ছাদে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ
ছাদে লাউসহ শীত মৌসুমের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে আশেপাশের সবাইকে চমকে দিয়েছেন ঢাকার মগবাজারের এম· এ· সালাম ও মোঃ সেলিম নামের দুই ভাই। শুধু পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে তারা করছেন এসব। এম· এ· সালাম ও আর মোঃ সেলিম দু’ভাই-ই ছিলেন দীর্ঘদিন দেশের বাইরে। দেশে ফিরে আসার পর দুই ভাই মিলে মগবাজারের চারতলার নিজস্ব বাড়ির ছাদে সময় কাটানোর জন্য গড়ে তোলেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান। প্রথমে শখের বশে বাগান করলেও পরে এ বাগান থেকে তিনি অর্থনৈতিক সহযোগিতা পান। অর্থনৈতিক সহযোগিতা তাদের জন্য বড় না হলেও তারা তাদের পরিবারের জন্য পাচ্ছেন নির্ভেজাল শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফলমূল। তবে এখানে বর্তমানে প্রাধান্য পাচ্ছে লাউগাছ আর্থাৎ প্রতি বছরই আলাদাভাবে শীতের সবজির আবাদ করেন তারা। গতবার করেছিলেন টমেটো আর সিম, ফলনও পেয়েছিলেন প্রচুর। এ বছর করেছেন লাউ। এ পর্য- প্রায় দুই শতাধিক লাউ ফললেও একটাও বাজারে বিক্রি করেননি। কেন বিক্রি করেননি সে সম্পর্কে এম· এ· সালামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের কোনকিছুরই অভাব নেই। কিন্তু যেটার সবার সবচেয়ে বড় অভাব রয়েছে সেটা হল বিষমুক্ত শাকসবজি। আমি না হয় সারা শীতকাল ধরে নিজের বাগানের বিষমুক্ত শাকসবজি খেলাম। অন্যরা কিন্তু সেটা পারে না। তাই আমি যথাসম্ভব আমার আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিষমুক্ত শাকসবজি দিয়ে থাকি। আমাদের মত অন্যেরাও যদি এমন উদ্যোগ নিত তাহলে আমাদের পরিবারগুলো অ-ত বাজারের বিষাক্ত সবজি কেনা ও খাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারতো।”
স্বাস্থ্য সচেতন মোঃ সেলিমের সাথে কথা বলতে গেলে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমরা বাজার থেকে যেসব শাকসবজি কিংবা ফলমূল কিনে খাই তা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। কীটনাশকের প্রভাবে যকৃতি, পাকস্থলীতে ক্যান্সারসহ মারাত্মক অসুখ-বিসুখ হয়। তাই সব সময় চেষ্টা করি নির্ভেজাল খাদ্য খেতে। সরকারের এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে যাতে কেউ ফলমূল ও শাকসবজি বিষযুক্ত না করে।”
২০০৩ সাল থেকে ছাদে বাগান শুরু করেন এম· এ· সালাম ও মোঃ সেলিম। প্রথমে সৌন্দর্য বর্ধন হিসেবে গাছ লাগালেও বর্তমানে অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাচ্ছেন খুব। বর্তমানে বাগানে লেবু, কলা, কুল, পেঁপেসহ লাউ, সিম, টমেটো, পেয়ারা, সৌন্দর্যবর্ধনকারী বিভিন্ন ফুলের গাছ আছে। সকালে-বিকালে ও সন্ধ্যায় এখানে আসে নানা ধরণের পাখি। কিচির-মিচির শব্দে মুখোরিত হয়ে ওঠে ছাদ। শহরে থেকেও পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙ্গে বাসার সবার। তাছাড়া বিকেলবেলায় ছাদে ঘুরতে গেলে সবুজের সমারোহ দেখে মন ভরে যায়। সবগুলো গাছই লাগানো হয়েছে টবে।
১৩০০ স্কয়ার ফিটের বাগানে কখনও তারা রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। কচুরীপানা, গোবর, ছাই, তরিতরকারীর খোসসহ ইত্যাদি দিয়ে জৈব সার তৈরি করেন। ফলমূল ও শাকসবজির গাছের গোড়ায় এই জৈবসারই তারা ব্যবহার করে থাকেন। পোকামাকড় দমন করতেও তারা রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। নিমপাতার রস, ছাই, হাতজাল ইত্যাদি দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে বালাইদমন করে থাকেন। পাশাপাশি আশপাশের যারা বাগান করতে ইচ্ছুক তাদের সবাইকে বলেন- জৈব সার দিয়েই চাষাবাদ করতে। জৈব সার যেমন গাছপালাকে বিষমুক্ত রাখে; তেমনি শাকসবজি ও ফলমূল থাকে বিষক্রিয়াহীন। যার কারণে মানুষের শরীরের কোন ক্ষতি করেন না।
- সাহারা তুষার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন