রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০০৮

একই সাথে বাদাম ও রসুনের চাষ


একই সাথে বাদাম ও রসুনের চাষ





আমাদের দেশের অধিকাংশ চরাঞ্চলেই কৃষকরা কোন ফসল চাষ করবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না। আবার ঠিকমত ফসল নির্বাচন না করতে পারায় আর্থিক ক্ষতিরও শিকার হন তারা। বন্যার পানি নেমে যাবার পর এসব চরাঞ্চলের জমি অত্য- উর্বর হয়ে যাওয়ায় এখানে উপযুক্ত ফসল চাষ করে কৃষকদের লাভবান হবার সম্ভাবনা অনেক। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিশাল হাওর এলাকাতেও এই সম্ভবনা প্রবল। জলবায়ুজনিত পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য এসব অঞ্চলে ফসল বৈচিত্র আনা দরকার। যেসব ফসল চাষ করে বেশি লাভ হতে পারে অথচ ঝুঁকি কম সেসব ফসল যেমন- ডাল (মুগ, মসুর, খেসারি, মটর ইত্যাদি), তৈলবীজ (সরিষা, বাদাম, সূর্যমূখী, সয়াবিন ইত্যাদি), মসলা জাতীয় ফসল (আদা, রসুন, মরিচ) এবং সবজি জাতীয় ফসল চাষাবাদের দিকে কৃষকরা এগিয়ে যেতে পারে। আবার একটি ফসলের সাথে অন্যান্য সাথী ফসলের আবাদও অনেক বেশি লাভজনক হতে পারে। এমনই দু’টি আ-ঃফসল হল চীনাবাদাম ও রসুন। মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) পর্য- এই ফসল দু’টি বপনের উপযুক্ত সময়। সে হিসেবে এখন বাদাম-রসুন বপনের আদর্শ সময় চলছে।
জমি তৈরিঃ বন্যার পানি নেমে যাবার পর পরই সেখানে মাটিতে যথেষ্ট রস থাকে এমন বেলে দো-আঁশ মাটিকে চীনাবাদাম ও রসুন চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। জমি ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে একেবারে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। বীজ বপনের আগে জমিতে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। জমিতে শেষ চাষের আগে পরিমিত পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ এই আবাদে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা আবশ্যক। সারের মাত্রা মাটির উর্বরতা ভেদে সামান্য কমবেশি হতে পারে। তবে আদর্শ মাত্রা হতে পারে- ইউরিয়া ১৩-১৫ কেজি, এমওপি ২১-২২ কেজি, টিএসপি ১১-১২ কেজি, জিপসাম ২২-২৩ কেজি, জিংক অক্সাইড ১/২-১ কেজি এবং বরিক এসিড সর্বোচ্চ দেড় কেজি দেয়া যেতে পারে। বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ৯ কেজি ইউরিয়া এবং অন্যান্য সারের সবটুকু জমি তৈরির শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ইউরিয়া দুই কিি-তে চারা গজানোর ২৫ ও ৫০ দিন পর শুধু সারি রসুনের মাঝামাঝি জায়গায় ছিটিয়ে উপরি প্রয়োগ করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এ সময়ে জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে। তবে মিশ্র হিপ কম্পোস্ট কিংবা কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের মাত্রা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
বীজ ব্যবস্থাপনাঃ ঢাকা-১, ঝিংগাবাদাম, ডিজি-২, বারি চীনাবাদাম-৫ এবং বারি চীনাবাদাম -৬ জাতের সাথে রসুনের প্রচলিত জাত নির্বাচন করা যেতে পারে। প্রতিবিঘা জমির জন্য ১৫ কেজি চীনাবাদম এবং ৬৭ কেজি রসুনের দরকার হবে। বপনের ক্ষেত্রে দুই সারি বাদামের মাঝে দুই সারি রসুনের চারা লাগাতে হবে। চীনাবাদামের সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০ সেঃ মিঃ এবং সারিতে ১৫ সেঃ মিঃ পরপর বীজ বপন করতে হবে। রসুনের এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ১৫ সেঃ মিঃ এবং সারিতে এক গাছ থেকে অন্য গাছের দূরত্ব ১০ সেঃ মিঃ রাখতে হবে। চারা লাগানোর সময় প্রতি গোছায় ১টি রসুনের কোয়া লাগাতে হবে। চীনাবাদাম রসুনের বীজ বপনের পর সারি মাটি দিয়ে ভালভাবে ঢেকে দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকলে সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে বৃষ্টিপাত খুব কম হলে ১ থেকে ২ বার সেচের দরকার হতে পারে। সেচ দেয়ার পর জোঁ আসার সাথে সাথে সারির মাটি কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে গাছের শেকড় নষ্ট না হয়।
ফসল সংগ্রহঃ রসুন ৮৫ থেকে ৯০ দিন বয়স হলে কর্তন করা যায়। রসুনের আকার বড় হলে সংগ্রহ করা উচিত। চীনাবাদাম পরিপক্ক হতে ১৪০ থেকে ১৫০ দিন সময় লাগে। চীনাবাদামের শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগই পরিপক্ক হলেই ফসল তুলতে হয়। ফসল তোলার পর চীনাবাদামের বীজ ভালভাবে রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা ৮ থেকে ১০% এর নীচে নামিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়।
উপরোক্ত নিয়মকানুন সঠিকভাবে পালন করলে হেক্টরপ্রতি একই সাথে দুই থেকে আড়াই টন রসুন এবং দেড় থেকে দুই টন চীনাবাদাম উৎপাদন করা সম্ভব।
রসুন ক্ষেতে সাধারণত রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয়। সে হিসেবে চীনাবাদামেও রোগের আক্রমণ কম হওয়ার কথা। তারপরও কোন রোগ বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হলে সাথে সাথে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিতে হবে।

- মাজহার মিলন

কোন মন্তব্য নেই: