শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০০৮

‘কটরাপারি’ খরচ সাশ্রয়ী দোফসলি জাতের ধান


‘কটরাপারি’ খরচ সাশ্রয়ী দোফসলি জাতের ধান



পোকার আক্রমণের কারণে বিস্তীর্ণ আমনক্ষেত সাবাড় হচ্ছে। ধানক্ষেতের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। কীটনাশক ছিটিয়ে কাজ হয় না, একটু দমন হলেও আবার দ্বিগুণ তেজে পোকার আক্রমণ শুরু হয়ে যায়, সেচ সুবিধা, অসুবিধাসহ নানা কারণে উৎপাদন খরচ উঠবে কি না, বেশির ভাগ চাষির মধ্যে প্রায়ই দেখা যায় দুশ্চিন্তা আর হাহাকার। ধান চাষের ক্ষেত্রে বাস্তব চিত্রটি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র দেখা গেলেও আমন ধানের ফলন নিয়ে মোটেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন না পীরগঞ্জ উপজেলার কলিযুগ গ্রামের কৃষক বিমল চন্দ্র দেব শর্মা।
‘কটরাপারি’ নামের একটি অপরিচিত স্থানীয় জাতের ধান চাষ করতে পেরে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। বোরো মৌসুমে বিঘাপ্রতি ৪৭ মণ এবং আমন মৌসুমে প্রতি বিঘায় ২৮ থেকে ৩২ মণ ফলন পেয়েছেন তিনি। ধানের এ আশাতীত ফলন দেখে অনেকের অজান্তেই আশপাশের দশ গ্রামের অনেক চাষির মধ্যে এ ধান চাষে দেখা দিয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।
ঠাকুরাগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কলিযুগ গ্রামের বিমল চন্দ্র দেব শর্মা। তাঁর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল তাঁর আবাদি জমির পরিমাণ ৩০ বিঘা। প্রতি বছর আমন মৌসুমে তিনি তাঁর জমিতে স্বর্ণা, বিআর-৪১, পাইজাম আর বোরো মৌসুমে চায়না, মালা, ব্রিধান-২৮ প্রভৃতি জাতের এক ফসলি জাতের ধান চাষ করে ফলনও পেতেন আর দশ জন চাষির মতোই। তাই তিনি তাঁর জমি থেকে তেমন একটা লাভবান হতে পারেননি। উৎপাদন খরচেই পুঁজি শেষ হয়ে যায়। এত জমি থেকেও সামলিয়ে উঠতে তাঁকে হিমশিম খেতে হতো।
বিমল চন্দ্র তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে এক মণ ‘কটরাপারি’ জাতের ধানের বীজ নিয়ে আসেন গত বছর কার্তিক মাসে। তিনি জানান, ওই বছরের অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহে বীজতলায় ধানবীজ বোনেন এবং দেড় মাসের মাথায় চার বিঘা জমিতে ধানের চারাবীজ রোপণ করেন। সাড়ে তিন মাসের মাথায় বৈশাখের মাঝামাঝিতে ধান কাটেন। চার বিঘা জমি থেকে বিঘাপ্রতি (৫০ শতকের বিঘা) গড়ে ৪৭ মণ করে ফলন পান এবং তিনি অবাক হন। অবাক হয় আশপাশের অন্য চাষিরাও। বিমল চন্দ্র দেব শর্মা ওই ধান শুকিয়ে রাখেন এবং বীজের মতোই মাঝেমধ্যে রোদে দেন। এভাবে বৈশাখ মাসে উৎপাদিত ধানের বীজ করে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজতলায় বোনেন তিনি। আট থেকে ১০ দিনের মাথায় অঙ্কুরিত হয় বীজতলার বীজ। আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহে চারাবীজ রোপণ করেন ও সাড়ে তিন মাসের মাথায় আশ্বিন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ধান কাটা শুরু করেন এবং বিঘাপ্রতি ২৮ থেকে ৩২ মণ ফলন পান। ‘কটরাপারি’ মঙ্গা মোকাবিলার জন্য উৎকৃষ্ট ধান। এ এলাকার অন্য সব জাতের ধানকে আড়াল করে কটরাপারি মাঠপর্যায়ে এক বিশেষ জায়গা করে ফেলছে এ কথা অনস্বীকার্য। উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ জাতকে উন্নত জাতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই: