সরিষার চাষ পদ্ধতি
জমি ও মাটিঃ এঁটেল দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ এবং দো-আঁশ মাটিতে সফল ও অগ্রাণী জাতের সরিষা চাষ করা যায়। জমিতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।বীজ বপনের সময়ঃ অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের মধ্যে বীজ বপন শেষ করতে হবে। জমি তৈরিঃ জমিতে জো আসার পর মাটির প্রকারভেদে ৪-৬টি চাষ ও মই দিয়ে বীজ বপন করতে হবে। মাটিতে রসের অভাব হলে বীজ বপনের আগে হালকা সেচ দিতে হবে। সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ ছকে দেয়া হলো।
এতে ফলন ২৫০০ কেজি পর্যন্তô পাওয়া যেতে পারে। সার প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে পরিচর্যাও অনুসরণ করতে হবে। সারের নাম সারের পরিমাণ (কেজি/হেক্টর)ইউরিয়া ২৬৫-২৮০ কেজিটিএসপি ১৭৫-১৮০ কেজিমিউরেট অব পটাশ ৫০-৬৫ কেজিজিপসাম ২৫০-২৯০ কেজিসরিষার জমিতে সালফার (জিপসাম) প্রয়োগ উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্তô বাড়াতে পারে। সার প্রয়োগ ও সেচ অনুক্রম , কেজি/হেক্টরসারের নাম সার প্রয়োগের সময় জমি তৈরি ৩৫-৪০ দিন বয়স ৪০-৬০ দিন বয়সজৈব সার ৭-৮ইউরিয়া ১৩৫ ১৩৫টিএসপি ১৭৫এমপি ৬০-৭০জিপসাম ১২৫-১৫০ঘাটতি দেখা দিলে বোরাক্স ৫ (স্প্রে) ৫ (স্প্রে)ডলোচুন ৩০০ মলিবডেনাম ১ (স্প্রে) (স্প্রে)পানি সেচ প্রথমবার দ্বিতীয়বারএকবার
১· অর্ধেক পরিমাণ ইউরিয়া এবং সব টিএসপি, এমপি ও জিপসাম সার জমি তৈরির সময় মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
২· বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিন পর যখন গাছে দুই-চারটি করে ফুল আসা শুরম্ন হয় তখন ছিটিয়ে দিতে হবে।
৩· ভোরে গাছের পাতায় কুয়াশা থাকে এবং সার গাছের পাতায় লেগে পাতা পুড়ে যেতে পারে, সে জন্য বিকালে সার ছিটাতে হবে।বপন বীজ পদ্ধতিবীজ ছিটিয়ে বা সারিতে বপন করা যায়। সারিতে বপন করলে লাঙলের নালা কেটে গর্ত করে গর্তে বীজ ফেলে তা ভালোভাবে মাটিতে ঢেকে দিতে হবে।সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেন্টিমিনার। সারিতে চারার দূরত্ব ৪-৫ সেন্টিমিটার রাখতে হবে। ছিটিয়ে বপন করলে ভালোভাবে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে। গাছ বেশি ঘন হলে গজানোর ৭-১০ দিন পর চারা পাতলা করে দিতে হবে। চারা ভালোভাবে গজানোর জন্য ৩-৪ সেন্টিমিটার মাটির নিচে বীজ বোনা দরকার। বীজের পরিমাণছিটিয়ে বপন ৭·০-৮·০ কেজি/হেক্টরসারিতে বপন ৪-৬ কেজি/হেক্টরজমিতে আগাছা দেখা দিলে বীজ গজানোর ২০-২৫ দিনের মধ্যে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। পানি সেচচারা গজানোর ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে একটি সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তর অঞ্চলে বীজ বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে একটি এবং তারও ২০-২৫ দিন পর আর একটি সেচের প্রয়োজন হয়।রোগ দমনবিনা সরিষার বীজ ব্যাভিস্টিন (২·৫ গ্রাম/কেজি) বা বেনলেট (১·৫ গ্রাম/কেজি) দিয়ে শোধন করতে হবে। অল্টারনারিয়া রোগের আক্রমণ বেশি দেখা দিলে ডায়াথেন এম ৪৫ বা রোভরাল স্প্রে করতে হবে। ফুল ধরা শেষ হলে ১৫ দিন পর পর দুবার স্প্রে করলেই হবে। পোকা দমনজাব পোকার আক্রমণ হলে সরিষার ফলন কমে যায়।ফুলের কুঁড়ি আসা শুরম্ন হলে এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এ ড়্গেত্রে ডাইমেক্রন ১০০ ইসি বা ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রভৃতি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।মৌমাছি সরিষা গাছের পরাগায়নে সাহায্য করে এবং এতে ফলন বৃদ্ধি পায়।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তô সরিষা ফুলে অধিক সংখ্যক মৌমাছি মধু সংগ্রহের জন্য বিচরণ করে। তাই বিকালে যখন ড়্গেতে মৌমাছি থাকে না তখন কীটনাশক ছিটাতে হবে।তেলবীজ তথা সরিষার কীটনাশক ও রোগনাশক প্রয়োগের বিস্তôারিত বিবরণ ভিন্ন অধ্যায়ে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে সুনির্দিষ্ট কীটনাশক নির্বাচন করে এর প্রয়োগ পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণ চাষ পদ্ধতিতেও রোগ-পোকা দমনের বিবরণ দেয়া হয়েছে। ফসল সংগ্রহ, মাড়াই ও সংরড়্গণসরিষা গাছের ফল তথা সিলিকুয়া হলুদ রঙের হলে ফসল তুলতে হবে। মাটি নরম থাকলে সরাসরি গাছের গোড়া ধরে টেনে শিকড়সহ তোলা যায়। এ জাতটির বৈশিষ্ট্য হলো টেনে তুললেও বীজ ঝরে পড়ে না।
অন্যথায় কাঁচি দিয়ে মাটির ঠিক উপরিভাগে গাছের গোড়া কেটে দিতে হবে। তারপর ভালোভাবে শুকিয়ে বীজ সংগ্রহ করে ৪-৫ দিন রোদে শুকিয়ে সংরড়্গণ করতে হবে। ১০· ফলনএ জাতটির গড় ফলন ২·৫ টনের মতো। বীজ তেলের পরিমাণও বেশি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন