কোরবাণীর ঈদ
আর একদিন পরেই কোরবাণীর ঈদ। ত্যাগের মহিমায় উজ্জিবিত হয়ে গোটা মুসলিম বিশ্ব এই ঈদের প্রধান কর্মসূচি হিসেবে পশু কোরবাণী করবে। প্রতিবছরের মত এবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমে উঠেছে পশুর হাট। কোরবাণী ঈদকে সামনে রেখে কৃষি ও শিল্প অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে পশু কেনাবেচার। একদিকে কৃষকের ঘরে লালন-পালন করা গরু, ছাগল ইত্যাদি প্রাণী, অন্যদিকে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র খামারে লালন-পালন করা গরু ছাগল। সব মিলিয়ে প্রাি-ক পর্যায়ে এক লাভজনক বিকিকিনির সুবিধা নিয়ে আসে এই ঈদ।
পশু হাটের মৌসুম। দেশের পশুসম্পদ খাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একদিকে পশু, অন্যদিকে পশুর চামড়া। একটির সহউৎপাদন অন্যটি। প্রাি-ক কৃষক ও খামারিদের ঘরে নগদ কিছু টাকা আসে, অন্যদিকে বড় ধরণের লাভালাভের হিসাব কষেন চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এর সঙ্গে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের সম্পর্ক রয়েছে।
যা হোক, কোরবাণীর পশু হাট কিংবা পশুর সমারোহে যে বিষয়টি অনাকাঙ্খিত এক খবর হয়ে দেশব্যাপী চাউর হয়েছে তা হচ্ছে নিষিদ্ধ কিছু ওষুধ প্রয়োগ করে বিভিন্ন স্থানে গরু মোটাতাজাকরণেরর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিষয়টি শুধু অনভিপ্রেতই নয়, আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক এক হুমকি। বিভিন্ন মাধ্যমের রিপোর্টে জানা গেছে, ভেরিএকটিন নামের ভারতীয় একটি নিষিদ্ধ ওষুধ খাওয়ানোর ফলে এক মাসের মধ্যেই গরুর ওজন ৩০ থেকে ৪০ কেজি পর্য- বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিষিদ্ধ ওষুধ খাওয়ানোর প্রতিক্রিয়া হিসেবে গরু-মহিষের যকৃৎ ও বৃক্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্র- হয়; এগুলোতে জমে যায় পানি। ওই গরুর মাংস মানবদেহের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ। গরু-মহিষকে পর্যাপ্ত ও নিয়মমাফিক খাবার দিয়ে অল্পদিনেই মোটাতাজাকরণ করা সম্ভব। কিন্তু কম খরচে বেশি মুনাফা লাভের আশায় যারা এই কাজ করছে তারা বড় ধরণের অন্যায় করছে, তাদের বিরুদ্ধে শাি-মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের যৌক্তিকতা রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন এলাকার গরু খামারির সঙ্গে কথা বলেছি, যারা নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করছে এবং যারা করছে না, এই দু’পক্ষের সঙ্গেই কথা বলে জেনেছি, নিষিদ্ধ ওষুধগুলোর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে কোনরকম অবগত করা হয়নি, সচেতন করা হয়নি। যে কারণে না বুঝেই খামারিরা ক্ষতিকর কাজটি করে চলেছে। এবারই প্রথম খবরটি বড় আকারে এসেছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কিংবা উদ্বুদ্ধ করার মত সময় এবার আর নেই। ধরে নেয়া যাক, ক্ষতি যা হবার হয়েই গেছে। কিন্তু পরবর্তীতে এ ধরণের প্রবণতা যাতে রোধ করা যায়, সে ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে পশুখাদ্যে বিভিন্ন ভেজাল ও নিম্নমানের ক্ষতিকারক দ্রব্য মেশানোর খবরও আমরা পেয়েছি। বাজারে যেসব পশুখাদ্য পাওয়া যায় এর মধ্যে এন্টিবায়োটিক গ্রোথ হরমোন, হাড়ের গুঁড়া, শক্তিবর্ধক নিষিদ্ধ নানা কীটনাশক মেশানো হচ্ছে। এসব খাদ্য আপাতদৃষ্টিকে পশুর শরীরকে ভারী করে ঠিকই, কিন্তু পশুর শরীরের জন্য তা যেমন ক্ষতি ডেকে আনছে, একইভাবে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে জনস্বাস্থ্যে। ভেজাল মাংসের বিষক্রিয়ায় নানান রোগে আক্রা- হচ্ছে মানুষ। এমনকি শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছে বলেও বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে দেখেছি আমরা।
কৃষির অন্যতম উপখাত হিসেবে পশুসম্পদ পালনের বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু দেশব্যাপী পশুখাদ্যের সংকট দিনের পর বাড়ছে একথা বলাই বাহুল্য। একদিকে পশুখাদ্যের ভেজালকারী অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, অন্যদিকে দেশে নিরাপদ পশুখাদ্যের নিশ্চয়তাও সৃষ্টি করতে হবে। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, আমিষের অন্যতম প্রধানতম উৎস্য হচ্ছে পশু পাখির মাংস, ও মাছ। এগুলোতে ভেজালের মিশ্রণ কোনভাবেই মানার মতো নয়।
- শাইখ সিরাজ
সবার কোরবাণীর মাংস হোক নিরাপদ। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন