অপ্রচলিত ফসল চিনা চাষ
অপ্রচলিত ফসল চিনা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। এমন কি যারা কৃষি কাজের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত তাদের অনেকেও চিনা নামের ফসলটিকে তেমন একটা চিনেন না। বাংলাদেশের এই অপ্রচলিত ফসলটি অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই সম্ভাবনাময়। স্বল্প পরিশ্রম ও যে কোন ধরণের মাটিতে চিনা চাষ করা যায়। বিশেষ করে চরাঞ্চল এবং অন্যান্য অনুর্বর জমিতে সহজেই চিনা চাষ করা যেতে পারে।
বেলে দো-আঁশ জমি যেখানে পানি জমে না এমন জমিই চিন চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীতে জেগে উঠা চরাঞ্চলে চিনা খুব ভাল জন্মে। পরিকল্পিতভাবে চিনা চাষের উদ্যোগ নেয়া হলে এই ফসলটি আমাদের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন। আমাদের দেশে কাউন জাতীয় যে কটি ফসল আছে তার মধ্যে চিনা অন্যতম। চিনা মৌসুমী ফসল। সাধারণত নভেম্বর হতে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় পর্য- চিনা চাষ করা যায়। অন্যান্য ফসলের মত চিনা ছিটিয়ে বোনা যায়। আবার সারি পদ্ধতিতেও চিনা চাষ করা যায়। তবে ছিঁটানো পদ্ধতির চেয়ে সারি আকারে চিনা চাষ করাই উত্তম। এতে ফসল ভাল হবার সম্ভবনা থাকে। প্রতি হেক্টরে ১৮ হতে ২০ কেজি বীজ বপন করতে হয়। সার ব্যবহার না করেও চিনা চাষ করা যায়।
তবে ভাল ফলন পেতে হলে পরিমিত পরিমাণে সার ও পানি সেচ দিতে হবে। উন্নতজাতের বীজ বপন করলে ভাল ফলন আশা করা যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বেশ কটি ভাল জাতের চিনা উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে তুষার জাত অন্যতম। এটি ১৯৭২ সালে ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে আনা হয়। পরবর্তীতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৯৮৯ সালে তা বাংলাদেশে চাষের জন্য অনুমোদন করা হয়। দেশে যে সব জাতের চিনা আবাদ হয় ‘তুষার’ তার চেয়ে যে কোন বিচারেই উল্লেখের দাবি রাখে। এটি উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধক এবং দ্রুত বর্ধনশীল। স্থানীয় যে কোন জাতের চেয়ে ‘তুষার’ জাতের চিনার ফলন ৩৫ হতে ৪০ শতাংশ বেশি হয়। প্রায় ১০ হতে ১৫ দিন আগে ফসল তোলা যায়। প্রতি হেক্টর আড়াই হতে ৩ টন ফলন পাওয়া যেতে পারে। চিনা পাকার সাথে সাথেই ক্ষেত থেকে তুলে আনতে হয়। কারণ এই ফসলটি সামান্যতেই মাটিতে পড়ে যায়। আমাদের দেশে যেহেতু চিনা অপ্রচলিত একটি ফসল তাই এর ব্যবহার সম্পর্কেও আমরা তেমন একটা সচেতন নই।
চিনা দিয়ে পায়েস রান্না করা যায়। এ ছাড়া নাড়-, মোয়া, খিচুরি ও নানা ধরনের পিঠা ও নানা ধরণের খাবার তৈরি করা যায়। কবছর আগের এক পরিসংখ্যান হতে জানা গেছে, বাংলাদেশে মোট ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে চিনা চাষ করা হয়। এত ফলন পাওয়া যায় ১৩ হাজার টন। উদ্যোগ নিলেই চিনা চাষের পরিমাণ ও উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ানো যেতে পারে।
- এম· এ· খালেক, ঢাকা
- এম· এ· খালেক, ঢাকা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন