পুকুরে গলদা চিংড়ি ও মাছের মিশ্রচাষ
বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং সর্বোপরি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান সম্প্রসারিত করার সুযোগ আরও ব্যাপক। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তথা রফতানি বাণিজ্যে মৎস্য খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে চিংড়ি। কেননা গলদা চিংড়ি বর্তমানে দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। বিশ্বব্যাপী গলদা চিংড়ির ক্রমবর্ধমান চাহিদা, স্বাদ এবং মূল্যের কারণে বাংলাদেশে এর চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এদেশে ৩৬ প্রজাতির সামুদ্রিক ও ২৪ প্রজাতির মিঠা পানির চিংড়ি রয়েছে। লবণাক্ততার কারণে সামুদ্রিক চিংড়ি দেশের উপকূলীয় এলাকা ছাড়া অন্যত্র চাষ করা যায় না।
কিন্তু মিঠা পানির চিংড়ি দেশের সব জায়গায় চাষ করা সম্ভব, এমনকি অল্প লবণাক্ত পানিতেও মিঠা পানির চিংড়ি চাষ করা যায়। মিঠা পানির সর্ববৃহৎ চিংড়ি প্রজাতি হচ্ছে গলদা চিংড়ি। আমাদের দেশে আবহাওয়া ও পানির গুণগতমান গলদা চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। গলদা চিংড়ির চাষ বৃদ্ধি পেলে যেমন কর্মসংস্থান ও আমিষের যোগান বাড়বে তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার আয় ও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। কি-ু কার্প জাতীয় এবং অন্যান্য মাছ থেকে চিংড়ির জীবনযাপন ও চাষ পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় চিংড়ি চাষের জন্য কৃষকদের কারিগরি জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এজন্য অনেক মৎস্য চwিষ চিংড়ি চাষে সফলতা অর্জন করতে পারে না।
গলদা চিংড়ি ও মাছের মিশ্র চাষের সুবিধাঃ
গলদা চিংড়ি ও মাছের মিশ্র চাষের সুবিধাঃ
১· গলদা চিংড়ি মিশ্রচাষে খাদ্য এবং বাসস্থানের জন্য মাছ ও চিংড়ি কেউ কারও প্রতিযোগিতা করে না।
২· পুকুরে প্রতিটি -রের খাদ্যের যথাযথ ব্যবহার হয়।
৩· চিংড়ির বাজার দর বেশি হওয়ায় তুলনামুলকভাবে কার্প জাতীয় মাছের সাথে মিশ্রচাষ অধিক লাভজনক।
৪· গলদা চিংড়ির মিশ্রচাষে প্লাংকটনের আধিক্যের জন্য পানির গুণগতমান নষ্ট হয় না।
মিশ্র চাষের জন্য পুকুর তৈরিঃ গলদা চিংড়ি চাষের জন্য পুকুর তৈরির সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে-
১· খামারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিষ্কাশন ও সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
২· পুকুর পাড়ের আবেষ্টনী বন্যার পানির সর্µোচ্চ উচ্চতা হতে প্রায় দেড় ফুট উঁচু হতে হবে, মাথা চওড়া এবং ঢাল এঁটেল অথবা দো-আঁশ হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কাঁকড়া, ইঁদুর বা অন্যান্য প্রাণী দ্বারা গর্ত করতে না পারে। ৩· সূর্যের আলো কমপক্ষে ৮ ঘন্টা থাকতে হবে। কেননা আলো ছাড়া পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় না। খোলামেলাভাবে বাতাস চলাচল না করলে অক্সিজেনের অভাব হবে এবং গলদা ও মাছের রোগ আক্রমণের আশংকা বেড়ে যাবে।
৪· পাড়ের নিচে বকচর থাকলে পাড় কম ভাঙ্গবে, বকচরের উপর খাদ্য দেয়া যাবে, বকচরের উপর দাঁড়িয়ে হররা ও জাল টানা সহজ হবে।
৫· পানির সুব্যবস্থার জন্য মটর কিংবা শেলো মেশিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬· পুকুরের তলদেশ সমান হলে জাল টানা ও মাছ ধরা সহজ হবে।
৭· জলাশয়ে পানির গভীরতা ৩ থেকে ৪ ফুট হবে এবং বেশি গভীর হলে উৎপাদন কমে যাবে। ৮·পানির আগমন ও নির্গমন মুখে অবশ্যই প্রতিবন্ধক স্থাপন করতে হবে।
৯· ভাল উৎপাদন পাওয়ার জন্য আগাছা পরিষ্কার করা আবশ্যক।
১০· অবাঞ্চিত কিছু যাতে না থাকে তার জন্য পুকুর শুকিয়ে এবং বিষ প্রয়োগ যেমন, রোটেনন পাউডার, চা বীজের খৈল, ক্যালসিয়াম কারবাইড ইত্যাদি ব্যবহার করে দূর করতে হবে।
১১· চুন প্রয়োগ করে মাটি ও পানির অম্লত্ব নিরপেক্ষ রাখতে হবে।
১২· পরিমিত মাত্রায় সার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
১৩· প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
১৪· পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করতে হবে।
১৫· খোলস বদলের সময় আশ্রয়স্থল স্থাপন করতে হবে।
গলদা চিংড়ি উৎপাদনে পানির সবচেয়ে উপযুক্ত গুণাগুণগুলো হলঃ তাপমাত্রা ২৫-৩১ ডিগ্রী সে· দ্রবীভূত অক্সিজেন ৫ পিপিএম তদুর্ধ্বê, লবণাক্ততা ০-৮ পিপিটি, সামগ্রিক ক্ষারত্ব ১০০-১৬০ পিপিএম, সমাগ্রিক খরতা ১০০ পিপিএম এর নিচে, আন-আয়োনাইজড এ্যামোনিয়া ০·০১ পিপিএম এর কম, হাইড্রোজেন সালফাইডের অনুপস্থিতি এবং লৌহ ১ পিপিএম এর কম।
গলদার খাদ্য উপাদানঃ গলদা চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির জন্য খাদ্যোপাদান এমনভাবে বাছাই করতে হবে যাতে সেগুলোতে আমিষ, স্নেহ, শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ প্রয়োজনীয় পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। গলদা চিংড়ির খাদ্য তৈরিতে সচরাচর ব্যবহারযোগ্য উপাদানগুলো হলঃ ফিশ মিল, রেশমকীট মিল, চিংড়ির গুঁড়া, শামুকের মাংস, কাঁকড়ার গুঁড়া, সয়াবিন খৈল, সরিষার খৈল, ভুট্রা, চালের কুঁড়া, গমের ভুষি, আটা, চিটাগুড়, ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ ইত্যাদি।
পুকুরে গলদা চিংড়ি ও মাছের মিশ্রচাষ সম্পর্কিত পুি-কায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক বলেন, রুই জাতীয় ও অন্যান্য মাছ থেকে চিংড়ির জীবনযাপন ও চাষ পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় চিংড়ি চাষে চাষিদের পর্যাপ্ত কারিগরি জ্ঞানের অভাবে অনেকে চিংড়ি চাষে লাভবান হতে পারে না। ফলে তারা চিংড়ি চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তাই পুকুরে গলদা ও মাছের মিশ্রচাষ সম্পর্কিত লেখাটি মৎস্য চাষিভাইদের সহযোগী হবে বলে আশা করি এবং এভাবে পুকুরে গলদা চিংড়ি ও মাছের মিশ্রচাষ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।
- মোঃ শাহীন আলম, বাকৃবি, ময়মনসিংহ
মিশ্র চাষের জন্য পুকুর তৈরিঃ গলদা চিংড়ি চাষের জন্য পুকুর তৈরির সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে-
১· খামারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিষ্কাশন ও সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
২· পুকুর পাড়ের আবেষ্টনী বন্যার পানির সর্µোচ্চ উচ্চতা হতে প্রায় দেড় ফুট উঁচু হতে হবে, মাথা চওড়া এবং ঢাল এঁটেল অথবা দো-আঁশ হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কাঁকড়া, ইঁদুর বা অন্যান্য প্রাণী দ্বারা গর্ত করতে না পারে। ৩· সূর্যের আলো কমপক্ষে ৮ ঘন্টা থাকতে হবে। কেননা আলো ছাড়া পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় না। খোলামেলাভাবে বাতাস চলাচল না করলে অক্সিজেনের অভাব হবে এবং গলদা ও মাছের রোগ আক্রমণের আশংকা বেড়ে যাবে।
৪· পাড়ের নিচে বকচর থাকলে পাড় কম ভাঙ্গবে, বকচরের উপর খাদ্য দেয়া যাবে, বকচরের উপর দাঁড়িয়ে হররা ও জাল টানা সহজ হবে।
৫· পানির সুব্যবস্থার জন্য মটর কিংবা শেলো মেশিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬· পুকুরের তলদেশ সমান হলে জাল টানা ও মাছ ধরা সহজ হবে।
৭· জলাশয়ে পানির গভীরতা ৩ থেকে ৪ ফুট হবে এবং বেশি গভীর হলে উৎপাদন কমে যাবে। ৮·পানির আগমন ও নির্গমন মুখে অবশ্যই প্রতিবন্ধক স্থাপন করতে হবে।
৯· ভাল উৎপাদন পাওয়ার জন্য আগাছা পরিষ্কার করা আবশ্যক।
১০· অবাঞ্চিত কিছু যাতে না থাকে তার জন্য পুকুর শুকিয়ে এবং বিষ প্রয়োগ যেমন, রোটেনন পাউডার, চা বীজের খৈল, ক্যালসিয়াম কারবাইড ইত্যাদি ব্যবহার করে দূর করতে হবে।
১১· চুন প্রয়োগ করে মাটি ও পানির অম্লত্ব নিরপেক্ষ রাখতে হবে।
১২· পরিমিত মাত্রায় সার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
১৩· প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
১৪· পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করতে হবে।
১৫· খোলস বদলের সময় আশ্রয়স্থল স্থাপন করতে হবে।
গলদা চিংড়ি উৎপাদনে পানির সবচেয়ে উপযুক্ত গুণাগুণগুলো হলঃ তাপমাত্রা ২৫-৩১ ডিগ্রী সে· দ্রবীভূত অক্সিজেন ৫ পিপিএম তদুর্ধ্বê, লবণাক্ততা ০-৮ পিপিটি, সামগ্রিক ক্ষারত্ব ১০০-১৬০ পিপিএম, সমাগ্রিক খরতা ১০০ পিপিএম এর নিচে, আন-আয়োনাইজড এ্যামোনিয়া ০·০১ পিপিএম এর কম, হাইড্রোজেন সালফাইডের অনুপস্থিতি এবং লৌহ ১ পিপিএম এর কম।
গলদার খাদ্য উপাদানঃ গলদা চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির জন্য খাদ্যোপাদান এমনভাবে বাছাই করতে হবে যাতে সেগুলোতে আমিষ, স্নেহ, শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ প্রয়োজনীয় পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। গলদা চিংড়ির খাদ্য তৈরিতে সচরাচর ব্যবহারযোগ্য উপাদানগুলো হলঃ ফিশ মিল, রেশমকীট মিল, চিংড়ির গুঁড়া, শামুকের মাংস, কাঁকড়ার গুঁড়া, সয়াবিন খৈল, সরিষার খৈল, ভুট্রা, চালের কুঁড়া, গমের ভুষি, আটা, চিটাগুড়, ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ ইত্যাদি।
পুকুরে গলদা চিংড়ি ও মাছের মিশ্রচাষ সম্পর্কিত পুি-কায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক বলেন, রুই জাতীয় ও অন্যান্য মাছ থেকে চিংড়ির জীবনযাপন ও চাষ পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় চিংড়ি চাষে চাষিদের পর্যাপ্ত কারিগরি জ্ঞানের অভাবে অনেকে চিংড়ি চাষে লাভবান হতে পারে না। ফলে তারা চিংড়ি চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তাই পুকুরে গলদা ও মাছের মিশ্রচাষ সম্পর্কিত লেখাটি মৎস্য চাষিভাইদের সহযোগী হবে বলে আশা করি এবং এভাবে পুকুরে গলদা চিংড়ি ও মাছের মিশ্রচাষ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।
- মোঃ শাহীন আলম, বাকৃবি, ময়মনসিংহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন