বোরো উৎপাদন
জীবন কৃষষ্ণ বিশ্বাস
বোরো ধান সেচনির্ভর। তবে সারাদেশের চাষীরা বীজতলাটা করে ফেলে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে। হাওর এলাকায়ও এর ব্যতিত্রক্রম নয়। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে আগাছা বাছাই আর জমি প্রস্টçতির কাজ চলতে থাকে। এদিকে চারা দেওয়া আছে। তাই লাগানোর মতো হলে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এক সময় পানি শুকিয়ে গেলে দরকারমতো সেচ দিতে হয়। হাওরের জমিতে ধানের আবাদ বানের পানির খেয়ালি আসা-যাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। তাই বীজতলায় বীজ ফেলার সময়-অসময় নেই। অনেক ক্ষেত্রেই চাষীরা অক্টোবরে বীজতলা করে ফেলে। অথচ করার মোক্ষম সময় হলো নভেল্ফ্বর। জমি তৈরি হতে হতে চারার বয়স বেড়ে যেতে পারে দুই-তিন মাস। তখন জীবনকাল বেড়ে যাবে। ফলে এপ্রিলের শেষে বা মে মাসের প্রথম দিকে পাহাড়ি ঢলের ভয়, শিলাবৃষ্দ্বির ভয়। আগাম লাগালে কাইচথোড় আসে ফেব্রুয়ারি মাসে। ধান চিটা হয়ে যাওয়ার ভয়। এমন ঘটনা মাঝে মধ্যে দেখা যায় হাওর এলাকায়। কিশোরগঞ্জের কথা বলি। ২০০৭-এ পানি টান দেওয়া শুরু করে অক্টোবরে। চাষীদের জানা ছিল যে বীজতলা করার সময় হয়নি। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। বীজতলা করা হলো, ওদিকে জমির পানিও নেমে যাচ্ছে। সর-কাদায় লাগাতে হলো এক মাসের চারাই। জানা ছিল এক মাসের চারার ভালো ফলন দেয়। জাত ছিল ব্রি ধান২৮। তবে জানা ছিল না যে এই জাতের কাইচথোড়-অবস্টÿাটা ঠাwৈর মধ্যে পড়ে যেতে পারে। যা হওয়ার তাই হলো। হাওর এলাকার আগাম ধানের জাতগুলো সব চিটা হয়ে গেল। সারাদেশের তুলনায় এই পরিমাণ মাত্র ২·৫%। কিন্তু যে চাষীর পুরোটাই গেল তার জন্য তো ১০০ ভাগই শেষ। এই ঘটনা সে বছর শুধু হাওরেই নয়, অন্যান্য জায়গায়ও দেখা গেছে। নিল্ফম্নতাপমাত্রার জন্য ধানের সবচেয়ে সংবেদনশীল পর্যায় হলো কাইচথোড় (প্রস্টম্ফুটনের ২৪ দিন আগে), থোড় (প্রস্টম্ফুটনের ১২-১৪ দিন আগে) এবং ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে পরাগ-বিদারণ অবস্টÿা। এদের নিল্ফম্নসংকট তাপমাত্রা হলো যথাত্রক্রমে ১৮, ১৯ এবং ২২ সে·। কোনো সংকট নিল্ফম্নতাপমাত্রা (যে তাপমাত্রার নিচে নেমে গেলে বৃদিব্দ ও বিকাশ ব্যাহত হয়) যদি দু’একদিন ধরে পড়ে তবে ক্ষতির সল্ফ্ভাবনা কম। কিন্তু যদি ৪-৬ দিন ধরে পড়তে থাকে তাহলে ক্ষতিকর পরিমাণ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে মেঘলা আকাশ থাকলে পরিস্টিÿতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে। ধানের ক্ষতি হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে শুধু রাতের তাপমাত্রা নয়দিনের তাপমাত্রারও বিরাট ভহৃমিকা আছে। রাতের তাপমাত্রা সংকটমাত্রায় থাকলেও যদি দিনের তাপমাত্রা স্ট্বাভাবিক বছরের তুলনায় ৩-৪ সে· কমে না যায় তাহলে ধানের ক্ষতি তেমন হয় না। দিনের ও রাতের তাপমাত্রার প্রকৃতি, জায়গা ও বছরভেদে পরিবর্তনশীল। গেল্গাবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে তাতে নতুনমাত্রা যোগ হওয়া অস্ট্বাভাবিক নয়। তবে এ ব্যাপারে এখন সতর্ক হওয়ার সময়, সিদব্দান্স্ন দেওয়ার সময় আসেনি। গাছের বৃদিব্দ পর্যায়ভেদে ক্ষতির লক্ষণ ভিল্পম্ন হয়। রোপণের সঙ্গে সঙ্গে রাতের তাপমাত্রা সংকটমাত্রার নিচে নেমে গেলে চারা মারা যাওয়ার সল্ফ্ভাবনা থাকে। কুশি গঠনকালে সংকটমাত্রার ঠাwৈয় গাছ খর্বাকৃতি হয়ে থাকে। বিবর্ণ দেখায়। মাঠ পর্যায়ে এই অবস্টÿাকে নাইট্রোজেন বা সালফারের অভাব হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। এই পরিস্টিÿতিতে কোনোপ্রকার সার বা বালাইনাশক প্রয়োগ করে লাভ নেই। কারণ তাপমাত্রা বেড়ে গেলে গাছের বৃদিব্দ এমনি স্ট্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে হাওর এলাকার জন্য কিছুটা উদ্বেগের কারণ আছে। কারণ ঠাwৈর ফলে ফসলের জীবনকাল কিছুটা বেড়ে গিয়ে ধানপাকা অবস্টÿায় পাহাড়ি ঢলের মুখোমুখি হতে পারে। থোড় শুরুর দিকে ঠাwৈয় আত্রক্রান্স্ন হলে শীষ ঠিকভাবে বের হতে পারে না। প্রস্টম্ফুটন অসল্ফঙ্হৃর্ণ দেখায়। কাইচথোড় অবস্টÿায় অতিরিক্ত ঠাwৈ পড়লে বিকলাঙ্গ শীষ তৈরি হয়। কাইচথোড়-পরবর্তী পর্যায়ের অতিরিক্ত ঠাwৈয় পরাগরেণু নষ্দ্ব হয়ে যায় বা সুগঠিত হতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, গাছের বাড়বাড়তি স্ট্বাভাবিক, এমনকি শীষও কিছুটা বের হয়। কিন্তু ধানের মধ্যে দানা তৈরি হয় না। এই ধরনের সংকট থেকে পরিত্রাণের জন্য যথাযথ কোনো ধানের জাত এখনো ব্রির হাতে নেই। তবে ব্রি ধান৩৬ চারা অবস্টÿায় ঠাwৈ সহ্য করতে পারে। যা হোক রোপণ ও বপন সময় ঠিক করে নিয়ে এ ধরনের নিল্ফম্নতাপমাত্রার শিকার থেকে রেহাই পাওয়া সল্ফ্ভব। ব্রির পরীক্ষিত ফলাফল হলো- স্ট্বল্কপ্পকালীন ধান (জীবনকাল ১৫০ দিনের কম) যেমন ব্রি ধান২৮ অক্টোবরে বপন করলে ৩০ দিনের চারা রোপণ করা যাবে না। ৬০ দিনের চারা রোপণ করতে হবে। তবে দীর্ঘজীবনকালীন ধান (জীবনকাল ১৫০ দিনের বেশি) যেমন ব্রি ধান২৯-এর বেলায় অক্টোবরের করা ৩০ দিনের চারা রোপণ করা যাবে। উভয় জাতের ধানের ক্ষেত্রে অক্টোবরে বপন করে ৬০ দিনের চারা এবং নভেল্ফ্বরে বপন করে ৩০-৬০ দিনের চারা ভালো ফলন দেয়। যদি কোনো কারণবশত ৯০ দিনের চারাই রোপণ করতে হয় তবে অবশ্যই তা অক্টোবর মাসে বপন করা চারা হতে হবে। তবে চারার অতিরিক্ত বয়সের কারণে সামগ্রিক ফলন ভালো হবে না। সংশিল্গষ্দ্ব চাষীরা এই আবাদ পদব্দতিটা অনুসরণ করে দেখতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে চারার বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। চারার বয়স একদিন বাড়লে জীবনকাল বাড়ে আধাদিন। ৩০ দিনের চারার তুলনায় ৬০ দিনের চারার গাছের আয়ুষ্ফড়্গাল ১৫ দিন বেড়ে যায়। ঠাwৈর বছর হলে গাছের জীবনকাল আরো সপ্টস্নাহখানেক বেড়ে যাওয়ার সল্ফ্ভাবনা। যা হোক প্রয়োজনে জমিতে ধানের প্রজনন পর্যায়ে পর্যাপ্টস্ন সেচের ব্যবস্টÿা করে (১০-১৫ সেমি) অতিরিক্ত ঠাwৈর প্রভাব বেশ কিছুটা প্রশমিত করা যায়। এছাড়া জমির জৈব পদার্থ একটা জরুরি বিষয়। নরংধিংথলরনধহ@ুধযড়ড়·পড়সলেখকঃ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাউদি্ভদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্দ্বিটিউট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন