রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০০৮

উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু কচু বিলাসী



উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু কচু বিলাসী



বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত ১৮/২০টি জার্মাপ্লাজম হতে গবেষণার মাধ্যমে বিলাসী নামে একটি উফশী জাত উদ্‌ভাবন করা হয় এবং ১৯৮৮ অনুমোদন করা হয় জাতটি। বিলাসী গুণে উৎকৃষ্ট ও উচ্চ ফলনশীল। বিলাসী মুখী কচুর জাত।

মুখী কচু একটি সুস্বাদু সবজি। এ সবজি খরিফ মৌসুমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই এর চাষ হয়। মুখী কচু বাংলাদেশে গুড়া কচু, কচু, ছড়া কচু, দুলি কচু, বিন্নি কচু ইত্যাদি নামেও পরিচিত। মুখীর ছড়া বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মুখী কচুর গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে গেলে এ কচু তুলতে হয়। এতে ৬ থেকে ৭ মাস সময় লাগে।

বিলাসী জাতের গাছ সবুজ, খাড়া, মাঝারি লম্বা, এর মুখী খুব মসৃণ, ডিম্বাকৃতির হয়। সিদ্ধ মুখী নরম ও সুস্বাদু। সিদ্ধ করলে মুখী সমানভাবে সিদ্ধ হয় ও গলে যায়।

বিলাসীর জীবনকাল ২১০ থেকে ২৮০ দিনের। সাধারণ অবস্থায় এর ফলন হেক্টরপ্রতি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ৪০ টন পর্য- ফলন হয়ে থাকে।

দো-আঁশ মাটি এই জাতের জন্য উত্তম।

রোপণের সময়ঃ মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফালগুন। মধ্য চৈত্র থেকে মধ্য বৈশাখ।

রোপণ পদ্ধতিঃ উর্বরা মাটির জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ৭৫ সেঃ মিঃ গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪৫ সেঃ মিঃ। অনুর্বর মাটির বেলায় সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেঃ মিঃ এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪০ সেঃ মিঃ রাখতে হয়।
বীজরে পরিমাণঃ ২ থেকে ২·৫ গ্রাম (প্রতি শতাংশে এবং ছড়ার ওজন ১৫ থেকে ২০ গ্রাম)
বীজ বপনের গভীরতাঃ ৮ থেকে ১০ সেঃ মিঃ
উৎপাদনঃ ১০০ থেকে ১২০ কেজি (প্রতি শতাংশে)
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
গোবর/কম্পেস্ট সার ১০ কেজি, ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ৪০০ গ্রাম, জিপসাম ২০ গ্রাম, জিং ৫ গ্রাম।
গোবর, টি এসপি এবং এমওপি রোপণের সময় এবং ইউরিয়া ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর প্রয়োগ করা ভাল।
অ-র্বর্তীকালীন পরিচর্যাঃ
১· সার উপরি প্রয়োগের পর গাছের গোড়ার মাটি টেনে দিতে হবে। জমি আগাছা মুক্ত করা, খরার সময় প্রয়োজনে সেচ দেওয়া এবং অতি বৃষ্টিতে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
২· মুখী কচু মাটির নিচে হয় বলে মাটি ঝুরঝুরা রাখা বাঞ্চনীয়।
৩· গাছের গোড়া মালচিং এর মাধ্যমে ঢেলে দিলে গুড়ি চারার সংখ্যা কমে আসে তাতে ছড়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
৪· গাছের পাতা ছোট হয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করলে ফসল সংগ্রহ করা উচিত ।
মুখী কচু চাষাবাদ করতে গিয়ে কোন সমস্যায় পড়লে আপনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত নিকটস্থ উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
- কৃষিবিদ মোঃ আজিজুল হক চৌধুরী

ভেষজ উদি্‌ভদের সম্ভাবনা


ভেষজ উদি্‌ভদের সম্ভাবনা



লোকসংখ্যার একটা বড় অংশ তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো যেমন- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা থেকে কোন না কোনভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্ষুধায় যেখানে দু’বেলা দু’মুটো ভাত জোটে না সেখানে রোগ-ব্যাধিতে উচ্চমূল্যে ওষুধ কিনে খাওয়া অসহায় দরিদ্রপীড়িত মানুষের কাছে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যে কারণে অনেককেই অসুখ-বিসুখ নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। এটা আমাদের জন্য যেমন দুর্ভাগ্যের তেমনি বিশ্বের সভ্য মানবতার কাছে অপমানজনক।

আসলে আমরা মুখে অনেক কথা বলি ঠিকই, কিন্তু প্রতিকারের কোন গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করার চেষ্টা করি না, তাই আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার কোন উন্নতি হচ্ছে না। আমাদের দেশে যে ভেষজ সম্ভার রয়েছে তা অবহেলাতে নষ্ট হচ্ছে। আমরা একটু খেয়াল করলেই আমাদের চারপাশে অনেক গাছপালা লতাগুল্ম দেখতে পাই সেগুলোর কোন না কোন ওষুধি গুণ রয়েছে। বর্হিবিশ্ব যখন বিজ্ঞানের অগ্রগতি আর জয়যাত্রা নিয়ে মাতামাতি ঠিক তখনি আমাদের দেশের মানুষেরা আধুনিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গাছগাছরা আর লতাগুল্ম ব্যবহার করে রোগব্যাধির হাত থেকে কোন রকমে বাঁচার জন্য সংগ্রাম করছে। আমাদের দেশে আধুনিক চিকিৎসা কত ব্যয়বহুল তা আমরা সবাই জানি। প্রতি বছর বিনা চিকিৎসায় আমাদের দেশের বহুলোক অসময়ে ঝরে যাচ্ছে। কারণ তারা নামি কোম্পানির দামি ওষুধ কিনে খেতে পারে না। তবে আমরা একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, বর্তমান সময়েও আমাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ রোগব্যাধিতে গাছগাছরা লতাগুল্ম ব্যবহার করে বেঁচে থাকে। এটা আসলে আধুনিকমনাদের কাছে অনেকটা অবা-ব। কারণ তারা আধুনিক যুগের অবদানে সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে গ্রামের লোকদের দুঃখ বুঝার সুযোগ পায় না।

আমাদের দেশের পরিত্যক্ত লতাপাতা, গাছের শিকড়, ছাল বেটে খেয়ে লাখ লাখ লোক বেঁচে থাকে এটা বুঝতে অনেকের কষ্ট হলেও এটাই বা-ব। আমরা যারা দরিদ্রপীড়িত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার কথা নিয়ে সামান্য চি-া করি তাদের কাছে এ বিষয়টি অতি পরিষ্কার। গাছপালার মধ্যে যে ওষুধি গুণ রয়েছে এবং গাছগাছরা থেকে যে ওষুধ তৈরি হয় তা আদিকাল থেকে মানুষ জেনে আসছে। এ বিষয়ে হাজারও পু-ক রচিত হয়েছে। তাই আজকের সমাজের অনেকের কাছেই প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে এটা একটা অতি গ্রহণযোগ্য সমাধান। আমরা যারা গ্রামের মানুষ তাদের কাছে গাছগাছরা লতাগুল্মের ওষুধিগুণ অতি পরিচিত। কারণ ছোটবেলা থেকে আমরা বিভিন্ন রোগে গাছগাছরা লতাগুল্মের ব্যবহার দেখে আসছি।

এমনকি আমরা নিজেরাও অনেক সময় বিভিন্ন রোগে গাছগাছরা লতাগুল্মের শিকড় লতাপাতা এবং ছাল-বাকল বেটে খেয়েছি আর এতে যে উপকার পেয়েছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রোগব্যাধি থেকে উপশম পাওয়া যায় বলেই আজ পর্য- গ্রামাঞ্চলে গাছগাছরা লতাগুল্ম ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে এবং পৃথিবীর মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে গাছপালা-লতাগুল্মের ব্যবহার ততদিন চলবে। সরকার বৃক্ষরোপণ অভিযান জোরদার করে ফলজ, বনজ গাছের সাথে ভেষজ ওষুধি গাছের চারাও লাগানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করার ফলে গ্রামের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে শহরের আধুনিক বাসিন্দারাও ভেষজ উদি্‌ভদের গুণাগুণ সম্পর্কে আগ্রহী হচ্ছে। আসল কথা হল গাছপালা ব্যবহার কিন্তু গ্রামাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নেই, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ওষুধি উপাদান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এমন অনেক কিছুই আমরা ভেষজ উদি্‌ভদ থেকে পেয়েছি। যেমন ম্যালেরিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, এমনকি সর্বগ্রাসী এইডস রোগের চিকিৎসার প্রতিষেধক পাওয়ার আশার বাণী আমরা শুনতে পাচ্ছি।

আয়ুর্বেদ, ইউনানি, কবিরাজি ও হেকিমী শাস্ত্রে ব্যবহৃত প্রায় সব ওষুধ গাছপালা এবং লতাগুল্ম থেকে তৈরি হয়। এ গুলোর সুফল আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষের কাছে অতি পরিচিত। একজন সাধারণ মানুষ যখন কঠিন রোগে আক্রা- হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলে তখন আধুনিক ওষুধ নামের দামী বস্তুটির কাছে তারা যেতে পারে না। তাই ছুটে যায় পাশের গ্রামের কবিরাজ বা হেকিম সাহেবের কাছে যেখানে তারা অল্পমুল্যে কিছু ওষুধ পেতে পারে।

এ ওষুধের গুণগতমান কেমন তা তারা না জানলেও এটুকু বুঝতে পারে যে, এ অল্পমুল্যের ওষুধ তাদের রোগব্যাধির হাত থেকে রক্ষা করে। তবে এখানে একটা কথা উল্লেখ করা একা- প্রয়োজন মনে করছি যে, গ্রাম্য কবিরাজের কাছে অল্পমূল্যে ওষুধ পাওয়া গেলেও বর্তমানে আয়ুর্বেদ, ইউনানি কোম্পানিগুলোর ওষুধ কিন্তু স-া নয় বরং অনেকক্ষেত্রে আধুনিক ওষুধের চেয়ে দাম বেশি। এর মূল কারণ হল আয়ুর্বেদ ওষুধ তৈরির অধিকাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমাদের দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ভেষজ উদি্‌ভদের চাষ প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণ করে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারলে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে তেমনি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, কমবে বেকারত্ব, সাধারণ মানুষ পাবে অল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা।

- মোঃ আহছান উল্লাহ

আইলে মিশ্রফসল চাষাবাদ

আইলে মিশ্রফসল চাষাবাদ




বাংলাদেশে বর্তমানে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৭১ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর। বিশেষজ্ঞদের মতে এই আবাদি জমির প্রায় ২ শতাংশ আইলের ভেতরে পড়েছে। সে হিসেবে প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জমি আইল হিসেবে প্রতিবছর আবাদের বাইরে থেকে যাচ্ছে। অধিক জনসংখ্যার এই দেশে খাদ্য ঘাটতি পূরণ, পুষ্টি সমস্যা দূরীকরণ এবং বাড়তি আয়ের জন্য আইলে ফসলে চাষ নিঃসন্দেহে একটি লাভজনক প্রযুক্তি। মিশ্রফসল চাষে ফসলের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে ফসল নির্বাচন করতে হবে-

সরু ও নীচু আইলে পাতা ও ফলজাতীয় সবজি চাষ করার জন্য আইল কমপক্ষে ৪৫ সেঃ মিঃ প্রশ- করতে হবে এবং প্রয়োজন মত মাটি দিয়ে আইল উঁচু করতে হবে। জমির কোণায় যদি মাছ চাষের জন্য গর্ত থাকে তবে সেক্ষেত্রে লতাজাতীয় সবজি চাষের জন্য গর্তের কোণায় কিছু মাটি দিয়ে হীপ তৈরি করতে হবে। সরু ও নীচু আইলে লতানো সবজি চাষ করার জন্য অল্প পরিমাণ মাটি দিয়ে জমির চার কোণায় চারটি হীপ তৈরি করতে হবে। নিচু আইলে লতানো সবজি চাষ করার জন্য ধানক্ষেত থেকে মাটি এনে নির্দিষ্ট দূরত্বে হীপ তৈরি করতে হবে। যে আইলের উপর দিয়ে মানুষ চলাচল করে তাতেই ফসল চাষ করতে চাইলে জমি থেকে মাটি এনে আইলে সাথে জমির দিকে হীপ তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া ধানক্ষেতের ভেতরেও হীপ তৈরি করে লতাজাতীয় সবজি চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে ধানগাছ থেকে ১·৫ ফুট উচ্চতায় মাচা তৈরি করতে হবে।

আইলের ফসলের জমি তৈরি, জাত নির্বাচন, বপন বা রোপণ পদ্ধতি ও সময়, সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা, অ-বর্তীকালীন পরিচর্যা, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন পদ্ধতি এবং ফসল সংগ্রহ সবই মূলজমিতে ওই ফসল চাষাবাদের অনুরূপ। পানিতে ডোবা না এমন উঁচু ও চওড়া ধরনের আইলে পাতাজাতীয় সবজি যেমন লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, পালংশাক ও কলমিশাক চাষ করা যায়। সুনিষ্কাশিত উঁচু আইলে ঢেঁড়শ, টমেটো, বেগুন, মরিচ, শিম ও বরবটি চাষ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে আইলের প্র- কমপক্ষে ৪৫ সেঃ মিঃ হতে হবে। বীজ বা চারা রোপণের ৭ থেকে ১০ দিন পূর্বে গোবর, টিএসপি ও এমপি সার আইলের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন পর প্রথমবার এবং ৩০ থেকে ৪০ দিন পর দ্বিতীয়বার ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। আইলে হীপ তৈরি করে সেখানে লতাজাতীয় সবজি যেমন মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, লাউ, ঝিঙ্গা, করলা, শসা, চিচিঙ্গা প্রভৃতি চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে চারা ১০ থেকে ২০ সেঃ মিঃ লম্বা হলে বাঁশের কঞ্চি, ধৈঞ্চার গাছ বা অন্য কোন ডাল দিয়ে বাউনি দিতে হবে এবং গাছ ৫০ সেঃ মিঃ এর বেশি লম্বা হলে ১·৫ মিটার উঁচু করে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। মাচার প্র- ১·৫ মিটারের বেশি না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। নীচু সরু আইল অথবা মাঝারি নিচু আইলে পানিকচু চাষ বেশ লাভজনক। শুকনো জমির আইলে বহুমুখি ফসল ভুট্টা, তৈলজাতীয় ফসল সূর্যমুখী এবং ডালজাতীয় ফসল অড়হর চাষ করা যায়। এসব ফসল জমির প্রাকৃতিক বেড়া হিসেবেও কাজ করে। পর্যাপ্ত সূর্যালোক সমৃদ্ধ উঁচু, চওড়া ও সুনিষ্কাশিত আইলে পেঁপে, সজনা প্রভৃতি চাষ করে প্রচুর লাভ করা যায়।


শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০০৮

সবজিতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার


সবজিতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার


এ দেশে ধান ফসলে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করে সুফল পাওয়া গেছে। গুটি ইউরিয়া ধীরে ধীরে নাইট্রোজেন মুক্ত করে বিধায় একবার জমিতে দিলে ফসলের জীবনকালে আর ইউরিয়া সারের দরকার হয় না। অন্য দিকে গুঁড়ো ইউরিয়া দ্রুত গলে যায় এবং নাইট্রোজেন মুক্ত করে বিধায় তার অপচয়ও বেশি হয়। দীর্ঘ দিন ধরে গাছকে নাইট্রোজেন সমানভাবে সরবরাহ করতে পারে না। গুঁড়ো ইউরিয়া জমিতে দেয়ার পর প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ নাইট্রোজেন বিভিন্ন কারণে জমি থেকে নষ্ট হয়, গাছ পায় মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ নাইট্রোজেন। ফলে চাষিদের আর্থিক ক্ষতি হয় এবং গাছও সব সময় নাইট্রোজেনের জোগান না পেয়ে তার বৃদ্ধি মাঝে মাঝে থমকে যায়। ফলে গাছে অভাবজনিত লক্ষণ দেখামাত্রই বারবার ইউরিয়া সার ছিটাতে হয়। তাই এসব ঝামেলা এড়িয়ে সব সময় গাছকে সবুজ সতেজ রাখতে গুটি ইউরিয়া ধীরে ধীরে চাষিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে ধান ফসলে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার হলেও সবজি ফসলে ঠিক সেভাবে শুরু হয়নি। অথচ সবজি ফসলেও বিশেষত আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন ইত্যাদি ফসলে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করে যথেষ্ট সুফল পাওয়া গেছে। তাই সবজি চাষিরাও গুঁড়ো ইউরিয়ার বদলে সবজিতে গুটি ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে পারেন। আলুতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার সাধারণত নভেম্বরের মধ্যেই আলু লাগানো হয়। তাই আলু লাগানোর আগে জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে প্রতি শতাংশে ১২ কেজি গোবর, ১২০ গ্রাম টিএসপি এবং মাত্রার অর্ধেক পরিমাণ এমওপি অর্থাৎ ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম এমওপি সার জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ৪৫ সেন্টিমিটার পর পর লাইন করে প্রতি লাইনে ১৫ সেন্টিমিটার বা ৬ ইঞ্চি দূরত্বে আলু বপন করতে হবে। লাইনে আলু বপনের সময় দুই বীজ আলুর মাঝখানে একটি করে গুটি ইউরিয়া দিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আলু লাগানোর ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সে সময় বাকি অর্ধেক কিস্তির এমওপি সার দিয়ে সেচ দিতে হবে। আর কোনো ইউরিয়া সার দেয়ার দরকার হবে না। এর ফলে আলুর জন্য সুপারিশকৃত ইউরিয়া সারের চেয়ে ২০ শতাংশ ইউরিয়া কম লাগে এবং ফলনও বেশি পাওয়া যায়। এতে প্রতি শতাংশে ১.১৯ কেজি গুটি ইউরিয়া লাগে। বাঁধাকপি ও ফুলকপিতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার বাঁধাকপি ও ফুলকপির জন্য ১ মিটার চওড়া করে দুই বেডের মাঝখানে ৩০ সেন্টিমিটার নালা রেখে বেড তৈরি করতে হবে। বেডে ৬০ সেন্টিমিটার দূরত্বে দুই সারিতে ৪৫ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার দূরত্বে চারা রোপণ করতে হয়। চারা লাগানোর ১০ থেকে ১৫ দিন পর মাটির উর্বরাশক্তি অনুযায়ী প্রতিটি গাছের গোড়ায় মাটিতে ১ গ্রাম ওজনের ৭ থেকে ৯টি গুটি ইউরিয়া রিং পদ্ধতিতে চার দিকে ৭ থেকে ৮ সেন্টিমিটার গভীরে পুঁতে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অন্যান্য পরিচর্যা ও সেচ যথারীতি চালিয়ে যেতে হবে। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে বাঁধাকপি ও ফুলকপির জন্য সুপারিশকৃত ইউরিয়ার ২০ শতাংশ সার কম লাগে। প্রতি হেক্টরে বাঁধাকপির জন্য ৪২৩ কেজি ও ফুলকপির জন্য ২১০ কেজি গুটি ইউরিয়া লাগে।


রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০০৮

টবে ঢেঁড়শ চাষ


টবে ঢেঁড়শ চাষ

শাকসবজি উৎপাদনের জন্য জমি বা বাগানই শ্রেষ্ঠ জায়গা। তবে যারা শহরে বাস করে তাদেরও শাকসবজি উৎপাদনের রয়েছে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা। শহরের বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, মাটির চাঁড়িতে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সারমাটি ভরে অনায়াসেই ঢেঁড়শ চাষ করা যায়।
ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, তাছাড়া ভিটামিন -এ সহ অন্যান্য উপাদানও কিছু কিছু রয়েছে। বাংলাদেশে যে কোন সময় ঢেঁড়শ লাগানো যায়।
টবের মাটিঃ গাছের বৃদ্ধি এবং ঢেঁড়শের ভাল ফলনের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে টবের মাটিতে যেন ফেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার একসাথে ভালভাবে মেশাতে হবে। এঁটেল মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণভাবে প্রতি টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫ থেকে ৬ দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশানো যেতে পারে।
জাতঃ ঢেঁড়শের নানা জাত রয়েছে। এর মধ্যে পুশা শাওনী, কাবুলী ডোয়ার্ফ, লক্ষ্নৌ ডোয়ার্ফ, লং গ্রীন, লং হোয়াইট, পেন্টাগ্রীণ-এসব বিদেশী জাত জনপ্রিয়।

সময়ঃ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত অর্থাৎ বছরের সব সময়ই ঢেঁড়শ গাছ লাগানো যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শীতের শেষভাগ থেকে বৈশাখ পর্য- ঢেঁড়শ লাগানো যায়। এরপরও লাগানো যায় তবে নাবী ফসলে মোজাইক রোগ হয় বলে ফলন ভাল হয় না।
বীজ বপনঃ ঢেঁড়শের চারা রোপণকালীণ সময় আঘাত সহ্য করতে পারে না বলে সরাসরি মূল টবে বুনতে হবে। ঢেঁড়শের জন্য মাঝারী ধরণের টব হলেই চলবে। প্রতি টবে ২ থেকে ৩টি বীজ বুনে দিতে হয়। চারা গজানোর পর একটি সবল চারা রেখে বাকিগুলো ফেলে দিতে হয়। খোসা শক্ত বলে ঢেঁড়শের বীজ দেরীতে গজায়। তাই বুনার আগে ২৮ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
পরিচর্যাঃ ঢেঁড়শ গাছ পানি সহ্য করতে পারে না। গাছের গোড়ায় দাঁড়ানো পানি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেকটা টবে পানি যাতে না বেধে থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
গাছ ১০ থেকে ১২ সেঃ মিঃ বড় হলে টবের কিনার ঘেঁসে ১ চা চামচ ইউরিয়া ও ১ চা-চামচ মিউরেট অব পটাশ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
রোগবালাইঃ শুঁয়া পোকা কচি কাণ্ড ছিদ্র করে গাছের ক্ষতি করে। ভাইরাস (মোজাইক) রোগ ঢেঁড়শে প্রায়ই দেখা যায়। এ রোগে পাতা হলদে হয়ে কুঁচকে যায়। রোগাক্রা- গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে দিতে হয়। শুঁয়া পোকার আক্রমণ থেকে ঢেঁড়শ গাছকে বাঁচাতে হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিঃ লিঃ ডায়াজিনন-৮০, নুভাক্রণ-৪০, একালাক্স-২৫ এর যে কোনটি অথবা ১ লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার সিমবুশ-১০ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ বীজ বপনের দু’মাস পরেই ফল পাওয়া যায়। কচি অবস্থায় ঢেঁড়শ তুলতে হয়। দেরি হলে ফল শক্ত হয়ে যায় ও সেটা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। ঘন ঘন ঢেঁড়শ তুললে গাছে বেশি পরিমাণে ঢেঁড়শ আসে। - সাহারা তুষার

বিনা চাষে আলু আবাদ


বিনা চাষে আলু আবাদ


গত বছর মুন্সিগঞ্জসহ অন্যান্য জেলায় আলুর ফলন ভাল হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় কোল্ড-স্টোরেজ সংকটে পড়ে অনেক আলু নষ্ট হয়ে যায়। তারপর আবার এবার সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় চাষ খরচও বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। তাই এবার সেসব এলাকার অনেক কৃষকই তাদের আলু চাষের জমি কমিয়ে আনতে পারেন। তাই এবার আলু চাষ বেশ লাভজনক হবে বলে ধারণা করা যায়। তবে খরচ কমিয়ে এই ফসল চাষ করার পদ্ধতিও আছে। এটি কৃষকের জন্য অনেক সাশ্রয়ী হবে, তেমনি অনেক পতিত জমিও চাষের আওতায় আসবে।
জোয়ার প্লাবিত দক্ষিণাঞ্চলে আমন ধান কাটার পর মাটি শুকাতে অনেক বেশি সময় নেয়ায় সঠিক সময়ে আলু চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। দেরীতে আবাদের জন্য ফলনও অনেক কমে যায়। তাই যেসব এলাকা নীচু এবং বর্ষার পানি নামতে দেরী হয় সেখানে কৃষকরা বিনা চাষে আলু আবাদ করতে পারেন। এভাবে আবাদের ফলে চাষ খরচ অনেক কম যায় কারণ কচুরিপানার লাভজনক ব্যবহার হয়, একে মালচিং দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করে মাটির রস সবসময় সংরক্ষণ করা য়ায়, সেচ খরচ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়, অনেক কম রাসায়নিক সার দরকার হয়, জমিতে আগাছা কমে যায়, আলু বেশি সুস্বাদু হয় এবং এর আকারও অনেক বড় হয়।
এভাবে আলু চাষের জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যেখানে বৃষ্টিপাত হলে পানি জমে না। সাধারণত উচ্চ ফলনশীল এবং স্থানীয় জাতের ধান কাটার পর জমি ফাঁকা হবার সঙ্গে সঙ্গেই আলু আবাদের সুযোগ ঘটে। কাছাকাছি নদী বা পুুকুরে কচুরীপানার উৎস থাকতে হবে। নভেম্বর মাসের শেষ পর্য- এ আলু চাষের উপযুক্ত সময়। তবে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ পর্য- বিরনা চাষ পদ্ধতিতে আলু আবাদ সম্ভব।
বীজ ব্যবস্থাপনাঃ হিমাগারে সংরক্ষিত অনুমোদিত জাত যেমন- কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি শতকে ৬-৮ কেজি বীজের দরকার হবে। ২৫-৩০ গ্রাম ওজনের ছোট আলু বা বড় আলুর কমপক্ষে দুই চোখ বিশিষ্ট কাটা অংশই আলুর বীজের জন্য ভাল। কাটা অংশে ছাই লাগিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। রোপণের আগে এসব বীজ অনুমোদিত ছত্রাকনাশক (যেমন-ব্যাভিস্টিন বা ডাইথেন এম-৪৫) দিয়ে শোধন করে নেয়া ভাল। ২০ ইঞ্চি দূরে সারি করে ১০ ইঞ্চি দূরে প্রতিটি বীজ আঙুলের চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে। যদি মাটি কিছুটা শক্ত হয় তবে হাত লাঙল টেনে ১০ সেঃ মিঃ গভীর করে নালায় বসিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ বীজ রোপণের আগে শতক প্রতি ১·৩ কেজি ইউরিয়া এবং আধা কেজি টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে। বীজ রোপণের আগের দিন পটাশ ও গোবর সার একত্রে মিশিয়ে ছিঁটিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বীজের গায়ে যেন কোনভাবেই রাসায়নিক সার না লাগে।
মালচিং বা আচ্ছাদনঃ কচুরিপানা, খড়, নাড়া ইত্যাদি আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। নদী বা খাল থেকে কচুরীপানা তুলে রেখে দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে শুকালে সেটি আচ্ছাদন হিসেবে ভাল হয়। খড় বা নাড়াকে আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করলে ইঁদুরের আক্রমণ বাড়তে পারে। বীজ আলু লাগানোর পরপরই ৪-৬ ইঞ্চি পুরু করে আচ্ছাদন দিতে হবে। বীজ আলু সম্পূর্ণরূপে আচ্ছাদিত হতে হবে না হলে আলুর গায়ে সবুজ মেলানিনের দাগ পড়ে যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আবার আচ্ছাদন বেশি হলে গাছ বের হতে সমস্যায় পড়ে।
রোগবালাইঃ কাটুই পোকার কীড়া চারাগাছ কেটে দেয় এবং ছিদ্র করে ফসলের ক্ষতি করে। এই পোকা দিনের বেলা মাটির নীচে লুকিয়ে থাকে। এই পোকার উপদ্রব খুব বেশি না হলে কাটা গাছের কাছাকাছি মাটি খুঁড়ে কীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। উপদ্রব বেশি হলে ক্লোরোপাইরিফস (ডারসবান) ২০ ইসি ৫ মিলি হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটি স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে। আলু লাগানোর ৩০-৪০ দিন পর এটা করা দরকার। বাড়িতে সংরক্ষিত আলুতে সুতলী পোকা লম্বা সুড়ঙ্গ করে। পরে এটি অন্যান্য আলুর মধ্যেও ছড়িয়ে যায়। এজন্য বাড়িতে আলু সংরক্ষণের সময় ছাই, তুষ অথবা কাঠের গুঁড়ো দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আলু সংরক্ষণের আগে আক্রা- আলু বাছাই করে ফেলে দিতে হবে। জাবপোকা গাছের রস চুষে খায় এবং ভাইরাস রোগ ছড়ায়। প্রতি ৭ দিন পর ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১০ মিলি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। উড়চুঙ্গা রাতে গর্ত থেকে বের হয়ে গাছের শেকড় ও কাণ্ড খেয়ে ফেলে। বিষটোপ ব্যবহার করে অথবা গর্ত থেকে পোকা বের করে মেরে ফেলতে হবে।

লেট ব্লাইট বা আলুর মড়ক রোগ হলে প্রথমে পাতা, ডগা ও কাণ্ডে ছোট ছোট ভেজা দাগ পড়ে। পড়ে এটি বড় হয়ে পুরো গাছে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যে পুরো ক্ষেতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। আক্রা- ক্ষেতে পোড়া গন্ধ পাওয়া যায় যেন ফসল পুড়ে গিয়েছে। প্রতিকারের জন্য সুষম সার এবং সময়মত সেচ প্রয়োগ করতে হবে। রোগ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোভরাল অথবা ডাইথেন এম-৪৫, ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।
এভাবে রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করে আবাদ করলে হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ টন আলু ফলানো সম্ভব। আর স্বাভাবিকভাবে আলু চাষ করতে কৃষকের যে খরচ তাতে কৃষকের পুষিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর বিনাচাষে এই পদ্ধতিতে আলু চাষ করলে চাষ খরচ প্রায় তিন চতুর্থাংশে নেমে আসে। - মাজহার মিলন

শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০০৮

শিং মাছ চাষে লাভবান হওয়ার টিপস


শিং মাছ চাষে লাভবান হওয়ার টিপস



শিং মাছ চাষে ভালো অর্থাৎ রোগমুক্ত, সুস্থ এবং সমবয়সী ও একই আকারের পোনা ভালো উৎপাদনে সহায়ক। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয়, পোনা হ্যাচারি থেকে এনে নার্সিং করে নেওয়া উত্তম। নার্সিং করার পর তিন থেকে চার ইঞ্চি পোনা চাষের জন্য মজুদ করা উচিত। এ সময় পোনা সঠিক সংখ্যায় গণনা করে দেওয়া যায়। হ্যাচারি থেকে সরাসরি ছোট পোনা চাষে দেওয়া হলে নানা কারণে অধিক পোনা মারা যেতে পারে। এ সময় পোনা মারা গেলে চাষি পোনার সংখ্যার ব্যাপারে ধারণা করতে পারে না এবং অধিক খাবার প্রয়োগে পুকুরের পরিবেশ নষ্ট করে, নানা সমস্যা নিত্যদিনের সঙ্গী হবে।
খাবারঃ শিং মাছ চাষে মানসম্মত খাবার প্রয়োজন। শিং মাছের খাবারে ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ প্রোটিন থাকা আবশ্যক। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে খাবারে ৩৫ শতাংশ প্রোটিন থাকা উচিত। খাবারে ফিশ মিল অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। তা ছাড়া প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, এনজাইম ও গ্রোসপ্রোমোটর থাকলে খাদ্য রূপান্তর হার ভালো হবে। শিং চাষে খাবার অধিক ব্যবহার বা প্রয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।
পরিচর্যা
1. পোনা মজুদের আগে তা রোগমুক্ত করে নেওয়া ভালো। একক চাষে ৩০০ থেকে ৫০০ পোনা দেওয়া যায়। পানি পরিবর্তন বা ব্যবস্থাপনা উন্নত হলে অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়।
2. একই আকারের পোনা চাষে দেওয়া উচিত। কদিন পর পর ভিন্ন সাইজের পোনা মজুদে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায় না।
3. প্রয়োজনীয় পরিমাণে খাবার দেওয়া উচিত। অধিক খাবারে পুকুরের পরিবেশ নষ্ট করবে এবং তলদেশে ক্ষতিকারক গ্যাস চাষকে বিপন্ন করবে।

‘কটরাপারি’ খরচ সাশ্রয়ী দোফসলি জাতের ধান


‘কটরাপারি’ খরচ সাশ্রয়ী দোফসলি জাতের ধান



পোকার আক্রমণের কারণে বিস্তীর্ণ আমনক্ষেত সাবাড় হচ্ছে। ধানক্ষেতের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। কীটনাশক ছিটিয়ে কাজ হয় না, একটু দমন হলেও আবার দ্বিগুণ তেজে পোকার আক্রমণ শুরু হয়ে যায়, সেচ সুবিধা, অসুবিধাসহ নানা কারণে উৎপাদন খরচ উঠবে কি না, বেশির ভাগ চাষির মধ্যে প্রায়ই দেখা যায় দুশ্চিন্তা আর হাহাকার। ধান চাষের ক্ষেত্রে বাস্তব চিত্রটি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র দেখা গেলেও আমন ধানের ফলন নিয়ে মোটেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন না পীরগঞ্জ উপজেলার কলিযুগ গ্রামের কৃষক বিমল চন্দ্র দেব শর্মা।
‘কটরাপারি’ নামের একটি অপরিচিত স্থানীয় জাতের ধান চাষ করতে পেরে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। বোরো মৌসুমে বিঘাপ্রতি ৪৭ মণ এবং আমন মৌসুমে প্রতি বিঘায় ২৮ থেকে ৩২ মণ ফলন পেয়েছেন তিনি। ধানের এ আশাতীত ফলন দেখে অনেকের অজান্তেই আশপাশের দশ গ্রামের অনেক চাষির মধ্যে এ ধান চাষে দেখা দিয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।
ঠাকুরাগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কলিযুগ গ্রামের বিমল চন্দ্র দেব শর্মা। তাঁর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল তাঁর আবাদি জমির পরিমাণ ৩০ বিঘা। প্রতি বছর আমন মৌসুমে তিনি তাঁর জমিতে স্বর্ণা, বিআর-৪১, পাইজাম আর বোরো মৌসুমে চায়না, মালা, ব্রিধান-২৮ প্রভৃতি জাতের এক ফসলি জাতের ধান চাষ করে ফলনও পেতেন আর দশ জন চাষির মতোই। তাই তিনি তাঁর জমি থেকে তেমন একটা লাভবান হতে পারেননি। উৎপাদন খরচেই পুঁজি শেষ হয়ে যায়। এত জমি থেকেও সামলিয়ে উঠতে তাঁকে হিমশিম খেতে হতো।
বিমল চন্দ্র তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে এক মণ ‘কটরাপারি’ জাতের ধানের বীজ নিয়ে আসেন গত বছর কার্তিক মাসে। তিনি জানান, ওই বছরের অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহে বীজতলায় ধানবীজ বোনেন এবং দেড় মাসের মাথায় চার বিঘা জমিতে ধানের চারাবীজ রোপণ করেন। সাড়ে তিন মাসের মাথায় বৈশাখের মাঝামাঝিতে ধান কাটেন। চার বিঘা জমি থেকে বিঘাপ্রতি (৫০ শতকের বিঘা) গড়ে ৪৭ মণ করে ফলন পান এবং তিনি অবাক হন। অবাক হয় আশপাশের অন্য চাষিরাও। বিমল চন্দ্র দেব শর্মা ওই ধান শুকিয়ে রাখেন এবং বীজের মতোই মাঝেমধ্যে রোদে দেন। এভাবে বৈশাখ মাসে উৎপাদিত ধানের বীজ করে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজতলায় বোনেন তিনি। আট থেকে ১০ দিনের মাথায় অঙ্কুরিত হয় বীজতলার বীজ। আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহে চারাবীজ রোপণ করেন ও সাড়ে তিন মাসের মাথায় আশ্বিন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ধান কাটা শুরু করেন এবং বিঘাপ্রতি ২৮ থেকে ৩২ মণ ফলন পান। ‘কটরাপারি’ মঙ্গা মোকাবিলার জন্য উৎকৃষ্ট ধান। এ এলাকার অন্য সব জাতের ধানকে আড়াল করে কটরাপারি মাঠপর্যায়ে এক বিশেষ জায়গা করে ফেলছে এ কথা অনস্বীকার্য। উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ জাতকে উন্নত জাতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে।

রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০০৮

দেশি পানি বিদেশি মাছ



দেশি পানি বিদেশি মাছ


মাছ আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। আমাদের আছে প্রায় ২৬০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ; এর মধ্যে ১৪০টিই ছোট মাছের শ্রেণীভূক্ত। বিএফআরআই এর পরিসংখ্যান মতে মিঠা পানির ২৬০ প্রজাতি মাছের মধ্যে ৫৬টি বিলুপ্তপ্রায়। এসব বিলুপ্তপ্রায় মাছের মধ্যে আছে পাবদা, গুলশা, বাটা, গনিয়া, ভাগনা, মহাশোল, কালিবাউস, মেনি ইত্যাদি মাছ। এদের স্বাদ ও দাম বিদেশি মাছের তুলনায় অনেক বেশি। রুই-কাতলা মাছ ছাড়া বাঙালির কোন উৎসব ভাবাই যায় না। শিং মাগুর মাছের কদর এখনও দেশজোড়া।
নব্বই এর দশক থেকে আমাদের দেশে মিঠা পানির মাছ চাষের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। দেশে মোট মাছ উৎপাদনের শতকরা ৪২ ভাগ এখন যোগান দিচ্ছে চাষের মাধ্যমে। অথচ বিগত দশকেও চাষের অবদান ছিল মাত্র ২০ থেকে ২৫ ভাগ। মৎস্য উপখাতে এ এক ঈর্ষণীয় সাফল্য।
মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে চাষিরা এখন অনেক বেশি উদ্যোগী। কি করে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা করা যায় তা নিয়ে চাষিদের নির-র ভাবনা। অধিক মুনাফার আশায় কোন কোন ক্ষেত্রে চাষিরা বিদেশি মাছও চাষ করে থাকে। সঠিক তথ্য না জেনে এ ধরনের বিদেশি মাছ চাষে জলজ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকা থাকে। বলা বাহুল্য, আমাদের দেশি পানিতে বিদেশি মাছ চাষের যেমন ভাল অভিজ্ঞতাও আছে তেমনি তিক্ত অভিজ্ঞতাও কম নয়।
আশির দশকে আমাদের দেশে থাইল্যান্ড থেকে আফ্রিকান মাগুর আমদানি করা হয়। এর গড় দৈহিক বৃদ্ধি ছিল দেশি মাগুরের চেয়ে অনেক বেশি। তাই সারা দেশে হৈ চৈ পড়ে গেল আফ্রিকান মাগুর চাষ নিয়ে। গবেষণা ফলাফলের অপেক্ষা না করেই দেশব্যাপী শুরু হয়ে গেল এর চাষাবাদ। এর পরের পরিস্থিতি আমাদের কমবেশি সবারই জানা। এক পর্যায়ে জানা গেল -এ মাছ অত্য- রাক্ষুসে স্বভাবের এবং খেতেও ততটা সুস্বাদু নয়। অতঃপর আফ্রিকান মাগুর নিষিদ্ধ করা হল। কিন্তু কে জানে ততদিনে কি পরিমাণে এই রাক্ষুসে মাগুর আমাদের নদ-নদী ও ডোবা বিলে ঢুকে পড়েছে। বন্যা উপদ্রুত এদেশে এটাইতো স্বাভাবিক। উন্মুক্ত জলাশয়ে আফ্রিকান মাগুর এখন কি পরিমাণে অন্যান্য মাছ সাবাড় করছে এর হিসেব কে রাখে?
একই অবস্থা রাক্ষুসে মাছ পিরানহা নিয়ে। এ্যাকুরিয়াম ফিস হিসেবে পিরানহা মাছ এদেশে প্রথম আসে। পরবর্তীতে তা চলে যায় চাষির পুকুরে। দেদারসে শুরু হয় দেশব্যাপী চাষাবাদ। দেশের অনেক কর্তাব্যক্তিও সংযুক্ত হন পিরানহা মাছ চাষে। থাই রূপচাঁদা বলে বাজারে চালিয়ে দেওয়া যায় পিরানহাকে। এক্ষেত্রেও প্রথম দিকে বিজ্ঞানীদের মতামতের যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যাহোক, সম্প্রতি পিরানহা মাছ চাষ, বিক্রয়, আমদানি ও পরিবহন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
বিদেশি মাছের ক্ষেত্রে আমাদের সুখকর অভিজ্ঞতাও আছে। যেমন থাই পাঙ্গাস, তেলাপিয়া এবং থাই কই। অগ্নিমূল্যের কারণে পাঙ্গাস মাছ ছিল এক সময় উচ্চবিত্তের খাবার। নব্বই এর গোড়ার দিকে থাইল্যান্ড থেকে এদেশে প্রথম পাঙ্গাসের পোনা আমদানি করা হয়। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট এসব পোনা লালন-পালন করে এর কৃত্রিম প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্‌ভাবনে সক্ষম হয়। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এই প্রযুক্তি। অতঃপর থাই পাঙ্গাস চাষ ও উৎপাদনে দেশে বিপ্লব ঘটে যায়। পাঙ্গাস এখন “গরিবের মাছ” হিসেবে পরিচিত। এরপরেও পাঙ্গাসের স্বাদ ও রঙ নিয়ে আরও গবেষণার দরকার আছে।
তেলাপিয়া মাছও আমাদের দেশে এখন কম জনপ্রিয় নয়। ষাটের দশকে টঘওঈঊঋ এর মাধ্যমে তেলাপিয়া মাছ আমাদের দেশে প্রথম আমদানি করা হয়। তখন এই মাছটির তেমন গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। তারপর এই মাছ নিয়ে শুরু হয় গবেষণা। এখন গিফট তেলাপিয়ার অনেক কদর। গিফট তেলাপিয়া থেকে তৈরি করা হয়েছে এর উন্নতজাত “বিএফআরআই সুপার তেলাপিয়া”। এর দৈহিক বৃদ্ধি আরও (৩০%) বেশি। অপরদিকে, মনোসেক্স তেলাপিয়ার এখন জয় জয়াকার। দেশব্যাপী ইতিমধ্যে ৫০টি মনোসেক্স তেলাপিয়ার হ্যাচারি বেসরকারিভাবে স্থাপন করা হয়েছে। বিক্রি হচ্ছে কোটি কোটি মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা। তেলাপিয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক সাফল্যের এই স্বাদ চাষি এবং সাধারণ ভোক্তারা এখন ভোগ করছে। তথাপি তেলাপিয়া নিয়ে আমাদের আশংকাও কম নয়। বন্যা কবলিত এই দেশে তেলাপিয়া মাছ উন্মুক্ত জলাশয়ে ঢুকে জীববৈচিত্রের উপর কি ধরণের প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে গবেষণা দরকার।
আমাদের দেশে বিদেশি মাছ চাষের বিপক্ষে আমার অবস্থান নয়।

বিদেশি মাছ চাষের পূর্বে এ নিয়ে আমাদের বি-র গবেষণার দরকার আছে; এটাই মূল কথা। আমদানিকৃত মাছ কোন রোগজীবাণু বহন করছে কি-না, এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি রকম, খাদ্যাভ্যাস কি ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করে চাষ উপযোগী মনে হলেই সম্প্রসারণে যাওয়া যুক্তিযুক্ত। অন্যথায় দেশের জলজ পরিবেশের জন্য তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই বিদেশি কোন মাছ দেশে আনার আগে সরকারি পর্যায় থেকে অনুমতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমাদের কোয়ারেনটাইন ব্যবস্থা থাকা দরকার এবং তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

স্ট্রবেরী চাষে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ



স্ট্রবেরী চাষে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ


স্ট্রবেরী একটি অত্য- রসালো ও সুস্বাদু ফল। স্ট্রবেরী গাছ দেখতে অনেকটা থানকুনি অথবা আলুর গাছের মত, তবে পাতা আরো বড় এবং চওড়া। এটি থানকুনি গাছের মতই রানারের মাধ্যমে চারা চারদিকে ছড়াতে থাকে। পাশ থেকে বের হওয়া পরিণত রানার কেটে আলাদা লাগিয়ে এর চাষ করা সম্ভব। তবে এর বীজ বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে। একটি স্ট্রবেরী গাছ থেকে রানারের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করলে বছরে কয়েকশত চারা উৎপাদন করা সম্ভব। স্ট্রবেরী শীত প্রধান দেশের ফল তাই বেশি তাপমাত্রার কারণে বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্য- এ গাছ বাঁচিয়ে রাখা খুব কষ্টসাধ্য। স্ট্রবেরী ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকা অবস্থায় টকটকে লাল রঙের হয়। ফলটি দেখতে অনেকটা লিচুর মত। স্ট্রবেরী জীবন রক্ষাকারী নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এতে আছে ভিটামিন এ, সি, ই, ফলিক এসিড, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, পলিফেনল, এলাজিক এসিড, ফেরালিক এসিড, কুমারিক এসিড, কুয়েরসিটিন, জ্যান্থোমাইসিন ও ফাইটোস্টেরল। এদের মধ্যে এলাজিক এসিড ক্যান্সার, বার্ধক্য, যৌনরোগ প্রতিরোধের গুণাগুণ আছে বলে জানা গেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদি্‌ভদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড· এম· মনজুর হোসেন ১৯৯৬ সালে জাপান থেকে একটি স্বল্প দিবা দৈর্ঘø জাতের স্ট্রবেরী বাংলাদেশে আবাদের চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি প্রথমে দেখতে পান যে, এই জাতটি রানারের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে না। এমনকি ফলের আকার অনেক ছোট হচ্ছে। যা বাণিজ্যিকভাবে চাষের উপযোগী নয়। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত টিস্যু কালচার ল্যাবে গত কয়েক বছর গবেষণার মাধ্যমে একটি জাত উদ্‌ভাবনে সক্ষম হন। যা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব। তার জাতটির নাম এস·টি -৩। এটি অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে মাঠে লাগালে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মার্চ মাস পর্য- ফলন দেবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান প্রতি গাছ থেকে উক্ত চার মাসে ২৫০-৩০০ গ্রাম পর্য- ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি স্ট্রবেরী গড় ওজন ১০ থেকে ১৫ গ্রাম। অধ্যাপক ড· এম· মনজুর হোসেন গত ৩ বছর ধরে রাজশাহী মহানগীর পদ্মা আবাসিক এলাকার ভদ্রায় আকাফুজি নার্সারীতে এটি সফলভাবে চাষ করে আসছেন। এ বছর তিনি বাংলাদেশ স্ট্রবেরী এ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় চারা সরবরাহ করছেন। স্ট্রবেরী একটি অধিক লাভজনক ফসল হওয়ায় এবার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ কয়েদিদের স্ট্রবেরী চাষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রদশর্নী প্লট তৈরি করে স্ট্রবেরী চাষ করছে। গত বছর এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, খুলনা, কুষ্টিয়া, সিলেট, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় স্ট্রবেরী চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন বলে তিনি জানান।

অধ্যাপক মনজুর আরও বলেছেন, বাংলাদেশের সব এলাকার সব মাটিতেই স্ট্রবেরী চাষ সম্ভব বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে বেলে দো-আঁশ মাটি সর্বোত্তম। উজ্জ্বল সূর্যালোকিত খোলামেলা ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত জমি নির্বাচন করতে হবে। মাটির অম্লতা বা ক্ষারতা হতে হবে ৬·০ থেকে ৬·৫-এর মধ্যে। এজন্য স্ট্রবেরী চাষের আগে মাটির অম্লতা বা ক্ষারতা এবং পুষ্টিমাত্রা পরীক্ষা করে সে অনুযায়ী চাষ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। উঁচু মান ও ফলন পাওয়ার জন্য দিনের তাপমাত্রা ২০-২৬ক্ক সে· এবং রাতের তাপমাত্রা ১২-১৬ক্ক সে· হলে ভাল হয়। দিনে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা সূর্যালোকের উপস্থিতি স্ট্রবেরীর বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ভাল। দিনের দৈর্ঘø ১৪ ঘন্টার কম হলে স্ট্রবেরীর ফুল আসতে শুরু করে। তাপমাত্রা ৩৮ক্ক সে· এর বেশি হলে স্ট্রবেরীর গাছ মারা যায়।
স্ট্রবেরীর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি আরও বলেছেন, স্ট্রবেরী চাষের জন্য মাটি শোধন করে নিলে এর রোগবালাই অনেক কম হয়। এজন্য প্রতি ১ শতাংশ জমিতে ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। অম্লতা বা ক্ষারতা কম হলে মাটিতে প্রয়োজন মত ডলোমাইট ব্যবহার করতে হবে। মাটির বেড তৈরি করে স্ট্রবেরী চাষ করা ভাল। বেডের সাইজ হবে ১৫্‌ভক্ম৩্‌ভক্ম৪·৫ক্ষ্ম। বেড থেকে বেডের দূরত্ব হবে ৩০ ইঞ্চি। প্রতিটি বেডে ৪৫ থেকে ৫০ কেজি গোবর পচা সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর মাটি শোধন করতে হবে। মাটি শোধন শেষ হলে প্রতি বেডে ৭৫০ গ্রাম মিশ্র সার (৬% নাইট্রোজেন, ৮% ফসফেট ও ৪% পটাশ) ছড়িয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। এর পরে সমপরিমাণ একই সার ৪·৫ক্ষ্ম গভীরে বেডের মাঝ বরাবর লম্বালম্বিভাবে প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে লাইন ভরে দিতে হবে। নাইট্রোজেনের উৎস হিসাবে ইউরিয়ার পরিবর্তে অ্যামোনিয়াম সালফেট ব্যবহার করা ভাল। এরপর প্রতি বেডের মাঝ বরাবর দুই সারিতে চারাগুলো লাগিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ১২ ইঞ্চি এবং লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ৩০ ইঞ্চি। চারা বিকেলবেলা লাগানো উত্তম। চারা লাগানোর পরই বেড ঝরনার পানির মাধ্যমে হালকা করে ভিজিয়ে দিতে হবে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৬ হাজার চারা লাগানো যায়।
এক প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে যে ১ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরী চাষ করলে খরচ হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা এবং ছয় মাসে আয় হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা।

এক্ষেত্রে ১ বিঘা জমিতে প্রয়োজনীয় ৬ হাজার চারার মূল্য ধরা হয়েছে ১লাখ ২০হাজার টাকা এবং উৎপাদিত দেড় হাজার কেজি স্ট্রবেরীর প্রতি কেজির মূল্য ধরা হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ঢাকার বিভিন্ন সুপার মার্কেটগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে আসা স্ট্রবেরী পাওয়া যায় বর্তমানে যার প্রতি কেজির মূল্য ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা।
বাংলাদেশ স্ট্রবেরী এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক সরদার মোঃ সালাউদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই স্ট্রবেরী চাষ করা সম্ভব। স্ট্রবেরী অত্য- লাভজনক ফসল হওয়ায় স্ট্রবেরী চাষ করে শত শত কৃষক ও বেকার যুবক স্বাবলম্বী হতে পারে। এরজন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকরি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা। আবু সালেহ মোঃ ফাত্তাহ, রাজশাহী

টবে লেটুস চাষ



টবে লেটুস চাষ


শাকসবজি উৎপাদনের জন্য জমি বা বাগানই একমাত্র স্থান নয়। শহরেও শাকসবজি উৎপাদনের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। শাকসবজি উৎপাদনের জন্য একা-ই যদি একখণ্ড জমি না থাকে তাহলে বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, মাটির চাঁড়িতে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সারমাটি ভরে অনায়াসেই শাকসবজি চাষ করা যায়।
লেটুস পুষ্টিকর সালাদ জাতীয় সবজি, লেটুসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি আছে। কাজেই সুষম খাদ্যের জন্য এটা বেশ প্রয়োজনীয়।
টবের মাটিঃ গাছের বৃদ্ধি এবং সবজি জাতীয় ফলনের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে টবের মাটিতে যেন ফেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার একসাথে ভালভাবে মেশাতে হবে। এঁটেল মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণভাবে প্রতি টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫/৬ দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশানো যেতে পারে।
সময়ঃ ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্য- অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্য- বীজ থেকে চারা তৈরি করে টবে লাগাতে হবে।
বীজ বা চারাঃ গামলা টবে বীজ বুনলে ৩ থেকে ৪ দিনে চারা গজায়। চারার ৪/৫টি পাতা গজালে টবে লাগাতে হয়। লেটুসের জন্য খুব বড় টবের প্রয়োজন হয় না।
চারা রোপণঃ পর- বিকেলে চারা লাগাতে হয়। চারা রোপণের সময় চারার গোড়ার মাটি খুবই হালকাভাবে চেপে দিতে হয় যাতে চারার নরম শিকড় চাপে ছিঁড়ে না যায়। চারা লাগানোর পর ৩ থেকে ৪ দিন ঢাকনী দিয়ে চারাকে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে হবে এবং সকাল-বিকাল চারার গোড়ায় পানি দিতে হবে। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে এবং মাঝে মাঝে চারার গোড়ার মাটি হালকাভাবে আলগা করে দিতে হবে।
রোগবালাইঃ গোড়া পচা, আগা পোড়া দেখা দিলে গাছ তুলে ফেলতে হবে। জাব পোকা লেটুসের খুব ক্ষতি করে। কীটনাশক স্প্রে করতে হবে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী। কীটনাশক ছিঁটানোর ৭ দিনের মধ্যে লেটুস খাওয়া যাবে না।
পরিচর্যাঃ টবে চারা লাগানোর পরপরই অনেক সময় দেখা যায় চড়-ই শালিক, বাবুই ইত্যাদি ছোট ছোট পাখি চারার কচি পাতা এবং ডগা খেয়ে ফেলে, অনেক ক্ষেত্রে চারা উপড়ে ফেলে। সেক্ষেত্রে দু’চারটা ছিদ্রবিশিষ্ট পাতলা পলিথিন কাগজ বা লোহার নেট দিয়ে আলতোভাবে টবেটি ঢেকে রাখতে হবে। তাছাড়া শুকনো পাতা বা রোগাক্রা- অংশ ছেঁটে ফেলতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ চারা লাগনোর এক মাসের মধ্যেই লেটুস পাতা খাওয়ার উপযোগী হয় ।

রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০০৮

পেয়ারা বাগান বদলে দিয়েছে ভাগ্যের চাকা



পেয়ারা বাগান বদলে দিয়েছে ভাগ্যের চাকা



কাজী পেয়ারার বাগান করে পাল্টে গেছে ভোলা সদর উপজেলার আলিনগর ইউনিয়নের অক্ষর জ্ঞানহীন যুবক আব্দুল মালেকের ভাগ্যের চাকা। ২ একর জমিতে রোপণ করা ৬’শ পেয়ারা গাছের ফলন তার পরিবারের জন্য আর্শীবাদ বয়ে এনেছে। অধিক ফলনে তার সব খরচ উঠে এখন কেবল গুনছেন লাভের টাকা। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে পেয়ারা চাষি মালেক এখন দিন কাটাচ্ছেন পরম সুখে। তবে তার আশা সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও জমি নিয়ে পেয়ারা চাষ করার। তার এ সফলতায় এলাকার অন্য যুবকরাও খুশি, গর্বিত। পাশাপাশি বেকার যুবকরা উদ্যোগ নিচ্ছে মালেকের মত করে নিজেরাও বিভিন্ন ফলের বাগান করতে।
আজ থেকে ১০ বছর আগে মালেক মিয়া শুরু করেন পেয়ারার চাষ। তবে পেশা ছিল তার কাঠমিস্ত্রি। মানুষের আসবাবপত্র বানানোর পাশাপাশি তিনি রুহিতা গ্রামে ২ একর জমি ২০ বছরের লিজ নিয়ে নিজের পরিবারের মাথা গোজার ঠাঁই করে বাকি জমিতে করেন পেয়ারা বাগান। জমি লিজ ও পেয়ারা বাগান করতে তার খরচ হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি নিয়ে স্বরূপকাঠি থেকে সংগ্রহ করেন ৬’শ পেয়ারার চারা। কয়েকজন কাজের লোক নিয়ে পেয়ারার চারা জমিতে রোপণ করেন। কোন প্রশিক্ষণ না নিয়েও সুন্দর করে গড়ে তোলেন পেয়ারা বাগান। মালেক মিয়া জানান, প্রথম বছরেই তার পেয়ারা বাগান থেকে রোজগার আসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রতিদিন সকালে তিনি বাজারের বেপারীদের কাছে পেয়ার দিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। বিক্রি শেষে সন্ধ্যার পর টাকা নিয়ে আসেন। প্রতিদিন ৬ মণ করে পেয়ারা বিক্রি হয় তার। প্রতি কেজি পেয়ারা বিক্রি হয় ১৫ টাকা করে। বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে এখনও ২০ হাজার টাকার পেয়ারা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী বছর আরও বেশি জায়গা লিজ নিয়ে তিনি পেয়ারা বাগান করবেন। অবসর সময় করবেন কাঠ মিস্ত্রির কাজ।
চেষ্টা আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো অসম্ভব নয় তারই প্রমাণ রেখেছেন মালেক মিয়া। সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেলে বড় করে পেয়ারার বাগান করবেন বলে জানান তিনি। - হারুনুর রশীদ, ভোলা

টবে ধনেপাতার চাষ



টবে ধনেপাতার চাষ



এখন চলছে শীতকালীন নানা রকম সবজিসহ সালাদ-শস্য চাষের মৌসুম। শীতকালীন সালাদ-শস্যের মধ্যে ধনেপাতা অন্যতম। বিভিন্ন তরকারি, চটপটি সুস্বাদু করতে ধনেপাতার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই বহুল প্রচলিত। যারা শহরে থাকেন তাদের জন্য সুসংবাদ হল শীতকালীন সালাদ-শস্য ধনেপাতা চাষ করতে পারেন টবে করে বাসার ছাদে অথবা বারান্দায়।
ধনেপাতঃ ধনেপাতার খাদ্যমান অনেক বেশি। এতে ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ক্যারোটিন থাকে প্রচুর পরিমাণে। টবে ধনেপাতার চাষ করার সুবিধে হচ্ছে, মৌসুমে কয়েকবার খেয়ে আবার চাষ করা যায়।
চাষের সময়ঃ আশ্বিন থেকে পৌষ (সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর)
বীজ বপনঃ ধনের বীজ ২৪ ঘন্টা ন্যাকড়ায় জড়িয়ে ভিজিয়ে রাখলে তাড়াতাড়ি গজাবে। ধনের জন্য চওড়া মুখ বিশিষ্ট টব নির্বাচন করতে হবে। ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বুনে আবার মাটি দিয়ে ঢেকে সেচ দিতে হবে। মাটি ভেজা থাকলে জল দেওয়ার দরকার নেই।
পরবর্তী পরিচর্যাঃ মাটিতে রস না থাকলে ২/১ দিন পর পর পানি সেচ দিতে হবে। পাখি যাতে পাতা না খায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বীজ বোনার পর পিঁপড়া যাতে খেয়ে ফেলতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পিঁপড়া লাগলে পাইরিফস বা পাইরিবান অথবা সেভিন ডাস্ট ছিটিয়ে পিঁপড়া দমন করতে হবে।
পাতা তোলাঃ গাছ খুব ঘন হলে তা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। গাছ বেশি বড় হওয়ার আগে তুলে খেতে হবে।
- মাটি ও মানুষের ডেস্ক

গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন

গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন



গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন নিঃসন্দেহ দেশ ও জাতির জন্য উন্নয়নমূলক এক আধুনিক কার্যক্রম। কোন ঝামেলা ছাড়া অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসক দিয়ে কৃত্রিম প্রজননের কাজ করাতে হবে। প্রতি উপজেলাতে পশুসম্পদ উন্নয়নে সরকার একজন করে পশুচিকিৎসক নিয়োগ করেছেন। গরিব কৃষকসহ ওই এলাকার জনসাধরণ নানাবিধ পশু সমস্যার সমাধান পেয়ে থাকেন তাদের কাছ থেকে। এছাড়া বাংলাদেশ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকেও পশুপালন ও তার রোগবালাইয়ের চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এক কথায় কৃত্রিম প্রজননে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য উন্নত ষাঁড়ের শুক্রাণু ব্যবহার ও সুস্থ গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করতে পারলে বছরে বাচ্চা উৎপাদন দু’লক্ষেরও বেশি পাওয়া সম্ভব। বাকৃবি এ ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য পেয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকহারে এ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলে শিগগিরই ডেইরি শিল্প কাঙ্খিত স্বপ্নে পৌঁছাতে পারবে।
সাধারণত ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট কয়েকটি পদ্ধতির মাধ্যমে গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করাকে কৃত্রিম প্রজনন বলে। একটি ষাঁড়ের বীজ থেকে প্রতি বছর ৬০ থেকে ৮০টি গাভীর প্রজনন করানো সম্ভব। কিন্তু কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ গাভী প্রজনন করানো যায়। স্বাভাবিকভাবে একটি ষাঁড়ের সর্বমোট ৭০০ থেকে ৯০০টি বাছুর প্রসবে ভূমিকা রাখতে পারে। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে অনেকাংশে সংক্রামক ব্যাধি রোধ করা যায় এবং গাভী ষাঁড়ের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয় না।
আমাদের দেশে ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন বা সংস্থাপনে অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় গাভীর উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। কৃত্রিম প্রজনন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত না হলে ভালর চেয়ে খারাপই হওয়ার সম্ভবনাই বেশি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব, অসাবধানতা, জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি-বিচ্যুতি এর জন্য দায়ী।
বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে ষাঁড়ের অভাব থাকায় কৃত্রিম প্রজনন জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু কৃত্রিম প্রজননে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পদ্ধতিগত ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অসাবধানতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে নানা সমস্যার সন্মুখিন হতে হয়। কৃত্রিম প্রজননের ভাল দিক যেমন আছে তেমন এর খারাপ দিকও কিছু আছে। বা-বে দেখা যায় স্বাভাবিক প্রজনন অপেক্ষা কৃত্রিম প্রজননে গর্ভ সঞ্চারের হার বেশ কম, বার বার গর্ভধারণ করাতে খরচও হয় বেশি। রোগাক্রা- ষাঁড়ের বীজ গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করা হলে পরবর্তীতে দেখা যায় নানাবিধ সমস্যা। যার প্রভাব পরবর্তী বংশবি-ারের উপর বর্তায়। এ ছাড়া অনেক গাভী বার বার গরম হয়ে থাকে। এক নিরীক্ষায় দেখা গেছে একটি গাভী গর্ভ সঞ্চারের জন্য গড়ে ১৩ বার পর্য- প্রজননের প্রয়োজন হতে পারে।
রাসায়নিক দ্রব্য, ধূলিকণা, মাত্রারিক্ত তাপমাত্রার সংস্পর্শে খুব সহজেই ষাঁড়ের বীজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার যে সম- জিনিস পত্রের সংস্পর্শে বীজ আসে তাতে রাসায়নিক পদার্থ থাকলেও বীজ নষ্ট হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বীজ তরল হলে কিংবা প্রজনন অঙ্গের বাইরে স্থাপন করা হলেও গাভী গর্ভধারণ করতে পারে না। ডিম্বাণু নির্গমনের আগে অথবা নির্গমনের পরে বীজ স্থাপন করলে গাভীর উর্বরতা হ্রাস পায়। তাই প্রথমবার বীজ স্থাপনের পর অ-ত ৬ ঘন্টা পর দ্বিতীয়বার বীজ স্থাপন করলে সুফল পাওয়া যায় বেশি। বীজ স্থাপনের সময় প্রজনন অঙ্গ জীবাণু দ্বারা আক্রা- হলে গাভীর নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। যেমন ব্রুসেলেসিস, ভিব্রিওসিস, ট্রাইকোমনোসিসসহ বিভিন্ন বংশগত রোগের সন্মুখিন হতে হয়। এ জন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে পশুচিকিৎকের পরামর্শ নেওয়া অত্য- জরুরি।
সরকার প্রশিক্ষণের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে যা পশুসম্পদ উন্নয়নে সহায়তা করবে।
গাভী গর্ভবতী কিনা, নিয়মিত গরম হয় কিনা তা নির্ণয় করা, উন্নত ও উর্বর ষাঁড় নির্বাচন করা, গাভীর গর্ভধারনের ক্ষমতা নির্ণয় করা, গর্ভধারনের হার বৃদ্ধি করা, গাভীর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং ভেটেরিনারিয়ানের সাহায্যে গাভীর নিয়মিত পরিচর্যা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তার দিয়ে করতে হবে।
কৃত্রিম প্রজননের জন্য ইতোমধ্যে খামারিদের সংগঠিত করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলাতে। খামারিদের উৎপাদনমুখী সেবা ও প্রশিক্ষণ চলছে। অল্পদিনের মধ্যেই গরুর ব্যাপকহারে কৃত্রিম প্রজনন শুরু করা হবে বলে আশা করছে তারা। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে দুটি সমিতি ইতোমধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে কৃত্রিম প্রজননের সফলতা বাংলাদেশের প্রতি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে এবং দুধ উৎপাদনসহ গরুর সংখ্যা অধিকহারে বৃদ্ধি পাবে।
- মোঃ নূর আলী
পশু চিকিৎসক, ঝিনাইদহ

বোয়াল মাছের কৃত্রিম প্রজনন

বোয়াল মাছের কৃত্রিম প্রজনন




ব্যক্তিপর্যায়ে হ্যাচারি শিল্পে উদ্‌ভাবনী সাফল্য
বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির মাছ বোয়াল। প্রাকৃতিক অভয়াশ্রম নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে এই মাছটিকে আগের মত আর পাওয়া যায় না। অথচ সামান্য একটু উদ্যোগ নিলেই এই বোয়াল মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যায় অনায়াসে। বোয়াল একটি রাক্ষুসে স্বভাবের মাছ। কাজেই এ মাছটিকে প্রজননের আওতায় এনে উৎপাদন করতে কয়েকটি বিশেষ দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বোয়াল মাছ প্রজননের ইতিকথাঃ ১৯৯৮ সালে বন্যার সময় প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে প্রায় ২০০টি আঙ্গুলের মত ছোট বোয়াল মাছের পোনা সংগ্রহ করেছিলাম কৃত্রিম প্রজননের গবেষণার জন্যে। পরবর্তীতে এই মাছগুলোকে কার্প জাতীয় ব্রুডমাছের সাথে লালন-পালন করি। লালন-পালন করতে গিয়ে একটা অভিজ্ঞতা হয় যে, বোয়াল মাছ ছোট থাকার কারণে এবং কার্প জাতীয় মাছ বড় থাকার কারণে বোয়াল মাছ কোন মাছকেই ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারেনি। এভাবে দু’বছর পর বোয়াল মাছের পেটে ডিম আসে। এরপর ২ জোড়া পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে প্রজননের জন্য নির্বাচন করি। প্রথমে সেখান থেকে ২টি স্ত্রী মাছকে ২টি ভিন্ন মাত্রায় ডোজ দেই। ২টি মাত্রাতেই বোয়াল মাছ ডিম দেয় এবং পেটে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ডিম বের করি। ২টি মাছের ডিমকে আলাদাভাবে ২টি ট্রেতে বিছিয়ে দিই এবং একই সাথে কিছু ডিমকে বোতল জারে রেখে দেই। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বোয়াল মাছের ডিম খুবই আঁঠালো। যে কারণে বোতল জারে ডিম দিলে তা জারের গায়ে আটকে থাকে। লবণ-জলে ধুলে আঁঠালো ভাব দূর হয় এবং জারে দেওয়া যায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটার হার নেই বললেই চলে। এ কারণে এ পদ্ধতি বাতিল করে পরবর্তীতে ট্রেতেই ডিম ফুটাই। আগেই বলেছি বোয়াল মাছের ডিমগুলোকে ২টি টে্‌্রতে বিছিয়ে দিয়ে ২/৩ ইঞ্চি পানির উচ্চতাসম্পন্ন পাইপ ছিদ্র করে তা দিয়ে কৃত্রিম ঝর্ণার ব্যবস্থা করি। ২টি ট্রের মধ্যে একটিতে বাচ্চা ফুটে ভাল অবস্থায় থাকে আর অন্যটিতে বাচ্চা ফুটে মারা যায়। যে ডোজে ভাল বাচ্চা পাওয়া গেছে সেটাকে আদর্শ মাত্রা হিসেবে ধরে পরবর্তীতে সে ডোজই নির্ধারণ করি। এভাবে ২ বছরে আরও গবেষণা করি বোয়াল মাছের কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে। পেটে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ডিম বের করে তারপর চেষ্টা করি হরমোন প্রয়োগের পর প্রাকৃতিকভাবে ডিম সংগ্রহ করা যায় কি না। এবারও আমি সফলতা লাভ করি। অর্থাৎ হরমোন ইঞ্জেকশন দিয়ে সার্কুলার ট্যাংকে ছাড়ার পর প্রাকৃতিকভাবে নিজেরাই প্রজনন করে। এভাবে নিবিড় গবেষণা করে ২০০৩ সালে কারও কোন সহযোগিতা ছাড়াই আমাদের দেশে আমরা ‘ব্রহ্মপুত্র ফিস সীড কমপ্লেক্স (হ্যাচারি)’ থেকে প্রথম বোয়াল মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা লাভ করি।
বোয়ালের প্রজনন মৌসুমঃ মধ্য এপ্রিল থেকে আগষ্ট মাস পর্য- বোয়াল মাছ ডিম দিয়ে থাকে। প্রজননের সময় খুব সহজেই পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে শনাক্ত করা যায়।
প্রজননের জন্য উপযোগী স্ত্রী ও পুরুষ মাছ বাছাইঃ আগেই উল্লেখ করেছি, প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী মাছের পেট ভর্তি ডিম থাকে আর পুরুষ মাছের পেট সাধারণ মাছের মত থাকে। তাছাড়া পুরুষ মাছের পেটে চাপ দিলে সাদা মিল্ট বেরিয়ে আসে। এ থেকে সহজেই বোয়ালের পুরুষ ও স্ত্রী মাছ শনাক্ত করা যায়।
হরমোন ইঞ্জেকশনের দ্রবণ তৈরি এবং ইঞ্জেকশন দেওয়ার পদ্ধতিঃ বোয়াল মাছকে পি·জি· (পিটইটারী গ্ল্যান্ট) হরমোন দিয়ে ইঞ্জেকশন করলেই ডিম দিয়ে থাকে। প্রথম ডোজের সময় শুধুমাত্র স্ত্রী মাছকে ইঞ্জেকশন দিতে হয়। ডোজের মাত্রা ২ মিঃ গ্রাঃ কেজি। ৬ ঘন্টা পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয় ৪ মিঃ গ্রাঃ/ কেজি। ২টি পদ্ধতিতে বোয়ালের ডিম সংগ্রহ করা যায়।
প্রথম পদ্ধতি (চাপ প্রয়োগ পদ্ধতি)ঃ মাছকে পি·জি হরমোন ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে আলাদা আলাদা হাউজে রাখতে হবে। দ্বিতীয় ডোজের ৬ ঘন্টা পর সাধারণত বোয়াল মাছ ডিম দিয়ে থাকে। মাছের ডিম পাড়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যখনই ২/১টি ডিম বের হতে দেখা যাবে তখনই মাছগুলোকে একে একে হাউজ থেকে তুলে আনতে হবে। এবার স্ত্রী মাছের পেটে আে- করে চাপ দিলেই ডিম বের হতে থাকবে। স্ত্রী মাছের ডিম বের করার পর তাৎক্ষণিকভাবে পুরুষ মাছের পেটে চাপ দিয়ে মিল্ট বের করে ডিমের উপর পাখির পালক দিয়ে ভালভাবে মিশাতে হবে। এরপর ডিমগুলোকে ২/৩ বার বিশুদ্ধ পানিতে পরিষ্কার করে ৩/৪ ইঞ্চি উচ্চতার পানির হাউজে রাখতে হবে। চিকন প্লাষ্টিক পাইপকে ছিদ্র করে ঝর্ণার ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে ২০/২২ ঘন্টার মধ্যেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি (প্রাকৃতিক পদ্ধতি)ঃ প্রথম পদ্ধতিতেই মাছকে হরমোন ইঞ্জেকশন দিয়ে পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে একসাথে একটি বড় হাউজে ছেড়ে দিতে হবে। তাতে দ্বিতীয় ডোজের ৬ ঘণ্টার মধ্যেই প্রাকৃতিকভাবে এরা ডিম পারবে। ডিম পারা শেষ হলে ব্রুডমাছগুলোকে সর্তকতার সাথে সরিয়ে নিতে হবে। তারপর হাউজের পানি কমিয়ে ৩/৪ ইঞ্চি রেখে ছিদ্রযুক্ত পাইপ দিয়ে পানির ঝর্ণা দিতে হবে। এখানেও ২০/২২ ঘন্টার মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হবে।
পোনা লালন-পালন পদ্ধতিঃ বোয়ালের পোনা খুবই রাক্ষুসে স্বভাবের। ডিম থেকে ফুটার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই একটি আরেকটিকে খেতে শুরু করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, অন্যান্য মাছের রেনু পোনা ডিমের কুসুম বা ক্ষুদ্র আকৃতির প্ল্যাংকটন খেলেও বোয়ালের পোনা ডিমের কুসুম বা কোন ধরনের প্ল্যাংকটন খায় না। সে ক্ষেত্রে তাদেরকে জীবিত অবস্থায় মাছের রেনু বা পোনাকে খেতে দিতে হয়। এভাবে ৮/১০ দিনেই ২ ইঞ্চি সাইজের পোনায় পরিণত হয়।
বোয়াল মাছের চাষ পদ্ধতিঃ গবেষণায় দেখা গেছে যে, বোয়াল মাছ এককভাবে চাষ করা যায় না। একটা আরেকটাকে খেতে খেতে শেষ পর্য- আর বাকি থাকে না। তা ছাড়া কৃত্রিম খাবার না খাওয়ায় মাছগুলো খুব একটা বড়ও হয় না। তাই এদেরকে বিভিন্ন মাছের সাথে মিশ্র চাষ করে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। মজুদ ঘনত্ব মিশ্রচাষে প্রতি ৫ শতাংশে ১টি মাছ। মাছ ছাড়ার সময় একটা দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে যে, বোয়ালের পোনা যেন কোন অবস্থাতেই পুকুরের অন্যান্য মাছের আকারের সমান না হয়। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য মাছের ওজন যখন ১৫০/২০০ গ্রাম ওজন হবে সেখানে ২ ইঞ্চি সাইজের বোয়ালের পোনা ছাড়তে হবে। আর তা না হলে বোয়াল দ্রুত বড় হয়ে অন্যান্য মাছ খেয়ে ফেলতে পারে। বিলুপ্ত প্রায় এই বোয়াল মাছের চাষ নিয়ে আমাদের গবেষণা এখনও চলছে। আশার কথা ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই বোয়াল নিয়ে এ বছর কাজ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে থেকে ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথে যোগাযোগও করা হয়েছে। যদিও অনেক আগেই আমি বোয়াল মাছের পোনা উৎপাদন করেছি এবং চাষ কৌশল এগিয়ে নিয়ে গেছি। তবু তাদের এই চেষ্টা যদি এর চাইতে আরও লাগসই প্রযুক্তি হয় তাহলে জাতি নিঃসন্দেহে উপকৃত হবে।
- এ· কে· এম· নূরুল হক ব্রহ্মপুত্র সিড ফিস এণ্ড হ্যাচারি কমপ্লেক্স শম্ভুগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জের আলু চাষিদের কথা


মুন্সীগঞ্জের আলু চাষিদের কথা


- শাইখ সিরাজ
গত মৌসুমে বোরো ধানের কাঙ্ক্ষিত ফলন লাভের খবরের পাশাপাশি কৃষির আরেক বিস্ময় ছিল আলুর ব্যাপক উৎপাদন। উৎপাদন হয়েছে ৮০ লাখ টন। আগের বছরের চেয়ে উৎপাদন বেশি হয় ২৫ লাখ টনেরও বেশি। এত বেশি আলু অতীতে কখনোই উৎপাদিত হয়নি। আলুর বাম্পার ফলন দেশবাসীকে যেভাবে উচ্ছ্বসিত করেছে, একইভাবে সংরক্ষণ সমস্যার কারণে টন কে টন আলু পচে নষ্ট হওয়ার ঘটনা শুধু কৃষককেই হতাশ করেনি, ব্যথিত করেছে দেশবাসীকেও। কোল্ড-স্টোরেজে নষ্ট হওয়া অতিরিক্ত আলু অপসারণ এবং কৃষক ও কোল্ড-স্টোর মালিকদের ক্ষতির মধ্য দিয়ে সে অধ্যায়ের শেষ নামলেও আলুই এখন নতুন করে দুশ্চি-ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনের ক্ষেত্রে সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকলে কৃষককে যে কতটা অসহায় অবস্থা বরণ করতে হয়, এবার আলু রোপণ মৌসুম শুরুর ঠিক আগেই তা দেখা যাচ্ছে। মুন্সিগঞ্জের আলু চাষ অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় এবার কৃষকদের হিসাব নিকাশ একেবারেই পাল্টে গেছে। গতবারের বেশি আবাদ আর বেশি ফলন যেভাবে কৃষকের বুক ভরিয়ে দিয়েছিল এবার সামনে ঠিক ততটাই অনিশ্চয়তা। বেশিরভাগ কৃষকই সিদ্ধা- নিয়ে ফেলছেন এবার কমিয়ে আনবেন আলু চাষ। সব রকম সারের দ্বিগুণ তিনগুণ মূল্য বৃদ্ধি এবং আলুর মূল্য ক্রমেই কমতে থাকার কারণে বাধ্য হয়েই কৃষককে নিতে হচ্ছে এই সিদ্ধা-। শুধু তা-ই নয়, কয়েকজন কৃষক জানালেন তারা এবার ঝুঁকবেন তামাক চাষে। উল্লেখ্য, মুন্সিগঞ্জ এলাকায় অনেক আগে থেকেই অল্প বি-র তামাকের আবাদ হত। বছর বছর আলুর ভাল ফলন এবং মোটামুটি মূল্য পাওয়ায় কৃষক নিজে থেকেই তামাক আবাদে খুব বেশি উৎসাহিত ছিল না। কিন্তু এবার আলুর ভাল ফলন পাওয়ার পর দুই দফায় কৃষক হোচট খেলো। অর্থাৎ কোল্ড-স্টোরেজে স্থান সংকটে সমুহ ক্ষতির শিকার হওয়ার পর যতটুকু আলু বাঁচানো গেছে তার মূল্য উৎপাদন খরচের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন মণ প্রতি চার হাজার টাকা মূল্য পাওয়ার স্বপ্নে কৃষক বেছে নিতে যাচ্ছে তামাক উৎপাদনের পথ। কারণ কৃষক জানে, তামাক চাষ করতে গেলে তাকে সার সংকটে পড়তে হবে না। যার প্রভাব পড়তে যাচ্ছে আগামী মৌসুমে।
সারের দাম যে গতিতে বেড়েছে, সে গতিতে বাড়েনি আলুর দাম। শহর নগরে আলুর নিম্নমূল্য বোঝা না গেলেও উৎপাদন এলাকার কৃষকরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন তাদের প্রধান কৃষিপণ্যের নিম্নমূল্যই সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। কোল্ড-স্টোরেজগুলোতে কৃষকের শত শত মণ আলু যেখানে আর্থিক লাভের স্বপ্ন দেখাবে, সেখানে দেখাচ্ছে দারুণ দুঃস্বপ্ন। সেদিন নূর কোল্ড স্টোরেজে বেশ কিছু সংখ্যক কৃষকের সঙ্গে দেখা হল। ব্যবসায়ীরাও ছিলেন সেখানে। ছিলেন কোল্ড-স্টোরের লোকজনও। এই পর্যায়ে এসে আলু নিয়ে সবার হতাশা এখন যেন সমান। একজন ব্যবসায়ী বললেন, ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আলুর ব্যবসা করতে এসে এবার সর্বশা- হয়ে পড়েছেন তিনি। একজন কৃষক বললেন, উত্তরাঞ্চলে আলুর উৎপাদন এবার বেশি হওয়ায় মুন্সিগঞ্জের কৃষকরা এই সমস্যায় পড়েছেন। অন্যান্য বছর এ মৌসুমে একেকটি কোল্ড-স্টোরেজের সামনে নৌকা ও অন্যান্য যানবাহনে আলু সরবরাহের ব্য-তা থাকলেও এবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। একেবারেই স্থবির অবস্থা। চাষির সঙ্গে সঙ্গেই পদে পদে ব্যবসায়ীদেরকে ক্ষতির হিসাব করতে হচ্ছে। একজন কৃষক বললেন, সরকার জনগণকে আলু খাওয়ার ব্যাপারে যেভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে ঠিক সেই মাফিক আলুর স্থানীয় বিপণন ও রফতানির ব্যাপারে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
খোদ কৃষি বিভাগ বলছে, এবার জেলায় ২ থেকে ৩ হাজার হেক্টর কম জমিতে আলু উৎপাদিত হবে। আলু আবাদি এলাকা হ্রাসের হার আরও বাড়তে পারে। কৃষি বিভাগ যদিও তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তারপরও লাভের আশায় কৃষক যে এদিকে ঝুঁকবে না এর নিশ্চয়তা নেই। কারণ, এভাবেই নানা কারণ সামনে নিয়েই দেশের একেকটি এলাকায় ঢুকে পড়ে তামাক চাষ।
মুন্সিগঞ্জে নতুন করে তামাক চাষের তৎপরতায় কৃষিতে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে - এমন আশংকার কথা জানালেন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড· মোঃ আজিজুল হক। তিনি বললেন, একটি জমিতে একবার তামাক চাষ করা হলে শুধু সেই জমিই ক্ষতিগ্র- হবে তা নয়, তার আশেপাশের অন্যান্য ফসলও ক্ষতিগ্র- হতে থাকবে। এই কারণেই যেভাবেই হোক এই বিপর্যয়ের হাত থেকে ওই এলাকার কৃষিকে বাঁচাতে হবে।
খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে বর্তমান সময়টি একটি সন্ধিক্ষণ বলা যায়। যখন এক বিন্দু খাদ্যকণার মূল্য সম্পর্কেও মানুষ সচেতন হতে শুরু করেছে - তখন কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং আবাদ স্বাভাবিক রাখার বিষয়টি অত্য- গুরুত্বপূর্ণ। এখনও সময় আছে, রোপণ মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই কৃষকদের হতাশা কাটিয়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপকরণের মূল্য কৃষকদের ক্রয়সীমার মধ্যে আনা, কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়াসহ সময়োপযোগী নানামুখি কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, খাদ্যশস্যের আবাদি জায়গা যেন খাদ্যদ্রব্য নয় এমন কৃষিপণ্যের দখলে না চলে যায়। এটি সময়েরই চ্যালেঞ্জ।