দুই চোখ বিশিষ্ট কাটা অংশই আলুর বীজের জন্য ভাল। কাটা অংশে ছাই লাগিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। রোপণের আগে এসব বীজ অনুমোদিত ছত্রাকনাশক (যেমন-ব্যাভিস্টিন বা ডাইথেন এম-৪৫) দিয়ে শোধন করে নেয়া ভাল। ২০ ইঞ্চি দূরে সারি করে ১০ ইঞ্চি দূরে প্রতিটি বীজ আঙুলের চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে। যদি মাটি কিছুটা শক্ত হয় তবে হাত লাঙল টেনে ১০ সেঃ মিঃ গভীর করে নালায় বসিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ বীজ রোপণের আগে শতক প্রতি ১·৩ কেজি ইউরিয়া এবং আধা কেজি টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে। বীজ রোপণের আগের দিন পটাশ ও গোবর সার একত্রে মিশিয়ে ছিঁটিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বীজের গায়ে যেন কোনভাবেই রাসায়নিক সার না লাগে।
মালচিং বা আচ্ছাদনঃ কচুরিপানা, খড়, নাড়া ইত্যাদি আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। নদী বা খাল থেকে কচুরীপানা তুলে রেখে দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে শুকালে সেটি আচ্ছাদন হিসেবে ভাল হয়। খড় বা নাড়াকে আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করলে ইঁদুরের আক্রমণ বাড়তে পারে। বীজ আলু লাগানোর পরপরই ৪-৬ ইঞ্চি পুরু করে আচ্ছাদন দিতে হবে। বীজ আলু সম্পূর্ণরূপে আচ্ছাদিত হতে হবে না হলে আলুর গায়ে সবুজ মেলানিনের দাগ পড়ে যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আবার আচ্ছাদন বেশি হলে গাছ বের হতে সমস্যায় পড়ে।
রোগবালাইঃ কাটুই পোকার কীড়া চারাগাছ কেটে দেয় এবং ছিদ্র করে ফসলের ক্ষতি করে। এই পোকা দিনের বেলা মাটির নীচে লুকিয়ে থাকে। এই পোকার উপদ্রব খুব বেশি না হলে কাটা গাছের কাছাকাছি মাটি খুঁড়ে কীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। উপদ্রব বেশি হলে ক্লোরোপাইরিফস (ডারসবান) ২০ ইসি ৫ মিলি হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটি স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে। আলু লাগানোর ৩০-৪০ দিন পর এটা করা দরকার। বাড়িতে সংরক্ষিত আলুতে সুতলী পোকা লম্বা সুড়ঙ্গ করে। পরে এটি অন্যান্য আলুর মধ্যেও ছড়িয়ে যায়। এজন্য বাড়িতে আলু সংরক্ষণের সময় ছাই, তুষ অথবা কাঠের গুঁড়ো দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আলু সংরক্ষণের আগে আক্রা- আলু বাছাই করে ফেলে দিতে হবে। জাবপোকা গাছের রস চুষে খায় এবং ভাইরাস রোগ ছড়ায়। প্রতি ৭ দিন পর ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১০ মিলি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। উড়চুঙ্গা রাতে গর্ত থেকে বের হয়ে গাছের শেকড় ও কাণ্ড খেয়ে ফেলে। বিষটোপ ব্যবহার করে অথবা গর্ত থেকে পোকা বের করে মেরে ফেলতে হবে।

লেট ব্লাইট বা আলুর মড়ক রোগ হলে প্রথমে পাতা, ডগা ও কাণ্ডে ছোট ছোট ভেজা দাগ পড়ে। পড়ে এটি বড় হয়ে পুরো গাছে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যে পুরো ক্ষেতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। আক্রা- ক্ষেতে পোড়া গন্ধ পাওয়া যায় যেন ফসল পুড়ে গিয়েছে। প্রতিকারের জন্য সুষম সার এবং সময়মত সেচ প্রয়োগ করতে হবে। রোগ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোভরাল অথবা ডাইথেন এম-৪৫, ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।
এভাবে রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করে আবাদ করলে হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ টন আলু ফলানো সম্ভব। আর স্বাভাবিকভাবে আলু চাষ করতে কৃষকের যে খরচ তাতে কৃষকের পুষিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর বিনাচাষে এই পদ্ধতিতে আলু চাষ করলে চাষ খরচ প্রায় তিন চতুর্থাংশে নেমে আসে। - মাজহার মিলন

শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০০৮

শিং মাছ চাষে লাভবান হওয়ার টিপস


শিং মাছ চাষে লাভবান হওয়ার টিপস



শিং মাছ চাষে ভালো অর্থাৎ রোগমুক্ত, সুস্থ এবং সমবয়সী ও একই আকারের পোনা ভালো উৎপাদনে সহায়ক। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয়, পোনা হ্যাচারি থেকে এনে নার্সিং করে নেওয়া উত্তম। নার্সিং করার পর তিন থেকে চার ইঞ্চি পোনা চাষের জন্য মজুদ করা উচিত। এ সময় পোনা সঠিক সংখ্যায় গণনা করে দেওয়া যায়। হ্যাচারি থেকে সরাসরি ছোট পোনা চাষে দেওয়া হলে নানা কারণে অধিক পোনা মারা যেতে পারে। এ সময় পোনা মারা গেলে চাষি পোনার সংখ্যার ব্যাপারে ধারণা করতে পারে না এবং অধিক খাবার প্রয়োগে পুকুরের পরিবেশ নষ্ট করে, নানা সমস্যা নিত্যদিনের সঙ্গী হবে।
খাবারঃ শিং মাছ চাষে মানসম্মত খাবার প্রয়োজন। শিং মাছের খাবারে ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ প্রোটিন থাকা আবশ্যক। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে খাবারে ৩৫ শতাংশ প্রোটিন থাকা উচিত। খাবারে ফিশ মিল অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। তা ছাড়া প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, এনজাইম ও গ্রোসপ্রোমোটর থাকলে খাদ্য রূপান্তর হার ভালো হবে। শিং চাষে খাবার অধিক ব্যবহার বা প্রয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।
পরিচর্যা
1. পোনা মজুদের আগে তা রোগমুক্ত করে নেওয়া ভালো। একক চাষে ৩০০ থেকে ৫০০ পোনা দেওয়া যায়। পানি পরিবর্তন বা ব্যবস্থাপনা উন্নত হলে অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়।
2. একই আকারের পোনা চাষে দেওয়া উচিত। কদিন পর পর ভিন্ন সাইজের পোনা মজুদে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায় না।
3. প্রয়োজনীয় পরিমাণে খাবার দেওয়া উচিত। অধিক খাবারে পুকুরের পরিবেশ নষ্ট করবে এবং তলদেশে ক্ষতিকারক গ্যাস চাষকে বিপন্ন করবে।

‘কটরাপারি’ খরচ সাশ্রয়ী দোফসলি জাতের ধান


‘কটরাপারি’ খরচ সাশ্রয়ী দোফসলি জাতের ধান



পোকার আক্রমণের কারণে বিস্তীর্ণ আমনক্ষেত সাবাড় হচ্ছে। ধানক্ষেতের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। কীটনাশক ছিটিয়ে কাজ হয় না, একটু দমন হলেও আবার দ্বিগুণ তেজে পোকার আক্রমণ শুরু হয়ে যায়, সেচ সুবিধা, অসুবিধাসহ নানা কারণে উৎপাদন খরচ উঠবে কি না, বেশির ভাগ চাষির মধ্যে প্রায়ই দেখা যায় দুশ্চিন্তা আর হাহাকার। ধান চাষের ক্ষেত্রে বাস্তব চিত্রটি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র দেখা গেলেও আমন ধানের ফলন নিয়ে মোটেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন না পীরগঞ্জ উপজেলার কলিযুগ গ্রামের কৃষক বিমল চন্দ্র দেব শর্মা।
‘কটরাপারি’ নামের একটি অপরিচিত স্থানীয় জাতের ধান চাষ করতে পেরে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। বোরো মৌসুমে বিঘাপ্রতি ৪৭ মণ এবং আমন মৌসুমে প্রতি বিঘায় ২৮ থেকে ৩২ মণ ফলন পেয়েছেন তিনি। ধানের এ আশাতীত ফলন দেখে অনেকের অজান্তেই আশপাশের দশ গ্রামের অনেক চাষির মধ্যে এ ধান চাষে দেখা দিয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।
ঠাকুরাগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কলিযুগ গ্রামের বিমল চন্দ্র দেব শর্মা। তাঁর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল তাঁর আবাদি জমির পরিমাণ ৩০ বিঘা। প্রতি বছর আমন মৌসুমে তিনি তাঁর জমিতে স্বর্ণা, বিআর-৪১, পাইজাম আর বোরো মৌসুমে চায়না, মালা, ব্রিধান-২৮ প্রভৃতি জাতের এক ফসলি জাতের ধান চাষ করে ফলনও পেতেন আর দশ জন চাষির মতোই। তাই তিনি তাঁর জমি থেকে তেমন একটা লাভবান হতে পারেননি। উৎপাদন খরচেই পুঁজি শেষ হয়ে যায়। এত জমি থেকেও সামলিয়ে উঠতে তাঁকে হিমশিম খেতে হতো।
বিমল চন্দ্র তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে এক মণ ‘কটরাপারি’ জাতের ধানের বীজ নিয়ে আসেন গত বছর কার্তিক মাসে। তিনি জানান, ওই বছরের অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহে বীজতলায় ধানবীজ বোনেন এবং দেড় মাসের মাথায় চার বিঘা জমিতে ধানের চারাবীজ রোপণ করেন। সাড়ে তিন মাসের মাথায় বৈশাখের মাঝামাঝিতে ধান কাটেন। চার বিঘা জমি থেকে বিঘাপ্রতি (৫০ শতকের বিঘা) গড়ে ৪৭ মণ করে ফলন পান এবং তিনি অবাক হন। অবাক হয় আশপাশের অন্য চাষিরাও। বিমল চন্দ্র দেব শর্মা ওই ধান শুকিয়ে রাখেন এবং বীজের মতোই মাঝেমধ্যে রোদে দেন। এভাবে বৈশাখ মাসে উৎপাদিত ধানের বীজ করে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজতলায় বোনেন তিনি। আট থেকে ১০ দিনের মাথায় অঙ্কুরিত হয় বীজতলার বীজ। আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহে চারাবীজ রোপণ করেন ও সাড়ে তিন মাসের মাথায় আশ্বিন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ধান কাটা শুরু করেন এবং বিঘাপ্রতি ২৮ থেকে ৩২ মণ ফলন পান। ‘কটরাপারি’ মঙ্গা মোকাবিলার জন্য উৎকৃষ্ট ধান। এ এলাকার অন্য সব জাতের ধানকে আড়াল করে কটরাপারি মাঠপর্যায়ে এক বিশেষ জায়গা করে ফেলছে এ কথা অনস্বীকার্য। উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ জাতকে উন্নত জাতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে।