রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০০৮

ভেষজ উদি্‌ভদের সম্ভাবনা


ভেষজ উদি্‌ভদের সম্ভাবনা



লোকসংখ্যার একটা বড় অংশ তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো যেমন- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা থেকে কোন না কোনভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্ষুধায় যেখানে দু’বেলা দু’মুটো ভাত জোটে না সেখানে রোগ-ব্যাধিতে উচ্চমূল্যে ওষুধ কিনে খাওয়া অসহায় দরিদ্রপীড়িত মানুষের কাছে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যে কারণে অনেককেই অসুখ-বিসুখ নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। এটা আমাদের জন্য যেমন দুর্ভাগ্যের তেমনি বিশ্বের সভ্য মানবতার কাছে অপমানজনক।

আসলে আমরা মুখে অনেক কথা বলি ঠিকই, কিন্তু প্রতিকারের কোন গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করার চেষ্টা করি না, তাই আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার কোন উন্নতি হচ্ছে না। আমাদের দেশে যে ভেষজ সম্ভার রয়েছে তা অবহেলাতে নষ্ট হচ্ছে। আমরা একটু খেয়াল করলেই আমাদের চারপাশে অনেক গাছপালা লতাগুল্ম দেখতে পাই সেগুলোর কোন না কোন ওষুধি গুণ রয়েছে। বর্হিবিশ্ব যখন বিজ্ঞানের অগ্রগতি আর জয়যাত্রা নিয়ে মাতামাতি ঠিক তখনি আমাদের দেশের মানুষেরা আধুনিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গাছগাছরা আর লতাগুল্ম ব্যবহার করে রোগব্যাধির হাত থেকে কোন রকমে বাঁচার জন্য সংগ্রাম করছে। আমাদের দেশে আধুনিক চিকিৎসা কত ব্যয়বহুল তা আমরা সবাই জানি। প্রতি বছর বিনা চিকিৎসায় আমাদের দেশের বহুলোক অসময়ে ঝরে যাচ্ছে। কারণ তারা নামি কোম্পানির দামি ওষুধ কিনে খেতে পারে না। তবে আমরা একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, বর্তমান সময়েও আমাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ রোগব্যাধিতে গাছগাছরা লতাগুল্ম ব্যবহার করে বেঁচে থাকে। এটা আসলে আধুনিকমনাদের কাছে অনেকটা অবা-ব। কারণ তারা আধুনিক যুগের অবদানে সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে গ্রামের লোকদের দুঃখ বুঝার সুযোগ পায় না।

আমাদের দেশের পরিত্যক্ত লতাপাতা, গাছের শিকড়, ছাল বেটে খেয়ে লাখ লাখ লোক বেঁচে থাকে এটা বুঝতে অনেকের কষ্ট হলেও এটাই বা-ব। আমরা যারা দরিদ্রপীড়িত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার কথা নিয়ে সামান্য চি-া করি তাদের কাছে এ বিষয়টি অতি পরিষ্কার। গাছপালার মধ্যে যে ওষুধি গুণ রয়েছে এবং গাছগাছরা থেকে যে ওষুধ তৈরি হয় তা আদিকাল থেকে মানুষ জেনে আসছে। এ বিষয়ে হাজারও পু-ক রচিত হয়েছে। তাই আজকের সমাজের অনেকের কাছেই প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে এটা একটা অতি গ্রহণযোগ্য সমাধান। আমরা যারা গ্রামের মানুষ তাদের কাছে গাছগাছরা লতাগুল্মের ওষুধিগুণ অতি পরিচিত। কারণ ছোটবেলা থেকে আমরা বিভিন্ন রোগে গাছগাছরা লতাগুল্মের ব্যবহার দেখে আসছি।

এমনকি আমরা নিজেরাও অনেক সময় বিভিন্ন রোগে গাছগাছরা লতাগুল্মের শিকড় লতাপাতা এবং ছাল-বাকল বেটে খেয়েছি আর এতে যে উপকার পেয়েছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রোগব্যাধি থেকে উপশম পাওয়া যায় বলেই আজ পর্য- গ্রামাঞ্চলে গাছগাছরা লতাগুল্ম ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে এবং পৃথিবীর মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে গাছপালা-লতাগুল্মের ব্যবহার ততদিন চলবে। সরকার বৃক্ষরোপণ অভিযান জোরদার করে ফলজ, বনজ গাছের সাথে ভেষজ ওষুধি গাছের চারাও লাগানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করার ফলে গ্রামের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে শহরের আধুনিক বাসিন্দারাও ভেষজ উদি্‌ভদের গুণাগুণ সম্পর্কে আগ্রহী হচ্ছে। আসল কথা হল গাছপালা ব্যবহার কিন্তু গ্রামাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নেই, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ওষুধি উপাদান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এমন অনেক কিছুই আমরা ভেষজ উদি্‌ভদ থেকে পেয়েছি। যেমন ম্যালেরিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, এমনকি সর্বগ্রাসী এইডস রোগের চিকিৎসার প্রতিষেধক পাওয়ার আশার বাণী আমরা শুনতে পাচ্ছি।

আয়ুর্বেদ, ইউনানি, কবিরাজি ও হেকিমী শাস্ত্রে ব্যবহৃত প্রায় সব ওষুধ গাছপালা এবং লতাগুল্ম থেকে তৈরি হয়। এ গুলোর সুফল আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষের কাছে অতি পরিচিত। একজন সাধারণ মানুষ যখন কঠিন রোগে আক্রা- হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলে তখন আধুনিক ওষুধ নামের দামী বস্তুটির কাছে তারা যেতে পারে না। তাই ছুটে যায় পাশের গ্রামের কবিরাজ বা হেকিম সাহেবের কাছে যেখানে তারা অল্পমুল্যে কিছু ওষুধ পেতে পারে।

এ ওষুধের গুণগতমান কেমন তা তারা না জানলেও এটুকু বুঝতে পারে যে, এ অল্পমুল্যের ওষুধ তাদের রোগব্যাধির হাত থেকে রক্ষা করে। তবে এখানে একটা কথা উল্লেখ করা একা- প্রয়োজন মনে করছি যে, গ্রাম্য কবিরাজের কাছে অল্পমূল্যে ওষুধ পাওয়া গেলেও বর্তমানে আয়ুর্বেদ, ইউনানি কোম্পানিগুলোর ওষুধ কিন্তু স-া নয় বরং অনেকক্ষেত্রে আধুনিক ওষুধের চেয়ে দাম বেশি। এর মূল কারণ হল আয়ুর্বেদ ওষুধ তৈরির অধিকাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমাদের দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ভেষজ উদি্‌ভদের চাষ প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণ করে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারলে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে তেমনি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, কমবে বেকারত্ব, সাধারণ মানুষ পাবে অল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা।

- মোঃ আহছান উল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই: