রবিবার, ১ মার্চ, ২০০৯

আদা উৎপাদনে বীজ শোধন প্রযুক্তি

আদা উৎপাদনে বীজ শোধন প্রযুক্তি



‘পিলাই তোলা’ শব্দটি আমাদের সবার জানা। এর অন্তরালে জড়িয়ে আছে একটি ফসলের নাম। আর তা হল নীলফামারী জেলা প্রসিদ্ধ অর্থকরী মসলা ও ওষুধি ফসল আদা। এ জেলা ছাড়াও দেশের দিনাজপুর, রংপুর, টাঙ্গাইল, খুলনা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি জেলায় আদার চাষাবাদ হয়। টাটকা আদায় শতকরা ২·৩ ভাগ প্রোটিন, ১২·৩ ভাগ শ্বেতসার, ২·৪ ভাগ আঁশ, ১·২ ভাগ খনিজ পদার্থ, ৮০·৮ ভাগ পানি, রেজিন ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান। দেশের বাৎসরিক চাহিদা ৯৬·০০০ মে· টনের মাত্র ৪৩·০০০ মে· টন আদা উৎপন্ন হয় যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। আদা চাষাবাদের প্রযুক্তিলব্ধ জ্ঞানের অভাবে কৃষক পর্যায়ে ফলস প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টনের পরিবর্তে কমিয়ে ৫·৫৪ টনে দাঁড়িয়েছে। কাজেই, উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষে বীজ আদা শোধন প্রযুক্তি অত্যন্ত জরুরি।

কেন আদা বীজ শোধন করবেনঃ সাধারণত ৪৫-৫০ গ্রাম আকারের বীজ আদা এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মে মাস পর্যন্তô রোপণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ২০০০-২৫০০ কেজি আদা বীজ প্রয়োজন। আদা বীজ উত্তমরূপে শোধন না করলে রইজম রট, পাতার ব্লাইড, রাইজম ফ্লাই, প্রভৃতি রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। রাইজম রটের আক্রমণে প্রথমে আদা গাছের কাণ্ড হলুদ হয়ে যায়; রাইজম পচে সম্পূর্ণ গাছ মারা যায়। মাটির আর্দ্রতা বেশি থাকায় এবং মাঝারি বৃষ্টিপাতের জন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও এ রোগ দমন করা যায় না। ফলে মাঝারি উঁচু জমিতে ফসল প্রায় শূন্যের কোঠায় দাঁড়ায়। পাতায় অনেক সময় ডিম্বাকৃতির দাগ দেখা যায়। দাগের মাঝে সাদা বা ধূসর রঙ হয়। পরে আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায় এবং গাছ মারা যায়। রোগাক্রান্ত রাইজম ও গাছে আদার প্রধান ক্ষতিকারক পোকা ‘রাইজম প্লাই’ -এর আক্রমণ বাড়ে। তাই রোগ-বালাইয়ের সংক্রমণ ঠেকাতে বীজ আদা শোধনের গুরুত্ব অনেক বেশি।

আদা বীজ শোধন প্রক্রিয়াঃ ৭৫-৮০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে -এর মধ্যে ১০০ কেজি আদা বীজ ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। তারপর পানি থেকে বীজ আদা তুলে ছায়ায় শুকিয়ে জমিতে লাগাতে হবে। আদা লাগানোর আগে বীজ আদা একটি ঝুড়িতে বিছিয়ে তার উপর খড় বা চটের থলে দিয়ে ঢেকে রাখলে আদার ভ্রুণ বের হয়। এ রকম আদা থেকে দ্রুত গাছ বের হয়।

শোধিত আদা বীজ রোপণের প্রায় ৭-৮ মাস পর ফসল পরিপক্ক হয়। সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে আদা উত্তোলন করা হয়। রোপণের পূর্বে রাইজম শোধন করলে ফসল ক্ষতিকারক রোগ জীবাণু ও পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পায়। সেই সাথে বিজ্ঞানসম্মত অন্তঃপরিচর্যার মাধ্যমে ফলন লক্ষ্যমাত্রা (৩০ থেকে ৩৫ টন/ হেক্টর) পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব।
কৃষিবিদ মোঃ রবিউল ইসলাম

কোন মন্তব্য নেই: